সূরা ইয়াসীন ৪১ বার পড়া, রাসূলুল্লাহর স. গায়ে মশা মাছি বসা, ঢিলা নেয়া এবং আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্ন : আস‌সালামু আলাইকুম। সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু কথা ও আমল ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। এগুলো কুরআন-হাদীস অনুযায়ী কতটুকু সহীহ জানতে চাচ্ছি। ১. ৪১ বার সূরা ইয়াসীন খতম পড়ে দুয়া করলে দুয়া কবুল হয়। ২. রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর গায়ে মশা মাছি বসা হারাম ছিল। ৩. মলত্যাগের পর ঢিলা নেওয়ার তরীকা হল- শীতকালে প্রথমে পেছন থেকে সামনে এরপর সামনে থেকে পিছনে আবার পেছন থেকে সামনে ঢিলা ব্যবহার করবে এবং গরমকালে প্রথমে সামনে থেকে পিছনে এরপর… … । এটি হাদীস অথবা আছার দ্বারা প্রমাণিত কিনা? ৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শরীর মুবারকের সাথে যে জায়গা লেগে আছে তা আল্লাহ তায়ালার আরশ, কুরছী এবং কাবা শরীফ থেকেও শ্রেষ্ঠ। – এ আকীদা হাদীস কুরআন অনুযায়ী কতটুকু সহীহ এবং এ আকীদা পোষণ করা আমাদের জন্য জরুরী কী না? বিস্তারিত জানালে অনেক ভালো হয়। ৫. জানা এলেমের উপর আমল করলে আল্লাহ তায়ালা অজানা এলেম দান করে। – এটি হাদীস কি না? হাদীস হলে কোন কিতাবের তা জানালে ভাল হয়। ৬. জাররা পরিমান ঈমান নিয়ে গেলেও আল্লাহ তায়াল এই দুনিয়ার থেকে দশগুণ বড় জান্নাত দিবেন। – এটি হাদীস কি না? হাদীস হলে কোন কিতাবের তা জানালে ভাল হয়।

উত্তর : ওয়ালাইকুম আসসালাম। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর নিম্নরূপ।

প্রশ্ন-১ : ৪১ বার সূরা ইয়াসীন খতম পড়ে দুয়া করলে দুয়া কবুল হয়।

উত্তর-১ : এ ব্যাপারে তেমন কোনো হাদীস পাওয়া যায় না। সুরা ইয়াসীনের ফযীলতে বর্ণিত হাদীসগুলোতে সুরা ইয়াসীনকে মুমুর্ষ রোগীর সামনে পাঠ করার কথা বলা হয়েছে। যে কোনো অসুখ-বিসুখে তেলাওয়াত করতে বলা হয়েছে। এই সুরাকে উম্মুল কুরআন বা কুরআনের মা বলা হয়েছে। কিন্তু ৪১ বার পড়ে পড়ার কথা হাদীসে আসে নি। তবে তা আকাবির ও আসলাফের আমল দ্বারা পরীক্ষীত বলে সাধারণ মানুষের মাঝে তা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়।

প্রশ্ন-২ : রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর গায়ে মশা মাছি বসা হারাম ছিল।

উত্তর-২ :হাদীসে এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না। এবং রাসূলের স. দৈহিক বিবরণ যারা দিয়েছেন, সেসব শামায়েল রচিয়তাদের বক্তব্যেও এমন কিছু পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন-৩ : মলত্যাগের পর ঢিলা নেওয়ার তরীকা হল- শীতকালে প্রথমে পেছন থেকে সামনে এরপর সামনে থেকে পিছনে আবার পেছন থেকে সামনে ঢিলা ব্যবহার করবে এবং গরমকালে প্রথমে সামনে থেকে পিছনে এরপর… … । এটি হাদীস অথবা আছার দ্বারা প্রমাণিত কিনা?

