মালয়েশিয়ায় যাকাত ব্যবস্থাপনা – শেখার আছে অনেক কিছু

ইসলামের প্রথম যুগে যাকাত ব্যবস্থাপনায় বাইতুল মাল বা রাষ্ট্রীয় কোষাগার কাজ করেছে। বাইতুল মালের ভিন্ন ইউনিট যাকাত সংগ্রহ ও সঠিক খাতে ব্যয়ে নিয়োজিত ছিল। যুগে যুগে বিভিন্ন মুসলিম শাসনামলেও প্রাতিষ্ঠানিক এ ব্যবস্থাপনা অটুট ছিল। গত কয়েক শত বছরে উপনিবেশবাদের সময় যাকাত ও ওয়াকফের এ ব্যবস্থাপনা হারিয়ে যায়। সম্প্রতি গত কয়েক দশকে বিভিন্ন মুসলিম দেশে তা চালু হলেও আস্থা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে সেগুলো ততটা জনপ্রিয়তা পায় নি। যাকাত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ ও সঠিকভাবে ব্যয়ের ক্ষেত্রে যেসব দেশ এগিয়ে রয়েছে, মালয়েশিয়া সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

গত ৯ই আগস্ট ২০১৬ International Institute of Advanced Islamic Studies কর্তৃক আয়োজিত ‘Accountability and Transparency of Zakat Institutions’ বা ‘যাকাত প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেমিনারের উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য সংক্ষেপে শেয়ার করছি:

◽১. যাকাত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা দুই স্তরের। প্রাথমিক স্তরে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে যাকাত প্রদানকারী ও যাকাত গ্রহীতাদের কাছে। কাজেই জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অত্যন্ত জরুরী।

◽২. মালয়েশিয়াতে বিভিন্ন স্টেটে সাধারণত সরকারের অধীনে ‘বাইতুল মাল’ যাকাত সংগ্রহ ও বণ্টন করে থাকে।

◽৩. ১৯৯১ এ মালয়েশিয়ায় অফিসিয়ালি যাকাত সংগ্রহ হয় প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। সেখান থেকে ২০১০ এ তা দাঁড়ায় ১.৪ বিলিয়ন রিঙ্গিতে, এবং ২০১৫ এ দুই বিলিয়ন রিঙ্গিতে (প্রায় চার হাজার কোটি টাকা)।

◽৪. যাকাত সংগ্রহের এ মাইলফলক ছুঁতে যেসব বিষয় কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে:

ক. যাকাত আদায়ে সচেতনতা সৃষ্টি: ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার পাশাপাশি সোশাল মিডিয়ায় সচেতনতা তৈরির জন্য স্বতন্ত্র সেল রয়েছে। সেলাঙ্গর যাকাত ইন্সটিটিউশনের অধীনে দশ জনের সোশাল মিডিয়া টিম রয়েছে, যারা কেবল সোশাল মিডিয়ায় (ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি) পোস্ট দেন, প্রশ্নের উত্তর দেন ইত্যাদি।

খ. কর্মজীবীদের আয় থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাকাত কর্তনের ব্যবস্থা: মালয়েশিয়ায় কোনো কর্মজীবী চাইলে তার মাসিক বেতন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাকাত কর্তনের অনুমোদন দিতে পারেন। ফলে যাকাত আদায়ের ব্যাপারটা সহজ হয়ে যায় এবং অনেকে যাকাত দিতে উদ্বুদ্ধ হয়।

গ. ট্যাক্স রিবেট/ ছাড়: যাকাত হিসেবে প্রদত্ত টাকা ট্যাক্স থেকে ছাড় পাওয়া যায়, অর্থাৎ সে পরিমাণ টাকা প্রদেয় ট্যাক্স থেকে কর্তন করা যায়। ফলে তা যাকাত আদায়ে উৎসাহিত করে।

ঘ. যাকাত ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ: অডিট, বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ, সঠিক উপায়ে দ্রুত বণ্টন ইত্যাদির মাধ্যমে যাকাত ব্যবস্থাপনায় পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করে যাকাত প্রদানকারীদের আস্থা অর্জন করা হয়।

ঙ. আধুনিকায়ন: মোবাইল এ্যাপ, ওয়েবসাইট ও অনলাইন ব্যাংকিংসহ নানা মাধ্যমে যাকাত আদায়ের সুযোগ আছে। তাছাড়া সেলাঙ্গর যাকাত ইন্সটিটিউশন যাকাতের জন্য ভিন্ন CRM বা Customer Relationship Manager সফটওয়্যার তৈরি করেছে। ফলে যাকাত কবে দেয়া হয়েছে, কত বাকী ইত্যাদি জানার জন্য আর কাউন্টারে সশরীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং অনলাইনেই সব দেখা সম্ভব।

◽৫. তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে যাকাত বণ্টন ব্যবস্থা সমুন্নতকরণে যা যা জরুরী:

ক. সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাকাত ফান্ডের বণ্টন নিশ্চিতকরণ।
খ. যোগ্য যাকাত গ্রহীতা সনাক্তকরণ।
গ. যাকাত ফান্ডের সঠিকভাবে বণ্টন সুনিশ্চিতকরণ।
ঘ. যাকাত ফান্ডের কার্যকরভাবে ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।

◽৬. যাকাত ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড/ নীতিমালা প্রণয়নে এখন পর্যন্ত যেসব কাজ হয়েছে:

ক. Proposed Core Principles for Effective Zakat Supervision – IRTI ও BAZNAS কর্তৃক প্রস্তাবিত। লিংক: http://goo.gl/yyT5VO

খ. International Standard for Zakat Management – World Zakat Forum

==

সেমিনারের প্রেজেন্টেশনসমূহ:

১. প্রফেসর ড. আব্দুল হালীম মুহাম্মাদ নূর: http://goo.gl/QsV6Ld
২. তুয়ান হাজী হুসাইন বিন মুহাম্মাদ আলী: http://goo.gl/z8dnQu

এছাড়া মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় যাকাত ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠান: লেমবাগা যাকাত সেলাঙ্গর: http://www.zakatselangor.com.my/ (মালয় ভাষায়)