বিবাহের দেনমোহর কীভাবে নির্ধারণ করা হবে?

প্রশ্ন: দেনমোহর নির্ধারন করা হবে কিসের ভিত্তিতে? আমদের দেশে দেনমোহরের ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলে পক্ষ এটাকে কম রাখার চেষ্টা করে আর মেয়ে পক্ষ বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটাকে আমার যুক্তিযুক্ত মনে হয়না। আর ইসলামে এর সঠিক নির্দেশনা থাকা উচিৎ। আর আমি সেটা জানতে আগ্রহী।
দেনমোহর কখন পরিশোধ করাতে হয়? উসুল সম্পর্কেও জানতে চাই।

খুব বেশী প্রশ্ন হয়ে গেল কি? আসলে ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না। কিন্তু জানতে চাই।
যাজাকাল্লাহুখায়ের।

দেনমোহর নির্ধারন করা হবে কিসের ভিত্তিতে? আমদের দেশে দেনমোহরের ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলে পক্ষ এটাকে কম রাখার চেষ্টা করে আর মেয়ে পক্ষ বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটাকে আমার যুক্তিযুক্ত মনে হয়না। আর ইসলামে এর সঠিক নির্দেশনা থাকা উচিৎ। আর আমি সেটা জানতে আগ্রহী। দেনমোহর কখন পরিশোধ করাতে হয়? উসুল সম্পর্কেও জানতে চাই। খুব বেশী প্রশ্ন হয়ে গেল কি? আসলে ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না। কিন্তু জানতে চাই। যাজাকাল্লাহুখায়ের।

উত্তর: দেনমোহর নির্ধারণ হয় দু’পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে। এর সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারিত আছে; সর্বোচ্চ পরিমাণের কোনো সীমা নেই। এই যে ‘দু পক্ষের আলোচনা’ -এরও একটা ভিত্তি থাকে। তা হলো, পরিবারের সমপর্যায়ের অন্যান্য মহিলাদের দেনমোহর -যেমন, চাচী, ফুফু, খালা, বোন ইত্যাদি। রূপে, গুণে তারা যদি সমান হয়, তাহলে তাদের দেনমোহরের সাথে মিল রেখে একটা অঙ্ক নির্ধারণ করা যেতে পারে।

ইসলাম দেনমোহরের বিধান দিয়েছে নারীর জীবনের সিকিউরিটির জন্য। কোনো কারণে দাম্পত্য বন্ধন ভেঙে গেলে যেন তাকে পথে বসতে না হয় -সে জন্যই এ ব্যবস্থা। আমার অন্য এক লেখায় এটাকে অনেকটা লাইফ ইন্সুরেন্সের সাথে তুলনা করেছিলাম।

দেনমোহর নারীর অধিকার। এ থেকে তাকে বঞ্চিত করা যায় না। এ জন্যই বিবাহে কেউ যদি দেনমোহর নির্ধারণ নাও করে, কিংবা, এরকম বলে যে, ‘এ বিবাহে কোনো দেনমোহর থাকবে না’ -তবু তাতে দেনমোহর দিতে হয়।

দেনমোহরের দুটো পর্যায়। ১. নগদ ২. বাকী। বিবাহে পুরো দেনমোহর, বা, না পারলে, কিছু অংশ নগদে পরিশোধ করা উত্তম। (বিবাহের জন্য দেয়া গহনা ইত্যাদি নগদ দেনমোহরের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।) আর অবশিষ্ট অংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। এ থেকে নারীকে বঞ্চিত করা উচিৎ নয়। তবে যদি নারীকে তালাক দেয়া হয়, বা তার মৃত্যু হয়ে যায় -তাহলে তাৎক্ষণিক তা পরিশোধ করে দিতে হবে।

দেনমোহর নির্ধারণের সময় সঙ্গতিপূর্ণ দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিৎ। শুধু লোক দেখানোর জন্য কোটি টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা, এরপর, প্রথম রাতেই ৯৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা মাফ করিয়ে নেয়া- এগুলো মানবতা বিবর্জিত ঘৃণিত কাজ। অতএব শুধু অঙ্কের দিকে না তাকিয়ে সামর্থ্যের দিকেও তাকানো উচিৎ।

প্রশ্ন: ইউসুফ ভাই, কিন্তু এ দিয়ে সামাজিক যে সমস্যা-” ছেলে পক্ষের দনমোহর কম রাখতে চাওয়া ও মেয়ে পক্ষের তা বাড়াতে চাওয়া” সমাধান হচ্ছে না। মেয়ের পরিবারের সমপর্যায়ের অন্যান্য মহিলাদের দেনমোহর -যেমন, চাচী, ফুফু, খালা, বোন ইত্যাদি। রূপে, গুণে তারা যদি সমান হয়, তাহলে তাদের দেনমোহরের সাথে মিল রেখে একটা অঙ্ক নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এটা নির্ধারনের সময়ই তো সমস্যার শুরু হয়। এর চেয়ে স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত কি নেই? ছেলের আর্থিক অবস্থা কি বিবেচ্য নয়?

উত্তর: ছেলের আর্থিক অবস্থা অবশ্যই বিবেচ্য। আমার মন্তব্যে তা ছুটে যাওয়ায় দুঃখিত। ছেলের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় রেখেই মোহরানা ঠিক রাখতে হবে। আমি শেষের দিকে বলেছি: “…সামর্থ্যের দিকেও তাকানো উচিৎ।” আসলে উভয় পক্ষের দিকটা লক্ষ্য রেখেই মোহরানা নির্ধারণ করা উচিৎ। মনে রাখা উচিৎ, নবীজী স. তাঁর স্ত্রী, কণ্যাদের ক্ষেত্রে কত অল্প অঙ্ক নির্ধারণ করেছিলেন। কাজেই কম মোহরানা নির্ধারণ কোনো সম্মানহানীর বিষয় নয়। আবার মোটা অঙ্ক নির্ধারণও কোনো গর্বের বিষয় নয়। এটা কোনো সওদা বা কেনা বেচা নয় যে যত বেশি মূল্য ধরা হবে, তত মান বাড়বে।