আশুরা: করণীয় ও বর্জনীয়

হিজরী বছরের প্রথম মাস মহররম। এর দশম দিনকেই আরবীতে عاشوراء বা আশুরা বলা হয়। এ দিনটি ইসলাম ও ইসলামপূর্ব বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হওয়ায় বছরের অন্য সব দিন থেকে এটি একটু আলাদা এবং তাৎপর্যপূর্ণ। নবীজী স. সে জন্য মুসলমানদেরকে এ দিনে রোজা রাখতে বলেছেন।

কিন্তু মদীনায় গিয়ে যখন তিনি দেখলেন যে, ইহুদীরাও এ দিনে রোজা রাখে, তখন তিনি মুসলমানদেরকে আশুরার আগের দিন বা পরের দিন মিলিয়ে রোজা রাখতে বললেন। (মুসলিম: ২৭২২)

এ হাদীসের ভিত্তিতে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ র. বলেন, “আশুরার রোযা তিন পর্যায়ের।

১. সর্বোত্তম: আশুরার আগের ও পরের দিন মিলিয়ে মোট তিন দিন রোযা রাখা।
২. উত্তম: আশুরার আগের বা পরের দিন মিলিয়ে মোট দুই দিন রোযা রাখা।
৩. বৈধ: শুধু আশুরার দিন রোযা রাখা।”

কিন্তু তৃতীয়টিতে ইহুদীদের সাথে ইবাদতের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়, যা নবীজী স. অপছন্দ করেছেন, তাই এটিকে অনেকেই মাকরূহ বলেছেন।

সারকথা, আশুরার রোযা রাখলে হয় আগের দিন ৯ই মহররম, নয়তো পরের দিন ১১ই মহররম মিলিয়ে রোযা রাখবে।

তবে এ রোযাটি মুস্তাহাব পর্যায়ের। করলে সওয়াব হবে, না করলে কোনো গুনাহ হবে না। অতএব, এটিকে ফরযের মতো জরুরী মনে করা ঠিক নয়।

সর্বশেষ যে বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন: আশুরার দিন একটি দল কারবালার বিভৎসতার কথা স্মরণ করে কষ্টে নিজেদেরকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলে। আবার আরেকদল বিভিন্ন জাল হাদীস বানিয়ে এ দিনটিকে উৎসবের আমেজ দেয়। যেমন, তারা বলে যে, নবী স. বলেছেন, ১. আশুরার দিন যে নিজ পরিবারকে ভালো খাবার খাওয়াবে, সারা জীবন সে ভালো খাবার খেতে পারবে; ২. আশুরার দিন যে গোসল করে, সে বছরে তার আর কোনো রোগ হয় না; ইত্যাদি বিভিন্ন জাল হাদীস বর্ণনা করে এ দিনটিকে তারা উৎসবের আমেজে কাটায়; গোসল করে, নতুন কাপড় পড়ে ও ভালো খেয়ে এ দিনটিকে ঈদের রূপ দান করে তারা।

আসলে উভয়টিই বাড়াবাড়ি, বরং, বিদ’আত। আর প্রতিটি বিদ’আতই নিশ্চিত ভ্রষ্টতা। অতএব এসব থেকে বিরত থাকা উচিৎ এবং সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিৎ। আল্লাহ আমাদের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি ছেড়ে প্রতিটি ইবাদতকে তিনি যেভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন ঠিক সেভাবে আদায় করার তাওফীক দিন। আমীন।