মিডিয়া সমালোচনা : শোলাকিয়া মক্কা নয়, হজ্জ্বও নয়

প্রিয় পাঠক! প্রথমে কালের কণ্ঠের আজকের ‘প্রিয় দেশ’ বিভাগের রিপোর্টটি পড়ুন। লিংক-ইউনিকোড | লিংক-ইপেপার ।

‘গরিবের মক্কা’ শোলাকিয়ায় এবারও বৃহত্তম ঈদ জামাত

এবারও দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। ১৮২৮ সাল থেকে শোলাকিয়ায় নিয়মিত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসেবে এ মাঠে এবারের ঈদুল ফিতরের জামাত হবে ১৮৪তম। আসন্ন ঈদুল ফিতরের জামাত সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে প্রস্তুতিমূলক কাজ এগিয়ে চলছে এখন।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরঘেঁষে উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদগাহ শোলাকিয়ার অবস্থান। ঐতিহ্যবাহী এ মাঠে আড়াই শ বছর আগে থেকেই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বিশ্বাস, এ মাঠে পরপর তিনটি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারলে একবার হজ পালনের ফল লাভ করা যায়। সে জন্য শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ‘গরিবের মক্কা’ নামেও পরিচিত। এ ধরনের বিশ্বাস থেকে বৃহত্তম ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করতে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ মুসলমান এ ময়দানে সমবেত হন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন দেশের মুসলমানরাও আসেন এ মাঠে নামাজ পড়তে। শোলাকিয়ার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে শোলাকিয়া মাঠে একসঙ্গে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ শোয়ালাখ মুসলি্ল ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া। ২০১০ সালের ঈদ জামাতে রেকর্ড চার লাখেরও বেশি মুসলি্ল শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। গত বছরের মতো এ বছরও শোলাকিয়ার ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

সকাল ১০টায় ঈদের জামাত শুরু হলেও সকাল ৯টার মধ্যেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। এ মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে তিনটি, ৩ মিনিট আগে দুটি এবং ১ মিনিট আগে একটি গুলি ছোড়া হয়।

বর্তমানে মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আর সদস্যসচিব হলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সদস্য সচিব নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে বর্তমান কমিটি কাজ করছে। মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন, মিডিয়া সেন্টার নির্মাণ, দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণসহ সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেঙ্ নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় নিরাপত্তার দিকটিও বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

আমার বিশ্বাস, রিপোর্টার নিজের বিশ্বাসকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস বলে নিজের অজান্তে চালিয়ে দিয়েছেন। নতুবা মুসলিম সম্প্রদায়ের কেউ এমন বিশ্বাস রেখে থাকলে তা নিতান্তই ভিত্তিহীন বিশ্বাস হবে।

শোলাকিয়া একটি ‘অর্ডিনারি’ মাঠ। খুব সাধারণ একটি জায়গা। অন্য দশটি জায়গার সাথে এর কোনো পার্থক্য নেই। এখানে ঈদের সালাত আদায় করারও বিশেষ কোনো ফযীলত নেই। কেবল একটি বিষয়, তা হলো, এটি একটি ঈদগাহ। ঈদের সালাত ঈদগাহে আদায় করার সাওয়াব বেশি। এজন্য সেই এলাকায় মসজিদের চেয়ে সেখানে ঈদের সালাত আদায় করার সাওয়াব বেশি হবে। তবে সেটা কাদের জন্য? কেবল সেই এলাকার লোকদের জন্য।

অন্য এলাকা থেকে কেউ সেখানে ঈদের সালাত আদায় করতে চাইলে কেবল এজন্য চাইবে যে, সেখানে বড় জামাত হয়। বড় জামাতের সাওয়াবও বড়। এছাড়া আর কোনো ফযীলত শোলাকিয়ার নেই।

শোলাকিয়া কখনোইগরীবের মক্কা হতে পারে না। গরীব, ধনী যে-ই হোক না কেন, মক্কা একটিই। শোলাকিয়ায় তিনবার ঈদের সালাত আদায় করা কখনোই হজ্জ্বের সমতূল্য নয়। হজ্জ্ব একটি নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হয়। গরীব, যার হজ্জ্বে যাওয়ার টিকিটের পয়সা, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি নেই, তার ওপর তো হ্জ্জ্বই ফরয নয়। শোলাকিয়ায় গিয়ে বিকল্প হজ্জ্ব আদায় করবে কেন?

রিপোর্টটি যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে থাকে (আশা করছি তেমনটি নয়, তবে নিউজের প্লেসিং এবং সেটিং দেখে তা-ই মনে হয়) এবং শোলাকিয়াকে বাণিজ্যিকীকরণের স্বার্থে একে ‘গরীবের মক্কা টাইটেল দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দিবস, ব্যক্তি বিশেষ, আবেগ ঈত্যাদির বাণিজ্যিকীকরণের পর অবশেষে ধর্মীয় অনুভূতির বাণিজ্যিকীকরণ সত্যিই দু:খজনক।

যদি এটা অনিচ্ছাকৃত হয়ে থাকে, তাহলে দোয়া করি, আল্লাহ রিপোর্টারকে শুভ বুদ্ধি দান করুন। আমীন।