সুনির্দিষ্ট ফিকহ অবলম্বনকারী ও অনির্দিষ্ট ফিকহ অবলম্বনকারী ভাইদের মাঝে দূরত্ব

আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট ফিকহ অবলম্বনকারী ও অনির্দিষ্ট ফিকহ অবলম্বনকারী ভাইদের মাঝে দূরত্ব বেড়েই চলছে। উভয় দিকে এক্সট্রিমনেস চূড়ান্ত পর্যায়ের। কারা আগে শুরু করেছে আর কারা পরে, সে দিকে যাচ্ছি না। বিষয়টা ডিম আগে না মুরগী আগে -এর মতোই অনর্থক বিষয়।

এই ফিতনাহর ভয়াবহতার পরিণতি সমাজ ভোগ করতে শুরু করেছে। আগে তা একে অপরের ঈমান-আকীদা নিয়ে দোষারোপ করা বা যুগশ্রেষ্ঠ মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামকে দোষারোপ করার মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। পরে তা রূপ নেয় তাকফীরে, মসজিদ আলাদা করা বা একে অপরকে মুশরিক আখ্যা দেয়ায়। সে পর্যন্তও হয়ত তা শাব্দিক ছিল। এখন এর সামাজিক ফলাফলও নজরে আসছে, বিয়ে হওয়ার পর বিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং মুশরিকের সন্তান বলে জোরপূর্বক গর্ভের বাচ্চাকে এবোরশন করানো হয়েছে বলে একটি পোস্টে পড়লাম, ভয়াবহরকম দু:খজনক। এই ফিতনাহর আরো করুণ পরিণতি সবার জানা।

এই ট্রেন্ড চলতে থাকলে সামনে আলাদা গ্রাম, আলাদা ব্যবসা ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু হতে পারে। نعوذ بالله من ذلك

রাফয়ুল ইয়াদাইন, জাহর-বিত-তামীন ইত্যাদি মাসায়েলগুলো ইখতিলাফী বলেই সালাফ ও খালাফের উলামায়ে কিরাম মেনে নিয়েছেন, কারণ ইখতিলাফের গোঁড়া রাসূল স. পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। প্রত্যেকের যার যার জায়গায় শক্ত গ্রাউন্ড আছে, যেগুলোকে চূড়ান্তভাবে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যদি বলেন, আমীন জোরে না বললে বা রাফয়ুল ইয়াদাইন না করলে নামায হবে না, তাহলে সাহাবায়ে কিরাম থেকে শুরু করে উম্মতের একটি বড় অংশের নামায হবে না বলতে হবে। একই অবস্থা উল্টোটা বললে।

এসব বিষয় নিয়ে এখনো পড়ে থাকা উম্মতের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। আমাদের সামনে এখন হাজারো সমস্যা অমীমাংসিত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রয়োজন সম্মিলিত গবেষণার, ইলমকে সেদিকে কাজে লাগানোর।

ওদিকে বর্তমান কলেজ-ভার্সিটির ভাই-বোন মূল আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়েই বিশ্বাস -অবিশ্বাসের দোলাচলে আছে। সীমান্ত ঘেঁষা ও দুর্গম এলাকাগুলোতে মুসলিমরা প্রতিনিয়তই অমুসলিম হয়ে যাচ্ছে।

যারা সব কিছুর পরও সামান্য ঈমান নিয়ে টিকে আছে, তাদের সমস্যা আরো বেশি। অনেকে এখন মসজিদে যেতে ভয় পান। আমীন জোরে বললে এক পক্ষ বকবেন, আস্তে বললে অন্য পক্ষ। তার চেয়ে ঘরেই নিরাপদ। আফসোস!

এ বিষয়টার একমাত্র সমাধান আসতে পারে উভয়পক্ষের উলামায়ে কিরামের একসঙ্গে বসার মাধ্যমে। শ্রদ্ধেয় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব প্রায় বছর দুয়েক আগে মিরপুর দারুস সালামে একবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সবার একসঙ্গে বসার, যেখানে মুফতী আব্দুল মালেক সাহেব হা. কেও দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। হুজুরের অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে এসেছিলেন মুফতি জাকারিয়া আব্দুল্লাহ ভাই হা.। সেখানে আরো এসেছিলেন ড. আবু বকর জাকারিয়া সাহেবসহ মিডিয়ার অনেকেই।

উভয় পক্ষের আলোচনা থেকেই বর্তমান অবস্থার ভয়াবহতা উঠে আসে এবং এটা যে আমাদের এককেন্দ্রিক পড়াশোনার ফসল – তা উঠে আসে। সবমিলিয়ে একটি সম্মিলিত গাইডলাইন প্রণয়ন করার প্রস্তাবনা উঠে আসে, যেখানে উভয় পক্ষ সম্মত থাকবে যে, মিডিয়া/ খুতবা বা আম মাহফিলে উভয় পক্ষ মাসায়েলগুলোকে এভাবে এভাবে উপস্থাপন করবে। উদাহরণস্বরূপ, রাফয়ুল ইয়াদাইন করেন এমন আলেম মাসয়ালাটি বলার সময় বলে দিবেন যে, রাফয়ুল ইয়াদাইন না করার ব্যাপারেও শক্ত দলীল আছে এবং সাহাবায়ে কিরাম থেকে নিয়ে উম্মতের একটি বড় অংশ সেভাবে আমল করে আসছেন।

আমাদের আশা ছিল সে বৈঠকটি আরো চলবে, কিন্তু সে সময় দেশের পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় আর চালানো যায় নি। জানি না বর্তমানে কী অবস্থা, তবে ধরে নিচ্ছি দেশের পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ায় হয়ত এখনো স্থগিত আছে।

এ বিষয়টা নিয়ে প্রায়ই ভাবি, এবং হতাশা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আল্লাহ তায়ালা ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব হা. কে নেক হায়াত দান করুন। তিনিই হয়ত বর্তমানে একজন, যিনি ডাকলে উভয় দিকের শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কিরাম আসবেন। আশা করি তাঁর উদ্যোগে আবারো উলামায়ে কিরামের আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এবং সবাই মিলে উম্মতকে জাহান্নামের কিনারা থেকে উদ্ধার করার ব্যাপারে সম্মত হবেন। والله المستعان