সিরিয়ান এক ভাইয়ের দিনকাল

এক ভাইয়ের সাথে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়, কথা হয়। খুব হাসি-খুশি। সিরিয়ায় বাড়ি। প্রায়ই সিরিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করি। আলেপ্পো থাকেই আলোচনায়। ইতোপূর্বে তিনি দুবাই ছিলেন, ভালো আয় করতেন। ভালো জায়গায় থাকেন, ভালো স্কুলে পড়ে ছেলেটা। দেখে খুব সুখী মনে হয় মাশা’আল্লাহ।

একদিন তাকে দেখি নি। পর দিন জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারলাম, তিনি জাতিসংঘের কার্ড রিনিউ করতে গিয়েছিলেন। সেদিন আর বেশি কিছু জানতে চাই নি। পরে অন্য এক দিন জিজ্ঞাসা করলাম, জাতিসংঘের কার্ড কেন? বললেন, সিরিয়ান তো, যুদ্ধ হচ্ছে, তাই এমনটা লাগে। ‘ওহ আচ্ছা!’ – আর বেশি জানতে চাই নি।

বেশ কয়েকদিন পর আবারো কথা উঠল, জাতিসংঘের কার্ডটা কী কাজের তা জানতে চাইলাম। যা জানলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ভাইটি মূলত ফিলিস্তিনী। ১৯৪৮ এ তাঁর বাবা ইসরাইলের হামলার সময় সিরিয়ায় চলে আসেন। তখন থেকে তারা প্যালেস্টিনিয়ান সিরিয়ান। সিরিয়াই তাদের দেশ। কিন্তু সিরিয়া সরকার তাদের নাগরিকত্ব দেয় নি, পাসপোর্ট দেয় নি। কেবল একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে, যা দিয়ে প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশে যাওয়া যায় ঠিক, তবে বেশ ভোগান্তি। নাগরিক সুবিধাও খুব সীমিত।

ভাইয়ের ভাষায়, মধ্য প্রাচ্য সমস্যা মেটানোর ইচ্ছে সিরিয়ার ছিল না। তাই বছরের পর বছর তাদের এভাবে ভিনদেশী করেই রাখা হয়। এখনো যে তিনি দুবাই ছিলেন, বা এখানে আছেন, তা জাতিসংঘের বিশেষ ব্যবস্থায়। বছর কয়েক পর হয়ত যেতে হবে অন্য কোনো দেশে। যেখানে থাকেন সেখানেও অনেক সীমাবদ্ধ সুবিধা ভোগ করেন তারা।

তাঁর কথা শুনে অনুভব করার চেষ্টা করলাম, কত বছর ধরে তাঁর পরিবার-বাবা-মা শরণার্থী হয়ে থেকেছেন, কত যুদ্ধ দেখেছেন, কত জীবনযুদ্ধ করেছেন! তবু আজ তাঁর কোনো দেশ নেই, ফিরে যাওয়ার মতো কোনো ঠিকানা নেই। আমাদের দেশ আছে, একটি দেশের নাগরিকত্ব আছে, একটি দেশের পাসপোর্ট আছে, একটি ঠিকানা আছে। মুক্ত হয়ে চলাফেরা করতে পারি। রবের আর কত নেয়ামত ভোগ করলে আমরা তৃপ্ত হবো! ওয়া লিল্লাহিল হামদ।