আমার ডায়েরি : ১৮/০৩/২০১১ : ভূমিকম্প, সুনামি, র‌্যাডিয়েশন লিকিংস.. সর্তক হওয়ার এখনি সময়..

যখনি ভূকম্পন আর সুনামির খবর, তখনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ক্লাইমেট চেঞ্চ ইত্যাদি বিষয়গুলো বড় হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের নীত নির্ধারকেরা একটু নড়ে চড়ে বসেন। আবহাওয়াবিদরা রাত-দিন অফিস করেন। দেশের থিংক ট্যাংকদেরকে টক শো, মিষ্টি শোতে আনা হয়। নিউজ হয় পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট ইত্যাদি সব মাধ্যমেই। অবশেষে দীর্ঘ গবেষণার পর আমরা জানতে পারি,

ইহা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল বলিয়া নিশ্চিত হওয়া গিয়াছে।আগামীতে এরূপ বড় কোনো ক্ষতি যেন না হইতে পারে, সে দিকে লক্ষ রাখিয়া পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হইবে।

আমাদের শিক্ষক মাওলানা মাহবুবে এলাহী সাহেব (রহ.), আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দিন, বলতেন, “আচ্ছা বলতে পারো? লোহাতে বাড়ি মারলে কীসের আওয়াজ হয়?” আমরা বলতাম, “ঝিন ঝিন।” কেউ বলত ঝুন ঝুন, টুন টুন, টিন টিন …. ইত্যাদি। তিন বলতেন, হয় নি। লোহা বাড়ি মারলে আওয়াজ হয়, যেই-সেই। মানে, আমি যেই রকম ছিলাম, সেই রকমই আছি।

তো, আমাদের অবস্থা এখন লোহার মতোই। আমরা দেখেও দেখি না, শুনেও শুনি না। যেই, সেই থাকি।

আল কুরআনের একটি আয়াত মনে পড়ে গেল। আল্লাহ বলেন,

هُوَ الَّذِي يُسَيِّرُكُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا كُنتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنجَيْتَنَا مِنْ هَٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ – فَلَمَّا أَنجَاهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَىٰ أَنفُسِكُم ۖ مَّتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

তিনিই তোমাদের ভ্রমন করান স্থলে ও সাগরে। এমনকি যখন তোমরা নৌকাসমূহে আরোহণ করলে আর তা লোকজনকে অনুকূল হাওয়ায় বয়ে নিয়ে চলল এবং তাতে তারা আনন্দিত হল, নৌকাগুলোর উপর এল তীব্র বাতাস, আর সর্বদিক থেকে সেগুলোর উপর ঢেউ আসতে লাগল এবং তারা জানতে পারল যে, তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, তখন ডাকতে লাগল আল্লাহকে তাঁর এবাদতে নিঃস্বার্থ হয়ে যদি তুমি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করে তোল, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা কৃতজ্ঞ থাকব। তারপর যখন তাদেরকে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলেন, তখনই তারা পৃথিবীতে অনাচার করতে লাগল অন্যায় ভাবে। হে মানুষ! শোন, তোমাদের অনাচার তোমাদেরই উপর পড়বে। পার্থিব জীবনের সুফল ভোগ করে নাও-অতঃপর আমার নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন আমি বাতলে দেব, যা কিছু তোমরা করতে। (সূরা ইউনুস : ২২-২৩)

এই আয়াতদ্বয়ে মানুষের স্বভাব আল্লাহ তা’আলা খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। মানুষ যখন নিজের ‘যায় যায় অবস্থা’ লক্ষ্য করে, তখন আল্লাহকে ডাকে। তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। একেবারে নি:সার্থ ভাবে। একনিষ্ঠ ভাবে। ইখলাসের সাথে।

আবার যখন তিনি তাকে রক্ষা করেন, তখন তারা সেই আগের মতো হয়ে যায়। ঠিক লোহার মতো।

এদের প্রতি ইঙ্গিত করেই হয়ত আল্লাহ বলেছেন,

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ [٧:١٧٩]

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। (সূরা আল আ’রাফ : ৭)

চিন্তার বিষয় হলো, আল কুরআনে আল্লাহ তা’আলা যে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আযাব দেয়ার কথা বলেছেন, তাদের যুগে যদি বর্তমান মিডিয়া থাকত, তারাও সেগুলোকে নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে চালিয়ে দিত। কিন্তু দুর্যোগের পরিচালক ‘প্রকৃতির’ পেছনে যে প্রকৃতির মহান স্রষ্টা আছেন, তা কি ভুলে থাকার অবকাশ আছে? এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করার কোনো যুক্তি আছে কি? পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানী মিলেও কি একটি ছোট্ট দুর্যোগ থামিয়ে দিতে সক্ষম? ভেবে দেখুন তো?