‘নিরাপদ সড়ক চাই’ – দাবীটা আমাদের সবার, আমাদের মৌলিক অধিকার। সহপাঠীদের মৃত্যুতে এ দাবী আদায়ে পথে নেমেছে আমাদের সন্তান ও ছোট ভাই-বোনেরা। গত কয়েকদিনে আমাদের চোখে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছে, সড়কে অনিয়ম ও দুর্নীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। তা ঠিক না করলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ কেবল ‘চাওয়া’-ই থেকে যাবে।
তাদের দাবী আদায়ের এই আন্দোলন চলাকালীনই আরো বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা হলো, মৃত্যু হলো। জনৈক ড্রাইভার সাহেবের ভিডিও দেখলাম, তিনি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন, কীভাবে গাড়ী চালানোর প্রশিক্ষণ না নিয়েও তিনি লাইসেন্স পেয়েছেন। জানিয়েছেন, কীভাবে এতদিন বাস চালিয়ে আসলেও লেনের মর্ম জানতেন না, বা সড়কের বিভিন্ন দাগের ব্যাপারে জানতেন না। এছাড়া পর্যাপ্ত রোড সাইন না থাকাসহ আরো কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন।
কাজেই এটা স্পষ্ট যে ব্যাপারটা চতুর্মুখী, এবং অনেকগুলো সংস্থার যৌথ কাজ এখানে প্রয়োজন, একই সাথে দীর্ঘমেয়াদীও বটে। কিন্তু দু:খজনকভাবে ব্যাপারটা সুন্দরভাবে হ্যান্ডেল করার পরিবর্তে তা ক্রমশ দাঙ্গায় রূপ নিচ্ছে, যা কারো নিকট কাম্য নয়। সব পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দাবী বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন আশ্বাস দেয়া হয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু গত কয়েক বছরের নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা জনগণের সবরকম আস্থা হারিয়েছে। বিশেষ করে কোমলমতি শিশু-কিশোররা – যারা বইয়ের পাতার নৈতিকতার চোখে পৃথিবীটাকে দেখতে চায়, দেশটাকে সাজাতে চায়, যাদের কাছে সত্য ও মিথ্যা তথা সাদা ও কালোর মাঝে তৃতীয় কিছু নেই – তারা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে।
দাবীর বাস্তবায়নের বিষয়গুলো দীর্ঘমেয়াদী হলেও একটি বিষয় তাৎক্ষণিক কার্যকর করে আস্থা অর্জন করা যেত – এখনো যেতে পারে। জনৈক মন্ত্রী একই সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এবং পরিবহন শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যা স্বার্থের সুস্পষ্ট সংঘাত, আইন বাস্তবায়নে বড় বাধা। মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দিলে ছোট ভাই-বোনরা আশ্বস্ত হতে পারত, আস্থা ফিরে পেত।
তা না করে উল্টো পেটোয়া বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে অবশিষ্ট আস্থাটুকুকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে। একাত্তরের চেতনা যারা সত্যিকার অর্থে লালন করেন, দেশকে ভালবাসেন নিজের চেয়েও বেশি, সেই শিশু-কিশোরদেরকে দমন করা হচ্ছে নির্মমভাবে।
এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজকে বয়ে চলতে হবে বহুদিন।