বড় মামার মৃত্যু ও মৃত্যু-চিন্তা

গত রাতে বড় মামা আখিরাত-গন্তব্যের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি।

বড় মামার অনেক পরে হঠাৎ করে ক্যান্সার ধরা পড়ে মাত্র তিন-চার মাসের মাথায় এ বছরের শুরুতে চলে গেলেন সেজো মামা। ওনার যাত্রাটা ছিল খুব দ্রুত!

পরিবারের একজনের ক্যান্সার এবং এরকম মরণব্যাধিগুলো পুরো পরিবারের জন্য শিক্ষা। যিনি আক্রান্ত তিনি বুঝে নেন, তিনি চলে যাচ্ছেন। পরিবার বুঝে নেয়, সমাজ বুঝে নেয়, তিনি চলে যাচ্ছেন। চোখের সামনে ধীরে ধীরে মৃত্যুর পানে ছুটতে দেখে কাছের মানুষটিকে।

আমি প্রায়ই ভাবি, হঠাৎ মৃত্যুটাই যদি স্বাভাবিক হত, আর স্বাভাবিক মৃত্যু যাকে বলি, সাধারণত যা কোনো রোগ বালাইয়ের মধ্য দিয়ে আসে, তা যদি অস্বাভাবিক হত, তাহলে মৃত্যুর স্মরণ থেকে আমরা গাফেল থাকতাম বেশি। ধরুন, প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হয়েছে। ঘটনাটা মনে দাগ কাটে ঠিকই, কিন্তু পরক্ষণেই শয়তান উপস্থিত হয়, বলে ওটা কিছু না, দুর্ঘটনা যেভাবে ঘটেছে, তা না ঘটালেই হলো। মানে এরকম মৃত্যু যেন এড়ানো সম্ভব।

কিন্তু পরিবারের একটি তরতাজা মানুষকে চোখের সামনে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে যেতে দেখলে ভাবনাটা অন্যরকম হয়। মনের দাগটা গভীর হয়, চিন্তার অনেক সুযোগ আসে, শয়তান ব্যর্থ হয়।

বস্তুবাদী পৃথিবী মৃত্যুকে সবসময় ভুলিয়ে রাখতে চায়। সেদিন এক ভাই তার স্ট্যাটাসে একটি উন্নত দেশের অবস্থা বলছিলেন, সেখানে কারো সাথে মৃত্যু নিয়ে কথা বললে সে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। এক সময় বলে, হয়ত তুমি অসুস্থ, ডাক্তার দেখাতে পারো। অর্থাৎ, মৃত্যুর ভাবনাটাকে তারা আসতেই দিতে চায় না। কিন্তু কেন?

মৃত্যু নিয়ে ভাবলে কি এত স্মার্টফোন বিক্রয় হবে? কিংবা ফ্ল্যাটের দাম কি বাড়বে সেভাবে? অথবা জমির? স্টক এক্সচেঞ্জের সূচকের কী হবে? ব্যাংকগুলো লোন দিবে কাকে? ওদিকে বাণিজ্য মেলায় আসবে কে? ভ্যালেন্টাইন্স ডে তো পুরো ফ্লপ হবে! মোবাইল কোম্পানিগুলোর বড় বড় কাস্টমার – রাত জাগা তরুণদের – কাছে টকটাইম বিক্রয় করতে না পারলে কী অবস্থা দাঁড়াবে!

এক কথায় মৃত্যুর ভাবনা এ সব কিছুর বাধা। কাজেই এটা থেকে মানুষকে সবসময় দূরে রাখতে হবে। বিজ্ঞাপন করতে হবে স্বপ্নিল। খাদে ভরা জমির রিয়েল স্টেট বিজ্ঞাপন করতে হবে সুন্দর পরিবারসহ অনাবিল প্রশান্তিময় জীবনের। তা দেখে মানুষ অনাদিকাল বাঁচার কনফিডেন্স পাবে, বিক্রয় বাড়বে।

এরপর.. অবশেষে… সব স্বপ্ন ভেঙে, সব মায়া ত্যাগ করে, একদিন হঠাৎ করেই চলে যেতে হবে পৃথিবী ছেড়ে… হয়ত অপ্রস্তুতভাবেই…

আল্লাহ বড় মামার কবরের আযাব মাফ করে দিন, তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে জায়গা করে দিন। আমীন। আর আমাদের সকলকে মৃত্যুর ভাবনা সর্বদা লালন করে সচেতন জীবন যাপন করার তাওফীক দিন। আমীন।