জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ও একটি স্বপ্নের পথ চলা

গত বছরের শেষ দিকের কথা। রমজান মাস শুরু হওয়ার কিছুদিন বাকী। মালিবাগ জামিয়ায় ইফতা বিভাগের বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছি তখন। একদিন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মুফতি হাফিজুদ্দীন সাহেব ডেকে বললেন, ইঊসুফ, তোমাকে আর আব্দুল হাসীবকে নিয়ে একটা আধুনিক ইফতা বিভাগ খুলতে চাই। কী বলো তুমি? প্রিয় শিক্ষকের কথায় তাৎক্ষণিক কোনো জবাব দিয়েছি কিনা মনে পড়ছে না। ভাবার জন্য সময় চেয়েছিলাম হয়ত।

আব্দুল হাসীব ভাই ২০০৬ ইং সনে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বোর্ডের অধীনে দাওরায়ে হাদীসে (মাষ্টার্স সমমান) সমগ্র বাংলাদেশের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১ম স্থান অধিকার করেন। এরপর মালিবাগ জামিয়ায় ইফতা বিভাগে পড়েন। আর আমি অনুরূপ রেজাল্ট করি ২০০৮ ইং সনে। এরপর ইফতা বিভাগে পড়ি যথারীতি মালিবাগ জামিয়ায়। সেই সূত্রে আমাদের মধ্যে এক অন্যরকম মিল ছিল।

ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য কিছু করার। ইসলামের জন্য কিছু করার। সারা বিশ্বে ইসলাম ও মুসলমানদের দুর্দশা ছোট হৃদয়ে খুব আঘাত করতো। নিজেকে নিজেই বলতাম, হায়, মুসলমানরা আজ এত অসহায়!স্বপ্ন দেখতাম, মুসলমানদের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখব। মুসলমানরা একদিন সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আবারও। ইসলামের আহ্বানে সাড়া দিবে বিশ্ববাসী।

স্বপ্নগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন। তবে একটা টার্গেট ছিল জোড়ালো। সেটা হলো, সমকালীন মানুষের জন্য কিছু করা। আমি দেখেছি, বড় বড় মাওলানা হওয়ার পর সবারই আগ্রহ থাকে আরেকটি মাওলানা প্রজন্ম তৈরি করা। তাদের টার্গেট, আরেকটি মাওলানা প্রজন্ম তৈরি করা। এভাবে.. চলতে থাকে..

আবার কেউ কেউ নিজেকে উৎসর্গ করেন লেখালিখিতে। টার্গেট, আগামী প্রজন্ম মনে রাখবে লেখাগুলো। এগুলো পেয়ে তারা সুপথে ফিরে আসবে। কেউ বা ব্যস্ত থাকেন খানকায়। আত্মশুদ্ধিই একমাত্র ধ্যান তাদের। এগুলো যে খারাপ, কিংবা, ভালো না, তা কিন্তু না। তবে এগুলোতে সমকালীন প্রজন্মকে নিয়ে ভাবনা খুব কমই দেখতে পেতাম।  অবশ্যই ব্যতিক্রম সবখানেই আছে। আর গুটিকয়েক ব্যতিক্রমীদের উপর ভর করেই টিকে থাকে সমাজ।

অথচ আল্লাহর এই আয়াতটা যতবারই পড়তাম,

فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ

“তাই তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং ফিরে এসে স্বজাতিকে সতর্ক করে,যেন তারা (আল্লাহর আযাব থেকে) বাঁচতে পারে । (৯:১২২)

ততবারই মনে হত, যে, আল্লাহ চান যেন প্রত্যেক সমাজের কিছু লোক দ্বীন শিখে স্বজাতিকে তা শেখায়। স্বজাতি বলতে নিশ্চয়ই সমকালীন স্বজাতি বুঝায়। আর সমকালীন স্বজাতিকে কিছু শেখাতে হলে নিশ্চয়ই তাদের আগ্রহটা বুঝতে হবে, তাদের আবেগট ধরতে হবে।

