ইসলাম নিয়ে সন্দেহপোষণকারীর কিছু প্রশ্নের জবাব

ইনবক্স থেকে: প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম স্যার। আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন আশা করি। আমার পরিবারের এক পরিচিত ছোট ভাই আমার কাছে মাঝে মাঝে পড়ত। সে আমাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। যেটা আমার সঠিক জানা নেই।

১. হযরত মুহাম্মদ স: কি কারণে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালিকাকে বিয়ে করেছিলেন?

২। আমি না দেখে কিভাবে বিলিভ করব যে হাদিস সব পরিপূর্ণ সত্য?

৩. আমি দুনিয়াতে একজন অথবা অনেক কে দেখে অনুপ্রাণিত হই যে, আমি যদি কষ্ট করে পড়াশুনা করি ২০ বছর তাহলে পরবর্তী জীবন সুখকর হতে পারে, কিন্তু আখিরাতের জন্য এরকম উদাহরণ কিভাবে পাব আর অনুপ্রাণিত হব?

৪. একজন অন্য ধর্মের মানুষের কি দোষ ছিল যে, সে অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করল?

৫. আমি কোন কিছু প্রমাণ না পেয়ে কিভাবে বিশ্বাস করব এই হুজুর অথবা এই মানুষটা ইসলাম সম্বন্ধে সঠিক তথ্য দিচ্ছে?

৬.অনেক হুকুম অনেক নবীর ক্ষেত্রে জায়েজ থাকলেও আমাদের নরমাল মানুষদের ব্যাপারে এক্সেপশনাল হয়ে যায় কেন?

৭. আমরা তো নবীজীকে দেখিনি তাহলে কিভাবে আমাদের মধ্যে ইমান আসবে বা কিভাবে নবীজীর কথা বিশ্বাস করব যে এটাই নবীজী বলে গেছেন? সোর্স বিশ্বাস করব কিভাবে?

মূলত মসজিদের পরিবেশ থেকে দূরে থেকে তার এই অবস্থা হয়েছে। এখন তার অবস্থার উন্নতির জন্য কি করা যেতে পারে এবং তার বিশ্বাস কিভাবে পরিপূর্ণ আনানো যায়?

=====

ওয়ালাইকুম আসসালাম। দু:খিত এই পুরো মাসটা প্রচণ্ড ব্যস্ততা ছিল। সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছি:

১. হযরত মুহাম্মদ স: কি কারণে একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালিকাকে বিয়ে করেছিলেন?
উ: প্রথমত, তিনি নাবালিকাকে ‘বিয়ে’ করেছেন, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক করেন নি। দ্বিতীয়ত, তিনি তাঁর স্ত্রীকে ঘরে তুলে নিয়েছেন বালেগা হওয়ার পরই। তৃতীয়ত, ইসলামে যে কোনো বয়সেই বিবাহ বৈধ, প্রাপ্ত বয়স্করা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আর নাবালকদের ক্ষেত্রে অভিভাবক সিদ্ধান্ত নিবে এবং তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিবাহ ঠিক রাখা না রাখার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা থাকবে, তারা চাইলে বিবাহ ভাঙতেও পারে।

২। আমি না দেখে কিভাবে বিলিভ করব যে হাদিস সব পরিপূর্ণ সত্য?
উ: যেভাবে আপনি না দেখে বিভিন্ন তথ্য বিশ্বাস করে থাকেন। জি, তথ্যের সূত্র দেখে। ইসলামে হাদীস সংরক্ষণ ও বর্ণনায় যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা একটি ভিন্ন ‘ফান্ন’ বা সাবজেক্টেই পরিণত হয়েছে। হাদীসের প্রতিটি বর্ণনাকারীর ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য, বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট মেথডলজি ডেভেলপ করা হয়েছে। সূত্রের কারো ব্যাপারে সামান্যতম সমস্যা থাকলেও হাদীসকে সহীহ থেকে নামিয়ে হাসান, এরপর দায়ীফ ও মাওদু’ বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথম যুগ থেকে হাজারো বই, শত শত খণ্ডের, প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের একটি কষ্ট করে অন্তত চোখ বুলাতে হবে।

