সামাজিক ভারসাম্য ধ্বংসের পথে..

গতকাল থেকে বিভিন্ন পোস্ট নজরে আসছে, যেখানে একাধিক বোন জনসম্মুখে নির্যাতিতা হওয়ার কথা জানিয়েছেন। ঘটনাগুলো ঘটেছে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের মিছিল বা জনসমষ্টি থেকে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই নিন্দার সব ঝড় তাদের দিকে যাচ্ছে।

বস্তুত, আমাদের দৃষ্টি ভাসাভাসা হয়ে গেছে, গভীর পর্যবেক্ষণের অভাব থেকে যাচ্ছে। আমাদের চোখের সামনেই আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে এখন নিরাপদ বোধ করেন এমন একজন বোন খুঁজে পাওয়া কঠিন। স্কুলের কিশোর বয়স থেকে শুরু হয় অশ্লীলতা চর্চা ও মাদক সেবন। হাতে হাতে স্মার্টফোন ও অনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট অশ্লীলতার প্রসার সহজ করে দিয়েছে।

দু:খজনক হলেও সত্য, প্রতিটা কিশোর-যুবক এখন দুটো লোলুপ দৃষ্টি ধারণ করছে, সুযোগ বা ক্ষমতা পেলেই যেগুলো হায়েনায় রূপ নিচ্ছে। শিশু-কিশোরী-যুবতী কেউই নিরাপদ নয় তাদের কাছ থেকে।

মানুষের ভেতরের ইথিকস বা নৈতিকতা এখন শূন্যের কোঠায়, নেই খোদার ভয়। আখিরাতের বিচার থেকে মুক্ত থাকার চিন্তা সহজ করে দিচ্ছে মুক্তচিন্তা। কাজেই নিজ গুনে ভালো থাকার সুযোগ নেই বললেই চলে। আর আইনের কাছ থেকে বিচার পাবার আশা হাস্যকর ঠেকছে। কোনো ক্রাইম ঘটলে প্রথমে দলীয় পরিচয় প্রাধান্য পাচ্ছে, এরপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান – মাদ্রাসা না সাধারণ, এরপর চেতনা ইত্যাদি। ফলে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ – উভয়ের অনুপস্থিতিতে শয়তান স্বাধীনভাবে কাজ চালানোর সুযোগ পাচ্ছে।

আমরা ভুলে যাচ্ছি, দিন শেষে আমরা প্রত্যেকে ভিকটিম। আমাদের প্রত্যেকের মা-বোন-স্ত্রী-কন্যার নিরাপত্তা হুমকিতে। এখানে কোনো দল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-চেতনা ইত্যাদির বালাই নেই। ভিকটিমকে কখনো জিজ্ঞাসা করা হবে না সে কোন দলের, কোন প্রতিষ্ঠানের বা কোন চেতনার।

এ সমস্যা আমাদের সবার, কাজেই মোকাবিলা করতে হবে সবাইকে মিলে। আজ যারা মুক্তচিন্তার বার্তা নিয়ে আসছেন, তারা সমাজকে বিকল্প কোনো ইথিকাল ভ্যালু দিন, সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখুন। কোনো ঐশী ধর্মের বাইরে গিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট ইথিক্যাল ভ্যালু কি দেয়া সম্ভব? মানবরচিত ইথিকস শত বছর আগে যে সমকামিতাকে ঘৃণা করেছে, আজ তার পক্ষে রাস্তায় নামছে। শত বছর আগে যেসব বিষয় কল্পনাও করতে পারে নি, আজ সবই দেদারে করছে। মুক্তচিন্তা তাদেরকে মুক্তকর্মের স্বাধীনতা এনে দিচ্ছে, যার ভিকটিম আপনি, আপনার পরিবার, আপনার মা-বোন-স্ত্রী-কন্যা।

প্রিয় ভাই-বোন, চোখটা বন্ধ করে ভাবুন, নিজেকে প্রশ্ন করুন, এ সমাজকে আপনি কী দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি যেদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, সেদিন নিজের এই কৃতকর্মে আপনার গর্ব হবে তো?