অথচ এই আগ্রহ বোঝা, কিংবা আবেগ ধরতে পারা –এর খুব অভাব মনে হত। সমকালীন স্বজাতি যখন ইংরেজিতে জীবনচর্চা করে, দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিতরা তখন ইংরেজি থেকে দশ হাত দূরে থাকে। সমকালীন স্বজাতি যখন কম্পিউটারে পত্রিকা পড়ে, দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিতরা তখন প্রিন্টেড ম্যাগ সবার হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বতন্ত্র পত্রিকা বের করার প্রতিযোগিতা চলে। সমকালীন স্বজাতি যখন ইন্টারনেটে সমাজ গড়ে, দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিতরা তখন গুটিকয়েক মানুষের কাছে তাবলীগ করেই ক্ষান্ত দেন।

সমকালীন স্বজাতি যখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় চোখ রেখে দিন পার করে, তখন দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিতরা তাকে ‘হারাম’ বলে এক শব্দে দায়িত্ব শেষ করেন। অথচ এ সুযোগে অন্যরা যে ঠিকই একে ব্যবহার করে দ্বীনের অনেক ভুল শিক্ষা প্রচার করে যায়, তাতে খুব একটা নজর দেন না তারা। আল্লাহর আয়াতের আবেদনটা এরকম নয় নিশ্চয়ই।

আল্লাহর আয়াতটা আবার দেখুন, কী মায়া দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আচ্ছা!তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান লাভ করে এবং ফিরে এসে স্বজাতিকে সতর্ক করে,যেন তারা (আল্লাহর আযাব থেকে) বাঁচতে পারে ।

আল্লাহ মায়া করে দুটো কথা বলছেন। ১. দ্বীন শিক্ষা করা ২. স্বজাতিকে সতর্ক করা। অথচ আমরা যেন শুধু প্রথমটি নিয়েই পড়ে থাকি। তাও কত পার্সেন্ট তা অর্জন করতে পারি, আল্লাহই ভালো জানেন। আর দ্বিতীয়টা কেন জানি এড়িয়ে যাই। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।

দুই.

প্রিয় শিক্ষককে পরদিন বললাম, আমরা তিনজন মিলে একটা মাদ্রাসা হবে, তাও আবার ইফতা বিভাগ (Special course on Islamic Jurisprudence), এ কি সম্ভব? তিনি শুধু বললেন, ‘আল্লাহ সাহায্য করলে সবই সম্ভব’। আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে বললাম, ‘আমি আছি’।

এরপরের ঘটনাপ্রবাহ খুব দ্রুত। মাদ্রাসার নাম নির্ধারণ হয়ে গেল, জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া। গত শতাব্দীর নিবেদিতপ্রাণ আলেম মাওলানা আস’আদ মাদানী রহ. এর নামানুসারে এ জামিয়ার নাম। সারা জীবন শুধু মানুষকে ইসলামের বাণী বোঝানোর আবেগ নিয়ে যিনি সারা পৃথিবী সফর করে বেরিয়েছেন। নিজের স্বাস্থ্য, আরাম কোনো কিছুই বাধা হয়নি এ সফরে। এ জন্যই তো মানুষ তাঁকে স্মরণ করে ‘ফিদায়ে মিল্লাত’ বা ‘মুসলিম জাতির জন্য উৎসর্গ’ উপাধিতে।

একটা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে কত বাধা আসে, তা কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই জানেন। রমজান মাস তখন সন্নিকটে। রমজানের পরই শাওয়াল। এ মাস থেকেই নতুন সেশনের ক্লাস শুরু হয় জামিয়াগুলোতে। কাজেই হাতে মাত্র এক মাস সময়। এর মধ্যে বাসা খোঁজা, পোষ্টারিং করা, ছাত্র সংগ্রহ, ফান্ড রেডি করা, সিলেবাস প্রণয়ন ইত্যাদি কত কাজ। কিন্তু আল্লাহ সাথে থাকলে কীভাবে যে কী হয়, কল্পনাই করা যায় না।

আমরা যখন হন্যে হয়ে বাসা খুঁজছি, মাওলানা উমায়ের তখন কোথা থেকে এক বাসার খোঁজ নিয়ে এলেন। কথা বলে পাকাপাকি করে নিলাম। ছাত্র ভর্তি হবে কিনা, একটা ভয় ছিল। অল্প কিছু জায়গায় পোষ্টারিং করা হলো, এবং মৌখিক ভাবে সব জায়গায় বলে দেয়া হলো।