৩. আমি দুনিয়াতে একজন অথবা অনেক কে দেখে অনুপ্রাণিত হই যে, আমি যদি কষ্ট করে পড়াশুনা করি ২০ বছর তাহলে পরবর্তী জীবন সুখকর হতে পারে, কিন্তু আখিরাতের জন্য এরকম উদাহরণ কিভাবে পাব আর অনুপ্রাণিত হব?
উ: আমাদের হয়ে রাসূল স. মি’রাজের রাতে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন। তাঁর চোখে আমরা জান্নাতীদের দেখতে পারি। তাছাড়া তিনি জান্নাতীদের বিভিন্ন বিবরণও দিয়েছেন। সেগুলো (গাইব) বিশ্বাস করাটাই বিশ্বাসের চ্যালেঞ্জ, যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই কেবল জান্নাতের আশা করা যায়।

৪. একজন অন্য ধর্মের মানুষের কি দোষ ছিল যে, সে অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করল?
উত্তর: দোষ জন্মের নয়, দোষ হলো বিবেকের, চিন্তার। আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ ফাংশনিং একটি ব্রেইন দিয়েছেন, যা দিয়ে চাইলেই তাঁকে চেনা সম্ভব ছিল। বিশেষ করে বর্তমান যুগে, যখন ইনফরমেশন হাতের মুঠোয়।

৫. আমি কোন কিছু প্রমাণ না পেয়ে কিভাবে বিশ্বাস করব এই হুজুর অথবা এই মানুষটা ইসলাম সম্বন্ধে সঠিক তথ্য দিচ্ছে?
উ: প্রমাণ বুঝতে হলে প্রথমে তো বুঝতে হবে শরীয়াহর ক্ষেত্রে প্রমাণ কী কী, এবং কীভাবে। সেজন্য কিছু পড়তে হবে, জানতে হবে, সময় ডেডিকেট করতে হবে।

৬.অনেক হুকুম অনেক নবীর ক্ষেত্রে জায়েজ থাকলেও আমাদের নরমাল মানুষদের ব্যাপারে এক্সেপশনাল হয়ে যায় কেন?
উ: প্রেসিডেন্ট বা প্রাইম মিনিস্টারের জন্য অনেক কিছু এক্সেপশনাল কেন? এটাও আরেকটি বিশ্বাস ও আস্থার চ্যালেঞ্জ। আল্লাহকে রাব হিসেবে গ্রহণ করে নিলে তাঁর সকল সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়ার চ্যালেঞ্জ।

৭. আমরা তো নবীজীকে দেখিনি তাহলে কিভাবে আমাদের মধ্যে ইমান আসবে বা কিভাবে নবীজীর কথা বিশ্বাস করব যে এটাই নবীজী বলে গেছেন? সোর্স বিশ্বাস করব কিভাবে?
উ: যেভাবে নিউটন-আইনস্টাইনের কথা বিশ্বাস করে থাকেন। এ প্রশ্নের উত্তর অনেকটা পূর্বে গিয়েছে। নবীজীর প্রতিটি কাজ ও কথাকে সুনির্দিষ্ট মেথডলজি অনুসরণ করে রেকর্ড করা হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো কথা বা কাজকে এতটা সুসংহতভাবে রেকর্ড করা হয় নি। কাজেই এ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞানার্জন বাঞ্ছনীয়।

শেষকথা, প্রশ্নগুলো পড়ে ভাইয়ের জানার আগ্রহ বুঝা যাচ্ছে। আমি তাকে অনুরোধ করব, দ্বীন বিষয়ে কোনো কোর্স করতে। বর্তমানে মাশা’আল্লাহ অনলাইনেও বেশি কিছু চমৎকার কোর্স আছে। আল্লাহ সহজ করে দিন। আমীন।