উত্তর-৩  : এটা কোনো হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং, প্রত্যেক মাজহাবের ইমামগণ যেভাবে ভালো মনে করেছেন সেভাবে বিধান বলেছেন। কারো কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে পেছন থেকে সামনের দিকে ধৌত করা শুরু করলে পরিস্কার ভালো ভাবে হবে। কারো কাছে উল্টোটা মনে হয়েছে। এবং কেউই এ পদ্ধতিকে ওয়াজীব বা সুন্নত কোনটিই বলেননি। বরং বলেছেন, এমনটা করা উত্তম, কেননা এভাবে করলে নাজাসাত পরিস্কার হয় উত্তমভাবে।

প্রশ্ন-৪ : রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শরীর মুবারকের সাথে যে জায়গা লেগে আছে তা আল্লাহ তায়ালার আরশ, কুরছী এবং কাবা শরীফ থেকেও শ্রেষ্ঠ। এ আকীদা হাদীস কুরআন অনুযায়ী কতটুকু সহীহ এবং এ আকীদা পোষণ করা আমাদের জন্য জরুরী কী না? বিস্তারিত জানালে অনেক ভালো হয়।

উত্তর-৪ : এ আকীদা কুরআন-হাদীস অনুযায়ী শুদ্ধ নয়। কাজেই এ আকীদা পোষণ করা জরুরীও নয়।

প্রশ্ন-৫ : জানা এলেমের উপর আমল করলে আল্লাহ তায়ালা অজানা এলেম দান করে। – এটি হাদীস কি না? হাদীস হলে কোন কিতাবের তা জানালে ভাল হয়।

উত্তর-৫ :এ ধরনের কোনো হাদীস আমাদের জানা নেই। তবে আলী রা. এর একটি বক্তব্য আছে। তিনি বলেন,

يا حملة القرآن اعملوا به فإن العالم من عمل بما علم ووافق عمله علمه

অর্থাৎ, হে কুরআনের বাহকগণ, তোমরা কুরআনের উপর আমল করো। কেননা আলেম তিনিই, যিনি যা জানেন তার উপর আমল করেন। এবং তার আমল তার ইলমের অনুযায়ী হয়। (কানযুল উম্মাল – ২৯৪১৯)

তাছাড়া সুফিয়ান বিন উয়াইনা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

أجهل الناس من ترك ما يعلم واعلم الناس من عمل بما يعلم وأفضل الناس أخشعهم لله

সবচেয়ে নির্বোধ সেই, যে তার জানা বিষয়ের উপর আমল করা ছেড়ে দেয়। আর সবচেয়ে জ্ঞানী সেই, যে তার জানা বিষয় অনুযায়ী আমল করে। আর সর্বোত্তম মানুষ সেই, যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে। (সুনানে দারেমী – ৩৩০)

হতে পারে এটা আসলাফের কারো কোনো উক্তি। এবং অতি বাস্তবসম্মত উক্তি এটি।

প্রশ্ন-৬ : জাররা পরিমান ঈমান নিয়ে গেলেও আল্লাহ তায়াল এই দুনিয়ার থেকে দশগুণ বড় জান্নাত দিবেন। – এটি হাদীস কি না? হাদীস হলে কোন কিতাবের তা জানালে ভাল হয়।

উত্তর-৬ : আমাদের জানামতে এটা একক কোনো হাদীস নয়। তবে ‘জাররা’ পরিমাণ ইমান থাকলেও আল্লাহ মানুষকে জান্নাতে নিবেন –এটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

يخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن شعيرة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن برة من خير ويخرج من النار من قال لا إله إلا الله وفي قلبه وزن ذرة من خير
(বুখারী – ৪৪)

আর জান্নাতের বিশাল পরিধি বর্ণনা করতে গিয়ে হাদীসে এসেছে যে,

قوموا إلى جنة عرضها السموات والأرض

এতে শহীদের জন্য জমীন ও সকল আসমান সমান জান্নাতের কথা বলা হয়েছে। (মুসলিম-৫০২৪)

মোটকথা, অনু পরিমাণ ইমান থাকলেও আল্লাহ মানুষকে জান্নাতে নিবেন। হয়ত তা নির্ধারিত শাস্তি প্রাপ্তির পর, কিংবা পূর্বে। আর জান্নাতের পরিধি বিশাল। এ জন্য লোকমুখে এমনটা শোনা যায় যে, জাররা পরিমান ঈমান নিয়ে গেলেও আল্লাহ তায়াল এই দুনিয়ার থেকে দশগুণ বড় জান্নাত দিবেন।

—-

প্রশ্নটি পাঠানো হয়েছে ই-মেইলের মাধ্যমে। আপনিও চাইলে এই সাইটের প্রশ্ন পাঠানোর ফরম ব্যবহার করে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। ধন্যবাদ।