প্রশ্ন : ডোমেইন পার্কিং বাণিজ্য কি বৈধ? পার্কড ডোমেইনের জন্য উচ্চমূল্য চাওয়ার বিধান কী?

প্রশ্ন : আস সালামু আলাইকুম, ভাইয়া, নিচের বিষয়টি শরিয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদন যোগ্য কিনা জানালে উপকৃত হতাম।

ইন্টারনেট ঠিকানা নিয়ে বাণিজ্য

ডোমেইন পার্কিং নিয়ে কিছুদিন আগে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন আমাদের এক পাঠক৷ বাংলায় ইন্টারনেট ঠিকানা চালুর আগেই কে নাকি বাংলাদেশ.com নামক বাংলা ভাষার ডোমেইনটি কিনে ফেলেছে৷ এখন আবার বিক্রির জন্য পার্ক করে রেখেছে সেই ঠিকানা৷

আচ্ছা ডোমেইন পার্কিং কী? এটা কেনই বা করে? কীভাবেই বা করে? এরকম প্রশ্ন যে কারো মনেই আসতে পারে৷ উইকিপিডিয়া’র ভাষ্য অনুযায়ী, ডোমেইন পার্কিং হচ্ছে নির্দিষ্ট নামের কিছু ইন্টারনেট ঠিকানা কিনে রাখা, কিন্তু ব্যবহার না করা৷ এটির কয়েকটি দিক আছে, অনেকে নিজের প্রয়োজনে কিছু ইন্টারনেট ঠিকানা কিনে রাখেন যাতে ভবিষ্যতে সেটা কাজে লাগাতে পারেন৷ কিংবা অন্য কেউ যাতে সেসব ঠিকানার দখল নিতে না পারে৷ অনেকে আবার ইন্টারনেট ঠিকানা কিনে সেগুলোকে চড়া দামে বিক্রির জন্য জমা করে রাখেন৷ এই যেমন আমাদের পাঠকের দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ.com৷ এই ডোমেইন নেমটি বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজন৷ অথচ অন্য কেউ এটাকে কিনে রেখে দিয়েছেন, বিক্রির জন্য৷

ডোমেইন পার্কিং বিষয়টি আরো সহজে বোঝার জন্য আমরা কথা বলি জনপ্রিয় ব্লগসাইট টেকটিউনস ডটকম ডটবিডি’র কর্ণধার মোহাম্মদ শাহজালাল এর সঙ্গে৷ তিনি বলেন, এটি একটি বিশেষ ব্যবস্থা যেখানে, যেকেউ যেকোন ডোমেইন কিনে জমা রাখতে পারে৷

শাহজালাল নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, তাঁর নিজের সাইটটির ডটকম সংস্করণও নাকি একজন ব্যক্তিগত দখলে রেখেছে৷ এখন সেটি বিক্রি করতে চাইছে চড়া দামে৷ মাত্র আট বা দশ ডলারে যে ডোমেইন কেনা যায়, পার্ক করে সেটির দাম হাঁকা হচ্ছে ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার৷
ইইউ ডোমেইন (ফাইল ছবি)

এছাড়া ডোমেইন পার্ক করে রেখেও পয়সা আয় সম্ভব৷ কারণ ডোমেইন পার্কিং সেবাদাতারা জমা রাখা ইন্টারনেট ঠিকানাগুলোয় বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে৷ এই বিজ্ঞাপন থেকে অর্জিত অর্থের একটি অংশ পান মালিকরা৷ অনেক বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও এভাবে পয়সা আয় করছেন৷

ডোমেইন পার্কিং এর এই চর্চা আইনগতভাবে বন্ধের সুযোগ নেই বলে জানান শাহজালাল৷ কেননা, ইন্টারনেটে যেকেউ যেকোন ডোমেইন কিনতে পারে৷ তাছাড়া অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো ডোমেইন পার্কিংকে উৎসাহিত করে৷ এই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসায়ী জানালেন, সিডো ডটকম নামক একটি সাইট আছে যারা ডোমেইন পার্কিংয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে৷

উল্লেখ্য, বাংলায় ডোমেইন নেম বা ইন্টারনেট ঠিকানা চালু হওয়ার কথা ছিল এই মার্চ থেকে৷ ইতিমধ্যে ডট বাংলা ডোমেইন এর অনুমোদন দিয়েছে ওয়েব ঠিকানা বরাদ্দকারী প্রতিষ্ঠান আই.সি.এ.এন.এন৷ বাংলা বর্ণমালায় ইন্টারনেট ঠিকানা লেখা সম্ভব হবে এই অনুমোদনের ফলে৷ তবে, এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি কার্যকর হতে আরো সময় লাগবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
————————————
লেখাটির সূত্র http://www.dw-world.de/dw/article/0,,14909535,00.html?maca=ben-standard_feed-ben-615-xml

উত্তর : ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনার প্রশ্ন হলো মোটামুটি দুটো :

১. ডোমেইন পার্কিং কি বৈধ?

২. পার্কড ডোমেই চড়া দামে বিক্রয় করার বিধান কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর :

আপাত দৃষ্টিতে ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো নিষিদ্ধ বিষয় না থাকায় ডোমেইন পার্কিংয়ের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে না।

তবে চড়া দামে পার্কড ডোমেইন বিক্রয় করা, বরং যে কোনো বস্তু চড়া দামে বিক্রয় করা (গাবনে ফাহেশ) ইসলাম পছন্দ করে না। এতে ক্রয়-বিক্রয়ের স্বাভাবিক ধারা ব্যাহত হয়। ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তবে কোনো মূ্ল্যকে কখন ‘চড়া’ বলে অভিহিত করা হবে, সে প্রসঙ্গে ফকীহগণ বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা যে মূল্যকে স্বাভাবিক ভাবে ‘চড়া’ মনে করে, সেটাই ‘চড়া’ মূল্য হবে।

ডোমেইনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে মূল্য কম-বেশি হয়। সার্চ ইঞ্জিনে ডোমেইনটির শব্দ খোঁজার হার, শব্দের বাণিজ্যিক মূল্য, এর প্রসিদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে এর মূল্য বাড়তে পারে। বিভিন্ন কিছু মিলিয়ে ডোমেইনের মূল্যমান নির্ধারণেরও নানা সার্ভিস বর্তমানে ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তবে অকারণে ডোমেইনের উচ্চমূল্য হাঁকা ইসলাম অপছন্দ করে বলেই মনে করি। বাংলাদেশ.com এর জন্য ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার চাওয়াটা এমনই কিছু।

তবে নোট করার বিষয় হলো, উচ্চমূল্য হাঁকার পরও ক্রয় বিক্রয় সংগঠিত হলে তা সহীহ ক্রয়-বিক্রয় বলেই ধর্তব্য হবে, যদি তাতে অন্য কোনো সমস্যা না থাকে।

ধন্যবাদ।