ঈদের আগেই নতুন বাসায় উঠলাম। খালি ফ্ল্যাট। ফ্যান লাগবে। চুলা লাগবে। হাড়ি-পাতিল, আলমিরা, বই-পত্র, তালা-চাবি, খাতা-কলম, বালতি-মগ, প্লেট-গ্লাস, বাবুর্চি –আরো কত কি! কিন্তু প্রতিদিনই একটি একটি করে সব ব্যবস্থা হয়ে যেতে লাগল, আলহামদুলিল্লাহ।

ঈদের কয়েকদিন পর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলো। ভাবলাম, কে আসবে এই নতুন প্রতিষ্ঠানে। ছোট ক্লাসের প্রতিষ্ঠান হলে তাও চলত, ইফতা বিভাগের মতো উচ্চতর ক্লাসে পড়তে এই নতুন প্রতিষ্ঠানে কে-ই-বা আসবে।

কিন্তু একজন একজন করে অবশেষে দেখা গেল, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ইফতা বিভাগের ছাত্রদের চেয়ে কোনো অংশে কম হয় নি। এমনকি, স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে অনেককে ফিরিয়েও দিতে হলো। আবার এমনও না যে, এসব ছাত্র আমাদের পরিচয় আগে জানত। কীভাবে যে কোথা থেকে চলে আসল এরা.. না, এরা কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রও নয়, যে অন্য কোথাও চান্স না পেয়ে এসেছে। বরং, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো ভালো কিছু ছাত্র চলে আসল এখানে।

ভর্তি কার্যক্রম চলাকালীন সময়ই সিলেবাস প্রণয়ন করা হলো। মৌলিক ভাবে দারুল উলূম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের সিলেবাসকে সামনে রেখে সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হলো। ছাত্রদের আধুনিক ব্যবসা পদ্ধিত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে সিলেবাসে সংযুক্ত হলো মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ। কাওয়ায়িদুল ফিক্বহের সহযোগী গ্রন্থ হিসেবে সংযুক্ত হলো ‘শারহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহিয়্যাহ লিয যারক্বা’ । ইংরেজি ও কম্পিউটার ক্লাস যুক্ত করা হলো। ছাত্রদের গবেষণামূলক লেখালিখিতে উৎসাহ দেয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হলো।

এরপর ছোট্ট একটি দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেল জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকার পথচলা..

তিন.

জামিয়াতুল আস’আদ আসলে একটি সম্মিলিত স্বপ্ন ছিল। যার গঠন বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন স্বপ্নের সমন্বয়ে। সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর ভরসা করে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে চলছে এ জামিয়া। নিম্নে কিছু স্বপ্নের বাস্তবায়নের বিবরণ তুলে ধরছি।

১. ইসলাহী মজলিস আয়োজন :

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা বিশ্বাস করে যে, নিজেকে সংশোধন করার পূর্বে অপরকে সংশোধন করা সম্ভব নয়। তাই প্রতি ইংরেজি মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার, বাদ আসর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ইসলাহী মজলিসে আয়োজনের মাধ্যমে ছাত্রদের আখলাকী (চারিত্রিক) ও আমলী প্রশিক্ষণ প্রদান করে জামিয়া।

২. সূচিবদ্ধ রুটিনের আওতায় ছাত্রদের পরিচালনা :

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা বিশ্বাস করে যে, সূচিবদ্ধ রুটিনই সময়ের সঠিক সংরক্ষণের একমাত্র উপায়। তাই বছরের শুরু থেকেই সূচিবদ্ধ রুটিনের মাধ্যমে জামিয়ার ছাত্রদেরকে পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগী করে রাখার চেষ্টা করে আসছে জামিয়া।

৩. নিয়মিত তামরীন লেখা :

