এক জার্মান বংশোদ্ভূত ভাইয়ের ইসলামের পথে জার্নির গল্প

রিচার্ড শিগনেল – জার্মান বংশোদ্ভূত ভাইটি জন্মের পর থেকে নিজেকে খ্রিস্টধর্মের বিশ্বাসীরূপে আবিষ্কার করেন। সপ্তাহান্তে চার্চে যাওয়া, বাকী সপ্তাহ দৈনন্দিন কাজ-কর্ম, মৌজ-মাস্তিতে পড়ে থাকা – এই ছিল তার রুটিন। মা প্রচণ্ড ধর্মবিশ্বাসী, আর বাবা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না।

ষোল-সতের বছর বয়সে একবার ভারত ভ্রমণের সুযোগ হয়। হিন্দুদের পুজো করে দেখেছেন। এক সময় বৌদ্ধদের রীতিগুলোও পালন করার সুযোগ হয়েছিল।

জীবনে কখনো কাউকে ইসলাম বা মুসলিম সম্পর্কে কোনো ইতিবাচক কথা বলতে শুনেন নি। একজন গার্লফ্রেন্ড ছিল, তার এক বান্ধবী বলেছিল যে, তার এক মুসলিম বন্ধু ছিল, ভালোই ছিল। মুসলিম সম্পর্কে এতটুকু ইতিবাচক কথাই তার সম্বল।

নাইন-ইলেভেনের পর মুসলিমদের ওপর বিশ্ব মিডিয়ার আক্রমণ দেখেছেন। দেখেছেন কোনো অপকর্মে কোনোভাবে কোনো মুসলিমের নাম আসলে কীভাবে সে সন্ত্রাসী তকমা পায়, আর কোনো ‘হোয়াইট’ এর নাম আসলে কীভাবে তাকে মানসিক রোগী বলে অভিহিত করা হয়। দেখেছেন পাশ্চাত্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন মুসলিমরা ত্রাণ নিয়ে যান, মিডিয়া সেটাকে কীভাবে গোপন করে রাখে।

গার্লফ্রেন্ডের সাথে একসঙ্গে বসবাস করেন অনেক বছর। চাকুরী-ব্যবসা ভালোই চলছিল। ২০০৮ সনের বিশ্বমন্দার ঠিক আগে নতুন ব্যবসা শুরু করেন। ভাগ্য খারাপ, ব্যবসায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। হতাশায় ভুগেন। রাতের পর রাত নেশায় বুদ হয়ে থাকেন।

এত নেশার পরও ভেতরে শুন্যতা অনুভব করেন। কোথায় যেন কী নেই। তিন প্রভুর তত্ত্ব তাকে হতাশ করে। ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ পড়েন। ক্বুল হুয়াল্লাহু আহ্বাদ – তাকে আলোড়িত করে। আল্লাহ এক – আল্লাহ এক – আল্লাহ এক… এর চেয়ে প্রশান্তির কিছু আর নেই।

ইসলাম নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করেন। কুরআন অধ্যয়ন করেন। হাদীসের সাথে সম্পর্ক গড়েন।

এক বছর হলো ভাই মুসলিম হয়েছেন। এখন নাম আব্দুর রহমান। কর্মস্থল লন্ডন থেকে যখন জার্মানিতে মা-বাবার কাছে ফিরে যান, প্রথমে জানান নি। এক পর্যায়ে জানতে পেরে মা প্রচণ্ড কষ্ট পান, কান্নাকাটি করেন। সেই মা এখন তার সাথে বসে মুফতী মেনক প্রমুখের লেকচার শুনেন। বলেন, ইসলামের ব্যাপারে একটি বিষয় কি জানিস? It really makes sense!

বাবা প্রচণ্ড রেগে যান। জানিস না ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম? আইসিসে যোগ দিলি নাকি? এক পর্যায়ে যুক্তি-তর্কে চুপ হয়ে যান, বলেন, আচ্ছা তোর যা ভালো লাগে কর।

ভাই ইসলাম গ্রহণের পর জানতে পারেন তার সারা জীবনের উপার্জনের উপায় (ডেরিভেটিভসে ব্যবসা) প্রায় স্কলারের কাছেই হারাম বা সন্দেহজনক। তাই ছেড়ে দেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায়। ওয়াকফ নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে এ অঞ্চলে পাড়ি দিয়েছেন।

একসাথে যখন নামায পড়ি, দেখি, ভাই কত ভালবাসা নিয়ে নামায পড়ছেন! কত দীর্ঘ সময় নিয়ে সুন্নতগুলো আদায় করছেন! কত দীর্ঘ মুনাজাত করছেন! আর আমি!

প্রতিদিনই নানা প্রশ্ন থাকে তাঁর। ফিকহী পার্থক্যগুলোতে মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যান। তাঁর প্রথম উস্তায মালিকী। মালয়েশিয়ায় চলে ফিকহ শাফিয়ী। আর আমি অনুসরণ করি ফিকহ হানাফী। ভাইকে তার ফিকহেই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি, এমনভাবে যেন তিনি ফিকহী পার্থক্যগুলোর কারণ বুঝতে পারেন, বুঝেন যে সবগুলো মতের পেছনেই শক্ত দলীল রয়েছে, তবু ইবাদাতের ক্ষেত্রে একটি মেথডোলজি অনুসরণ করাই নিরাপদ ও শ্রেয়।

ভাইয়ের জীবন আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। তিনি তাঁর মায়ের মুসলিম হওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী, দোয়া করছেন, দোয়া চান সবার কাছে। আমরা দুয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁকে ও তাঁর বাবা-মাকে কবুল করে নেন। আমাদেরকেও যেন ইসলাম নামক অমূল্য নিয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করার তাওফীক দেন। আমীন।

ভাইয়ের ইসলামের পথে জার্নির আরো বিস্তারিত সাক্ষাতকার গ্রহণের ইচ্ছে আছে ইনশা’আল্লাহ। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক।