কুয়ালা লামপুরে অনুষ্ঠিত ২য় এডভান্সড ফিকহী ইন্টার‍্যাক্টিভ ফোরাম

গত ৯ এপ্রিল ’১৫ কুয়ালা লামপুরের লানাই কিজাং, ব্যাংক নেগারায় অনুষ্ঠিত হলো ২য় এডভান্সড ফিকহী ইন্টার‍্যাক্টিভ ফোরাম। এতে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টরের দুজন নেতৃত্বদানকারী আলিমে দ্বীন – শায়খ ড. আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহ ও শায়খ নিযাম ইয়াকুবী। আরো ছিলেন ড. ইউসুফ তালাল দেলোরানযো। মাত্র দুই ঘণ্টার এই ফোরামের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরতে চাচ্ছি।

ড. ইউসুফ তালাল দেলোরানযো তার বক্তব্যে আমেরিকার ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমেরিকার অনেক স্টেটে শারিয়াহ শব্দটাই ব্যান্ড। এখন পর্যন্ত কোনো ইসলামী ব্যাংক এখানে হয়ে উঠে নি।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শারিয়াহ সম্মত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে।

গত ২-৩ বছরের বড় বড় সুদী ব্যাংকগুলোর নিউজ ঘাঁটলে দেখা যাবে প্রায় সব বড় নামের ব্যাংকগুলোই শত শত মিলিয়ন ডলারের ফ্রড ও ধোঁকাবাজির কেইসে জড়িয়েছে। এরপরও মানুষ একটি বিশ্বাস নিয়ে তাদের পেছনে যাচ্ছে। কাজেই, আমাদের কেবল কাজ করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

==

ড. আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহ তার বক্তব্যে বলেন, সুদী ব্যাংকগুলোর চুক্তি একটিই, লেন-দেন উভয় ক্ষেত্রেই, তা হলো সুদ। আর ইসলামী ব্যাংকগুলোকে নানা প্রকার চুক্তি করতে হয়। বর্তমান ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য দুটো বিষয় জরুরী। ১. বিশ্বব্যাপী ফিকহী মজলিসগুলোর সিদ্ধান্ত। ২. শরয়ী স্ট্যান্ডার্ডসমূহ। কারণ প্রতিনিয়ত শরীয়াহর আলোকে ব্যাংকের নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা ও সিদ্ধান্ত হচ্ছে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি এওফির সম্প্রতি কাজ করা ও চলমান কিছু শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলেন। তিনি জানান সম্প্রতি ছয়টি স্ট্যান্ডার্ডের কাজ শেষ হয়েছে। ওয়াদ ও মুওয়া’আদাহ , ই’য়াদাতুশ শিরা, মুযারা’আ, এস.ভি.পি ও উরবুন (আরেকটি তিনি মনে করতে পারেন নি)।

আরো দুটো স্ট্যান্ডার্ডের কাজ চলছে: হ্বাক্কুল ইন্তিফা’ আলাল আ’কার এবং উমুলাত।

==

শায়খ নিযাম ইয়াকুবী বলেন,

১. কথার পাশাপাশি কাজ প্রয়োজন। অনেক দেশই এখন ইসলামিক ফাইন্যান্সের কেন্দ্র হতে চায়, অথচ কাজ নেই। এমন কাজ প্রয়োজন যা ইসলামিক ইথিকস ও ম্যানারসকে প্রতিফলিত করে। সময়মত নামায, হিজাব ইত্যাদি যথাযথভাবে চর্চা করতে হবে। যেন সত্যিকার ইসলাম বাস্তবায়ন হয়।

২. ইসলামিক ফাইন্যান্সের ডিমান্ড সবসময়ই বড়, মুমিন মাত্রই সুদহীন ব্যাংকিং চাইবে। কাজেই এর গ্রোথ বাড়তেই থাকবে।

– চায়নায় ত্রিশ কোটি মুসলিম আছে। (অফিশিয়ালি মাত্র আড়াই কোটির কথা বলা হয়)। শায়খ বলেন, আমার একজন বন্ধু ছিল, সাউদীতে চায়নার সাবেক এম্বাসেডর, যিনি কায়রো ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন। তো, আমাদের এক পারিবারিক মজলিসে তাকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। কথাবার্তার এক ফাঁকে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, চায়না মুসলিমদের সংখ্যা কত? তিনি বলেন, ২ কোটি (২০ মিলিয়ন)। আমি বললাম, আমি জানি, সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তিনি বললেন, কীভাবে জানো? আচ্ছা ঠিক আছে, ৪ কোটি (৪০ মিলিয়ন)। আমি বললাম, দুই মিনিটের কথাতেই তুমি দুই কোটি বাড়ালে, বুঝা গেলে আরো কথা হলে এবং চাপ দিলে তুমি সংখ্যা আরো বাড়াতে বাধ্য হবে।

শায়খ বলেন, আমার এক বন্ধু চায়নার মুসলিমদের নিয়ে গবেষণা করেছেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরেছেন, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এরপর বই লিখেছেন المسلمون في الصين। সেখানে তিনি ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) -র কথা উল্লেখ করেছেন। আমি বলব, বর্তমান সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা প্রকাশ করে না।

ইন্ডিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি)।

রাশিয়ায় ২০ মিলিয়ন+ (২ কোটি)। এবং সম্প্রতি রাশিয়ার পার্লামেন্টে ইসলামি ফাইন্যান্স ল’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কাজেই ইসলামিক ফাইন্যান্সের চাহিদা ও গ্রোথ বাড়তেই থাকবে। আমাদের শরীয়াহ পরিপালনে বেশি মনোযোগী হতে হবে।

৩. (ড. ইউসুফ তালালের বক্তব্যে আমেরিকায় শারিয়াহ ব্যান প্রসঙ্গে:) The rise of colleges বইয়ে লেখক উল্লেখ করেন, বর্তমানে যেসব ব্যাচেলর্স ও পি.এইচ.ডি – এসবরে গোঁড়া স্পেনের علم الإجازة। খ্রিস্টানরা স্পেনে এসে পড়াশোনা করত।

পূর্বোক্ত বইয়ের লেখকের ছেলে লিখেন The origins of common law – সেখানে তিনি দেখান যে, কমন ল’ এর অনেক ক্ষেত্রেই শরীয়াহ ল’ হলো প্রেসেডেন্ট। এ ক্ষেত্রে রোমান ল’ বা অন্য কোনো ল’ এর পূর্ব অনুলিপি পাওয়া যায় না।

১২ জন জুরী মেম্বারের সিস্টেমটা এসেছে ফিকহ মালিকীর لفيف প্রসঙ্গ থেকে। যেখানে বলা হয়েছে, যখন কোনো সাক্ষী থাকবে না, তখন ১২ জন মিলে সিদ্ধান্ত দিবে।

ট্রাস্ট ল’ -এর অরিজিন হলো ওয়াকফ। একজন নারী তার পি.এই.ডিতে তা প্রমাণ করেছেন।
কাজেই শারিয়াহ সত্যিই ব্যান করতে চাইলে তাদের পুরো সিস্টেম ভেঙে পড়বে।

৪. ইসলামিক উইন্ডোযুক্ত কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে শরীয়াহ পরিপালনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। কারণ যেসব শেয়ারহোল্ডার তাতে ইনভেস্ট করেছে, তারা এক প্রকার হারামে ইনভেস্ট করার ব্যাপারে কম্প্রোমাইজ করেই নিয়েছে (কারণ তারা জানে তাদের ইনভেস্টমেন্ট হারাম ও হালাল উভয় ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ হবে।) কাজেই রেগুলেটরদেরকে এসব বিষয়ে আরো কঠোর হতে হবে।

==

প্রয়োজনীয় লিংকসমূহ:

ড. আব্দুস সাত্তার আবু গুদ্দাহর প্রোফাইল:http://www.bloomberg.com/research/stocks/people/person.asp…
শায়খ নিযাম ইয়াকুবীর প্রোফাইল: http://www.sukuk.com/whos-who/sheikh-nizam-yaquby-615/
ড. ইউসুফ তালাল দেলোরানযোর প্রোফাইল: http://theamericanmuslim.org/…/art…/delorenzo_dr_yusuf_talal
এওফি: www.aaoifi.com
المسلمون في الصين: http://books.google.com.my/books?id=63vAngEACAAJ&
The Rise of Colleges: Institutions of Learning in Islam and the West:https://books.google.com.my/books?id=rZOwngEACAAJ&dq