ইফতা বিভাগের ছাত্রদের অন্যতম করণীয় হলো, তামরীন। একাধিক নির্ভরযোগ্য বই থেকে সূত্র উল্লেখপূর্বক নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার সহজ সমাধান দেয়াই তামরীন। জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকায় বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যেক ছাত্রকে প্রতিদিন একটি বা দু’টি জরুরী মাস’আলা গ্রহণযোগ্য আরবি কিতাব থেকে উদ্ধৃতিসহ তামরীন লিখে দেখানোর নির্দেশ রয়েছে।

৪. ফিক্বহী সেমিনার আয়োজন:

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা বিশ্বাস করে যে, শুধু দ্বীনের শিক্ষা নিলেই শিক্ষার্থীর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং, সে শিক্ষা সমকালীন স্বজাতির কাছে তুলে ধরাও অনত্যম দায়িত্ব। তাই দুই তিন মাস অন্তর অন্তর প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণকে শরীয়তের সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করতে ফিক্বহী সেমিনার আয়োজন করছে জামিয়া।

৫. অনলাইনে অবস্থান :

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা মনে করে, সমকালীন জাতিকে দ্বীনের কথা শোনাতে তাদের আবেগ ও আগ্রহের ক্ষেত্র বুঝতে হবে। বর্তমানে মানুষ যেখানে মাউসের ক্লিকে বিশ্ব ভ্রমণ করতে অভ্যস্ত, সেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানে বা কারো কাছে গিয়ে মানুষ দ্বীন শিখে আসবে, এ কল্পনা অবাস্তব। কাজেই জামিয়া তার লেখালিখি ও যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে নিজস্ব ওয়েবসাইটের (www.jamiatulasad.com) মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছে। এ ছাড়া ওয়েবসাইটে ‘প্রশ্নোত্তর’ বিভাগে প্রশ্ন পাঠালে জামিয়া যত দ্রুত সম্ভব নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখপূর্বক এর উত্তর দিতে সদা প্রস্তুত।

৬. ইংরেজি শিক্ষা :

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা উপলব্ধি করে যে, ইংরেজি ভাষাজ্ঞান না থাকলে বর্তমানে দাওয়াহ ও তাবলীগের কাজ সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। আবার এও জানে যে, এক বৎসরের কোর্সে অন্য বিষয়ের চাপ বেশি থাকলে মূল কোর্স অপূর্ণ থেকে যায়। তাই ইংরেজির উপর কেবল বেসিক নলেজের জন্য সপ্তাহে একটি ইংরেজি ক্লাস চালু করেছে জামিয়া। যেন ইফতা কোর্স শেষে এর উপর ভিত্তি করে খুব অল্প সময়ে আধুনিক ইংরেজি শিখে নিতে পারে একজন ছাত্র।

৭. হিফজ বিভাগ:

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা বিশ্বাস করে যে, শৈশবের শিক্ষা পাথরে খোদাই করে লেখার ন্যায়, যা কখনো মুছে না। তাই একটি সৎ ও যোগ্য ইসলামী প্রজন্ম তৈরি করতে আজকের শিশুদের দিকে অবশ্যই তাকাতে হবে। সে জন্য ইফতা বিভাগের পাশাপাশি জামিয়া একটি হিফজ বিভাগও চালু রেখেছে, যেখানে কুরআনী জ্ঞানের সর্বোচ্চ মান ধরে রাখার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, অংকও যেন শিশুরা শিখতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

৮. বয়স্ক শিক্ষা:

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকার মূল লক্ষ্যই হলো সমকালীন প্রজন্মকে দ্বীনের শিক্ষা দেয়া, সতর্ক করা। তাই যারা জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, অথচ এখন দ্বীন শিখতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আধুনিক ও স্বল্পমেয়াদী সিলেবাসে দ্বীন শিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে জামিয়া। আলহামদুলিল্লাহ এ বিভাগেও কয়েকজন নিয়মিত ছাত্র আছে জামিয়ার।

৯. ফিক্বহী মজলিস আয়োজন:

