সূর্যগ্রহণে ইবাদত এবং কুসংস্কার : ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি?

প্রশ্ন: আজ সূর্যগ্রগণ। সকালে গ্রহণের সময়টাতে রুমা নামাজে দাড়িয়ে গেলো। এ সময় নাকি বেশী বেশী ইবাদত করার নিয়ম। এ ধরনের কোন ধর্মীয় নির্দেশনা আছে কি? জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।

আর আমার পাশের বাসার এক ভাবী (ডাক্তার) নুতন মা হতে চলেছেন। শুনলাম তার মা নাকি গ্রহনের ২-৩ ঘন্টার মধ্যে কোন কিছু খেতে দেননি, শুতে দেননি এমনকি কাত হতেও দেননি যদি অনাগত সন্তানের ক্ষতি হয়!

জানি এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই তবু এ ধরনের কুসংষ্কার কখন থেকে শুরু হলো জানতে ইচ্ছে করছে।

উত্তর: বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে যে নবীজী স. সূর্য্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণকে আল্লাহর নিদর্শন বলেছেন এবং এ সময়ে নামায পড়তে ও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে বলেছেন।

নবীজীর স. জীবনে একদিনই সূর্য্রগ্রহণ হয়, যেদিন নবীজীর স. পূত্র ইবরাহীম রা. ইন্তেকাল করেন। আর এ কারণেই সেদিন মানুষের মাঝে নানা রকম কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়ে, যা নবীজী স. অত্যন্ত দক্ষভাবে নির্মূল করেন।

তবে হাদীসে যেরকম ভয়াবহ সূর্য্যগ্রহণের বর্ণনা পাই, আজকেরটা সেরকম না। সেই গ্রহণটি ঘন্টাব্যপী বা তার চেয়েও বেশি স্থায়ী ছিল। অথচ আজকের এটির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র তিন মিনিটের মতো, তদুপরি অধিকংশ জায়গা থেকেই তা দেখা যায় নি।

ক’দিন আগে এক ইসলামিক প্রশ্নোত্তর সাইটে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন যে, “আমাদের এখানে গত এক মাস আগে থেকে বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, অমুক দিন সূর্য্যগ্রহণ হবে। আমরা সে মতে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি এবং যথাসময়ে ইমাম সাহেব আমাদের নিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। কিন্তু, বাস্তবতা হলো, সেদিন আমাদের এখানে আকাশ সম্পূর্ণ ফর্সা ছিল। এমতাবস্থায় (চোখে না দেখে) শুধু বিজ্ঞানীদের কথানুসারে সময় মতো সূর্য্যগ্রহণের নামাজ পড়াটা কি সহীহ হয়েছে?” তারা উত্তর দিলেন, না।

আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হলো, সূর্য্যগ্রহণ -যেটা বছরে কয়েকবার হয়, যেটা ত্রিভুজ ভাই অন্য পোষ্টে উল্লেখ করেছেন- সেটা সকাল বিকালের ন্যায় এত সাধারণ যে মানুষ তার ভয়াবহতা উপলব্ধিই করতে পারে না। কিন্তু হাদীসে যেটার সম্পর্কে বিবরণ এসেছে সেটা এমন যে, তা শতবর্ষে একবার বা দু বার হয়। আবার এত ভয়াবহ হয় যে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। কাজেই নবীজী স. সবাইকে নামায পড়ার ও দোয়া করার নির্দেশ দেন।

নতুবা দেখুন, হাদীসে সূর্য্যগ্রহণের নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা বাকারা পড়তে বলা হয়েছে। রুকুতে, সিজদাতে ১০০ তাসবীহ পড়তে বলা হয়েছে। আবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইমরান/নিসা পড়তে বলা হয়েছে। এগুলোতে কমপক্ষে এক ঘন্টা সময় নিবে। এরপর আবার লম্বা দোয়া রয়েছে, যতক্ষণ না আকাশ পরিষ্কার হয়, ততক্ষণ।

তো.. এগুলো এই তিন মিনিটের সূর্য্যগ্রহণের নয়। আবার যা অনেক জায়গায় দেখাও যায় নি.. যাও কিছুটা দেখা গেছে, কোনো ভয়ই লাগে নি..

যাহোক, আল্লাহ ভালো জানেন। শুধু শুধু এখানে ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে যাচাই উচিৎ হবে না। ধর্ম যে আঙ্গিকে বলেছে, আমাদের জ্ঞান হয়ত সে আঙ্গিকটাকে এখনও ধরতে পারে নি।