আমার ডায়েরি ০৭/০৮/২০১০ | www.qoumi.com এর উদ্বোধন এবং বড়দের বড় নসীহত

গত বেশ কিছুদিন প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে। তাই নিয়মিত ডায়েরি লেখা হচ্ছে না। গতকাল পল্লবীতে মারকাযুদ দাওয়ার কাছেই একটি বাসায় এক দোয়ার মাহফিলের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয়ে গেল আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ইসলামিক একাডেমি বা মাদ্রাসা www.qoumi.com.

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন সর্বজনশ্রদ্ধেয় মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব। তার জ্ঞানগর্ভ আলোচনা অনুষ্ঠানটির শোভা বাড়িয়ে দেয়। রাস্তায় জ্যাম থাকায় শেষদিকে আমাদের সাথে যোগ দেন শাবাকা সফট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক

মাগরীবের নামাযের পর ক্বিরাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর www.qoumi.com এর পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন মাওলানা নূরুল ইসলাম। তার পর ইন্টারনেটে ইসলামের দাওয়াতের গুরুত্ব এর গুরুত্ব, qoumi.com এর প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদিন নানা বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে দেয়া হয় আমাকে।

এরপরই মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যে কোনো কাজে সফলতা লাভের জন্য শর্ত তিনটি।

১. ইখলাস – বা পরিচ্ছন্ন নিয়্যত।

২. সুন্নতে রাসূলের স. অনুসরণ।

৩. ইতকান – বা যথার্থভাবে করা। যদিও এটা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত, তবু অনেকেই তা ভুলে যায় বলে তিনি আলাদা ভাবে উল্লেখ করেন।

৪. ইস্তিকামাত – বা অবিচল টিকে থাকা।

তিনি বলেন, কম হলেও কোনো কাজ দীর্ঘস্থায়ী হওয়াটাই কাম্য। যে কোনো কাজে ব্যপ্তি টেনে আনার চেয়ে গভীরতা অর্জন উত্তম ও কাম্য।

তিনি qoumi.com এর সাথে জড়িত সবাইকে মুবারকবাদ জানান এবং দোয়া করেন। তিনি আরো বলেন, কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে খুব স্পর্শকাতর। তাই পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে যেন এখানে প্রতিটি ক্লাস পরিচালনা করা হয়, সে দিকে তিনি গুরুত্ব দিতে বলেন।

মাওলানা শামসুল হক সিদ্দিক তার আলোচনায় বলেন, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ﴿المائدة: ٦٧﴾

হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।

রাসূল স. এর উপর তাবলীগ ফরয ছিল। তাই তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের উপরও সে দায়িত্ব বর্তায়। আর কোনো ওয়াজীব কাজ সংঘটনের জন্য যা মাধ্যম হয়, তাও ওয়াজীব হয়। এজন্যই সাউদীর অনেক মুফতি দাওয়াতের কাজে ইন্টারনেট ব্যবহারকে ওয়াজীব বলেছেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের আফসোস যে, পৃথিবীর তেরটি রুট সার্ভারের দশটিই আমেরিকার। একটি ব্রিটেনে, একটি সুদানে এবং একটি অন্য জায়গায়। মুসলিম দেশগুলোর একটিও নেই। আমরা ইন্টারনেটে যে কোনো কিছু করার জন্য আজ তাদের মুখাপেক্ষী। তারা চাইলে আমাদের যে কোনো তথ্য ব্লক করতে পারে, যদিও তারা তা করছে না।

আফসোস যে আমাদের মুসলমানরা কেবল মসজিদে বা মাদ্রাসায় কোটি টাকা দেয়াকেই ইসলামের খিদমত মনে করে। অথচ কোটি টাকা খরচ করে একটি রুট সার্ভার প্রতিষ্ঠা করাকে তারা কোনো খিদমতই মনে করেন না।

অনুরূপভাবে ইন্টারনেট ভিত্তিক মাদ্রাসা, অনলাইন রেডিও ইত্যাদি আরো কত শত খিদমত আছে। আমার বিশ্বাস বর্তমানে এগুলোই সবচেয়ে বড় খিদমত। এর জন্য ইনভেস্টর যোগাড় করতে হবে। আমাদের দেশে ধনী ব্যক্তির অভাব নেই। চাইলেই তারা এসব বড় খিদমতে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন।

সবশেষে তিনি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

—————

গত কয়েক দিনে কয়েকজন বড় ব্যক্তির কয়েকটি বড় নসীহত নোট করেছি। নসীহত নোট করার অভ্যাস আমার ছোট থেকে। কয়েকটা ডায়েরি আছে ছোটবেলার, যেগুলো শুধু নসীহতে পরিপূর্ণ।

যাহোক, নসীহতগুলো হলো :

১. ইসলামের যে কোনো দাওয়াত পজিটিভলি দিবে, নেগেটিভলি নয়।

২. আগে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে, তাহলে পরে নিজের মত প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

৩. আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন যে, মানুষ সৃষ্টির আগে ফেরেশতারা বলেছিলেন যে এসব মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে ঝগড়া করবে। কাজেই ঝগড়া বিবাদ হওয়াটা স্বাভাবিক, না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। তাই যত যাই হোক, নিজের কাজের উপর অটল থাকবে।

আজ তাহলে এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন। দোয়াতে অবশ্যই মনে রাখবেন। ওয়াসসালাম।