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা জানে যে, আধুনিক মাস’আলা, মাসায়েল –এর সমাধান সরাসরি কুরআন হাদীসে পাওয়া যায় না। আলেম ও মুফতিদের দীর্ঘ গবেষণা করে এর সমাধান বের করতে হয়। অথচ এ রকম গবেষণার ফলে আলেমদের মধ্যে পরস্পর মতবিরোধ তৈরি হয়। একই মাস’আলায় একজন আলেম হালাল মনে করেন, তো আরেকজন মনে করেন হারাম। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য সঠিক সমাধানে পৌঁছতে কষ্ট হয়। এ জন্যই সউদিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিকহ একাডেমী, সুদানে ইসলামিক ফিক্বহ একাডেমী সুদান, ইন্ডিয়ায় ইসলামী ফিক্বহ একাডেমী ইন্ডিয়া ইত্যাদি একাডেমীগুলো। যাদের কাজ হলো, নির্দিষ্ট বিষয়ে আলেমদের গবেষণা ও বক্তব্য একত্রিত করা; সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা। এরপর সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছে তা জাতির সামনে তুলে ধরা।

আলহামদুলিল্লাহ জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা বাংলাদেশে এরকম এটি পদ্ক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আগামী মাসেই ইনশা’আল্লাহ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মজলিসুল ফিক্বহ ওয়াল ইফতার প্রথম বৈঠক। যাতে বিরোধপূর্ণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আধুনিক মাস’আলার ক্ষেত্রে স্ব স্ব গবেষণা নিয়ে উপস্থিত হবেন তরুণ আলেম ও মুফতিগণ।

চার.

স্বপ্নের পরিধি অসীম। সাধ্য কিন্তু সসীম। তবে অসীম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ সাথে থাকলে সসীম সাধ্যও হয়ে যায় অসীম। সে আশায়ই বুক বাধে জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা। নিম্নে জামিয়ার কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো:

১. সার্টিফিকেট গ্রহণে রিসার্চ ওয়ার্ক জমা দেয়ার বাধ্য-বাধকতা:

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করছে যে, বর্তমানে অলিতে-গলিতে যত্রতত্র ইফতা বিভাগ গড়ে ওঠায় প্রতিবছর দেশে শত শত মুফতি তৈরি হচ্ছেন। অথচ মুফতি হওয়ার প্রকৃত যোগ্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না তাদের অনেকের মাঝেই। জামিয়ার ছাত্ররা যেন গতানুগতিক ছাত্রদের চেয়ে ভিন্ন হয়, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে তারা যেন একটি সৎ সমাজ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য জামিয়া ইফতার সার্টিফিকেট গ্রহণের জন্য একটি গবেষণা পত্র জমা দেয়ার আইন করেছে। জামিয়ার নির্ধারণ করে দেয়া কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে ইচ্ছে মতো যে কোনো একটি বিষয়ে প্রত্যেক ছাত্রকে নিম্নে পাঁচশত বাক্যের একটি গবেষণা পত্র তৈরি করতে হবে। যাতে নির্ভরযোগ্য কিতাবের সূত্র উল্লেখকরণসহ ফিল্ডওয়ার্ক করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২. কম্পিউটার ক্লাস :

কম্পিউটার ক্লাস চালু করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত তা শুরু করা হবে ইনশা’আল্লাহ।

৩. সংবিধান ও আইন নিয়ে পড়াশোনা :

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়ার পরিকল্পনা আছে একদল আইন বিশারদ আলেম তৈরি করার। যারা বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও আইন অধ্যয়ন করবেন। এবং ইসলামী আইন ও প্রচলিত আইনের মাঝে কী কী সমন্বয় আর কী কী পার্থক্য, সেগুলো প্রবন্ধ আকারে জাতির সামনে তুলে ধরবেন। প্রয়োজনে আইন সংশ্লিষ্টদের সাথে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হবে।

এছাড়া আরো অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন মিলে জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকার স্বপ্ন গঠিত। আল্লাহর উপর নির্ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে এই জামিয়া। ইনশা’আল্লাহ আগামীতেও আল্লাহর সাহায্য পরিপূর্ণভাবে পাবে এই জামিয়া। সেই প্রত্যাশাই করে জামিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে। আল্লাহ তাদের কবুল করে নিন, এবং তাদের সদিচ্ছাগুলো বাস্তবায়নে তাওফীক দান করুন। আমীন।

—————–

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট : http://jamiatulasad.com