মালয়েশিয়া কনসাল্টেটিভ কাউন্সিল অফ ইসলামিক অর্গানাইজেশন (MAPIM) এর আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু

আজ মালয়েশিয়া কনসাল্টেটিভ কাউন্সিল অফ ইসলামিক অর্গানাইজেশন (MAPIM) এর সদস্য সচিব জনাব জুলহানিস এর একটি আলোচনায় বসার সুযোগ হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি ইতিহাস নির্ভর প্রামাণ্য বক্তব্য রাখেন। তার বক্তব্যের কয়েকটি সারমর্ম:

১. রোহিঙ্গারা প্রবাসী নয়, তারা শত শত বছর ধরে সেখানে স্থানীয়।

২. রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন হঠাৎ করে নয়, বরং তা সুপরিকল্পিত। ব্রিটিশদের চলে যাওয়ার পর থেকে গত প্রায় আশি বছরে ১৮টির বেশি মিলিটারি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তাদের উচ্ছেদ করতে। সর্বশেষ অভিযান শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে, যা ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ।

৩. গত বছর দুয়েক আগের অভিযানে তাদের তিন দিনে সময় দিয়ে মিলিটারি মাইকিং করে – সবাইকে গ্রাম ছাড়ার জন্য। কোথায় যাবে? – এর কোনো উত্তর তারা দেয় নি। তিন দিন পর এসে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে সরাসরি।

৪. গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে খালি করে তারা পুনরায় ঘর নির্মাণ করে। এরপর দরিদ্র রাখাইনবাসীদের সেখানে থাকতে দেয়। ঠিক যেমন ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ধীরে ধীরে উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদীদের বসতি গড়ে তোলে। একই মডেল।

৫. জনাব জুলহানিস বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১৮ বার আরাকানে সশরীরে গিয়েছেন। একবার তাকে সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তারও করা হয়। মূলত গ্রেপ্তারের মাধ্যমেই তিনি বেঁচে আসেন। বুদ্ধদের একটি এক্সট্রিম গ্রুপ তাকে ও তার টিমকে মেরে ফেলতে চায়। পরে প্রশাসন এসে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। দুই দিন পর সরাসরি মালয়েশিয়ার ফ্লাইটে উঠিয়ে দেয়।

৬. বুদ্ধদের এই গ্রুপটা এত এক্সট্রিম যে হেন কিছু নেই তারা করতে পারে না। চাকু আর শরীর কাটাকাটি তাদের জন্য স্বাভাবিক বিষয়।

৭. গ্রামবাসীদের দুটো অপশন দেয়া হয়। ক. গ্রাম ছাড়ো বা নির্যাতিত হও। খ. ইসলাম ত্যাগ করো – এর জন্য যথেষ্ট ক্যাম্পেইন করা হয়।

৮. ইসলাম যেসব মাধ্যমে শেখা হয় – ক. আল-কুরআন: তারা পুড়িয়ে ফেলে। খ. উলামা – তাদের বন্দী কিংবা মেরে ফেলা হয়। গ. মসজিদ: রোহিঙ্গাদের মসজিদগুলো মিলিটারি তালা মেরে দেয়, এমনকি অজুখানাগুলোও। তিনি নিজে কয়েকটি মসজিদের সরেজমিন ছবি দেখান ও তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেসব মসজিদে বাইরে মাটিতে মানুষ নামায আদায় করে।

৯. রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অন্যতম কারণ ক্ষমতা হারানোর ভয়। তারা মালয়েশিয়াকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করে – এক সময় মালয়েশিয়াতেও অমুসলিমরাই সংখ্যাগুরু ছিল। অথচ মুসলিমরা আজ ক্ষমতায়। মুসলিমরা যেখানে যায় সেখানে তারা আধিপত্য বিস্তার করে ফেলে – এ আশংকা তাদের।

১০. রোহিঙ্গাদের অনেকে চেষ্টা করে প্রথমত বাংলাদেশে ঢুকতে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ‘আমাদের নিজেদের মানুষই গরীব’ – এই অজুহাতে তাদের গ্রহণ করতে চায় না। তদুপরি বর্তমানে সর্বাধিক রোহিঙ্গা রিফিউজি বাংলাদেশেই।

১১. থাইল্যান্ডও একই অজুহাতে তাদের গ্রহণ করতে চায় না। তাদের কাছেও বেশ কিছু রোহিঙ্গা রিফিউজি রয়েছে। মালয়েশিয়াতেও অনেকে আশ্রয় নিচ্ছে।

১২. রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্পগুলোতে অনেক জায়গায় জাতিসংঘ বা বিভিন্ন এনজিও অস্থায়ী স্বাস্থ্য ক্যাম্প বসিয়েছে, কিন্তু ঔষধ অপ্রতুল। বিশেষ করে আরাকানের ভেতরে বাহির থেকে ঔষধ নেয়া যায় না। তিনি তা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন – একটি প্যানাডল (প্যারাসিটামল) ট্যাবলেট চার ভাগ করে এক ভাগ একজনকে দেয়া হয়। পরদিন রোগ না সারলে আবার আসলে পুনরায় আরো এক ভাগ দেয়া হয়।

১৩. মালয়েশিয়া সরকারীভাবে মায়ানমারকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে। সে সাথে তিনি মালয়েশিয়ার জনসাধারণের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান দেয়ার অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, গত জুমার দিন ক্যাম্পাস থেকে ছাত্ররা কিছু অনুদান সংগ্রহ করে MAPIM এর হাতে তুলে দেয়। যার ফলে তারা আজ তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে আসে।

MAPIM এর এফবি পেইজ: https://www.facebook.com/MapimOfficial/
MAPIM এর ওয়েবসাইট: http://www.mapim2u.com/