প্রশ্ন : খুমুস সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রশ্ন : আমি খুমুস সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আপনার ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। আপনি খুমুস সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। নিম্নে খুমুসের পরিচয় ও বিধানের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো।

পরিচয় : খুমুস এর আরবী শব্দ خمس. এর অর্থ : এক পঞ্চমাংশ বা পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

ইসলামী শরীয়তে খুমুস বলতে সাধারণত যুদ্ধলব্ধ গণীমতের (সম্পদের) এক পঞ্চমাংশকে বোঝানো হয়।

বিধান : এ ব্যাপারে ফকীহগণ একমত যে, যুদ্ধের পর অমুসলিম বাহিনীর রেখে যাওয়া সম্পদকে (গণীমতকে) পাঁচ ভাগ করে এক ভাগ মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে (বাইতুল মালে) রেখে দিতে হয়। যেন দেশ ও দশের কল্যাণে প্রয়োজনমতো তা থেকে ব্যয় করা যায়। আর এই এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখা ওয়াজীব।

আর বাকী চার ভাগ যোদ্ধাদের (মুজাহিদ) মধ্যে বন্টন করতে হয়।

আল্লাহ তা’আলার বাণী :

وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُم مِّن شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللَّهِ وَمَا أَنزَلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴿الأنفال: ٤١﴾

আর এ কথাও জেনে রাখ যে, কোন বস্তু-সামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনীমত হিসাবে পাবে, তার এক পঞ্চমাংশ হল আল্লাহর জন্য, রসূলের জন্য, তাঁর নিকটাত্নীয়-স্বজনের জন্য এবং এতীম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর উপর এবং সে বিষয়ের উপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিনে, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। আর আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাশীল। (৮:৪১)

গণীমতের এক পঞ্চমাংশ কোথায় ব্যয় করা হবে, এ নিয়েও ফকীহদের মাঝে কিছু মতপার্থক্য আছে।

হানাফীদের বক্তব্য হলো, আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর নাম আয়াতের শুরুতে বরকত স্বরূপ এসেছে। কেননা দুনিয়া আখিরাত সবকিছুর মালিকই আল্লাহ। আর রাসূলের স. অংশও তাঁর অনুপস্থিতিতে বহাল নেই। আয়াতে বর্ণিত রাসূলের স. আত্মীয়-স্বজন তখনই পাবে যখন তারা গরীব হবেন। এটা অন্যান্য হাদীস ও সাহাবীদের আমল দ্বারা সমর্থিত। বাকী থাকল এতিম, অসহায়-গরীব ও মুসাফির। কাজেই গণীমতের এক পঞ্চমাংশ বা খুমুসকে এতিম, অসহায়-গরীব ও মুসাফিরের মাঝে প্রয়োজন মতো বন্টন করতে হবে। এরা হলো খুমুসের খাত। এদের সবাইকে বা যে কোনো একজনকে প্রয়োজনমতো দেয়া যেতে পারে।

গণীমত ছাড়া আর যেসব সম্পদের খুমুস বের করতে হয় সেগুলো হলো :

১. ফাই – যুদ্ধ ছাড়া লব্ধ সম্পদ। শাফেয়ী ফকহীগণ গণীমতের ন্যায় ফাইকে পাঁচভাগ করার কথা বলেন। অবশ্য হানাফী ও মালিকী ফকীহগণ মনে করেন, ফাই পুরোটাই মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগার বা বাইতুল মালে সংরক্ষিত থাকবে। এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারী বুঝে প্রয়োজনমতে মুসলমানদের কল্যাণে তা থেকে ব্যয় করবেন।

২. সালাব – যুদ্ধে শত্রুবাহীনীর নিহত সেনার পরিহিত পোশাক ও বহনকৃত অস্ত্র। অনেক ফকীহ মনে করেন এটাকেও পাঁচ ভাগ করা হবে। কেউ কেউ মনে করেন, না। হানাফীদের বক্তব্য হলো, ব্যাপারটা মুসলিম সেনাপতির ওপর অর্পিত থাকবে। তিনি যোগ্য মনে করে কোনো সেনাকে তা পুরস্কার স্বরূপ দিতে পারেন। অন্যথায় তাকে পাঁচ ভাগ করে এ পঞ্চমাংশ গণীমতের এক পঞ্চমাংশের ন্যায় বন্টন করা হবে।

৩. রিকায – ভূগর্ভস্থ গ্রথিত সম্পদ। এ ব্যাপারে সবাই একমত যে রিকায বা ভূগর্ভস্থ সম্পদ খুমুস করতে হবে। রাসূল স. বলেন,

وَفِي الرِّكَازِ الْخُمُسُ

রিকাযে ওয়াজীব হলো খুমুস (এক পঞ্চমাংশ)। – বুখারী

তথ্যসূত্র :

আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়াইতিয়্যাহ এর خمس শব্দের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য
(দারুস সালাসিল কুয়েত, প্রথম প্রকাশ, খন্ড : ২০, পৃষ্ঠা : ১০-২১)