ডক্টর মুফতী যুবায়ের আশরাফ উসমানী সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে মুফতী তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহর সুযোগ্য উত্তরসূরি ডক্টর মুফতী যুবায়ের আশরাফ উসমানী সাহেব হাফিজাহুল্লাহর (মুফতী রাফী উসমানী হাফিজাহুল্লাহর ছেলে) সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হলো। মুফতী তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহর নাম আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন নেই। আধুনিক ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের পাইওনিয়ার তিনি, এ বছর ইসলামিক ফাইন্যান্সের ওপর আইডিবি এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। পারফেক্ট গ্রুপের সৌজন্যে আয়োজিত এই ঘরোয়া সাক্ষাতে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক শায়খের সাথে আলাপ হলো। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এল:

১. মুদারাবা-মুশারাকার কোম্পানির ক্ষেত্রে শরীয়াহর বিষয়গুলোর পাশাপাশি ব্যবসায়িক বিষয়াবলীতেও অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিৎ। কোম্পানি লাভ করলে পাবলিক মারহাবা বলবে, তবে লস হলেই সাথে সাথে আক্রমণ শুরু করবে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আলেমদের। পাকিস্তানে অনেক মুফতী এখনও জেলে, এবং মুফতী’স-মুদারাবা নিয়ে নিয়মিত পত্রিকায় রিপোর্ট হয়।

২. তিনি এমসিবি ব্যাংকের পাশাপাশি সিতারা সিরামিক্সের শরীয়াহ বোর্ডে আছেন। সেখানকার বেশ কয়েকটি মুশারাকা ও অন্যান্য প্রোডাক্ট ডেভেলপ করেছেন। সাথে এডমিনিস্ট্রেশন, এইচআর ইত্যাদি বিষয়ক ম্যানুয়াল, লিগাল ডকুমেন্ট ইত্যাদিও প্রস্তুত করেছেন। প্রয়োজনে সিতারার ডকুমেন্টগুলো তাদের কাছে ই-মেইল করে পাওয়া যেতে পারে।

৩. ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আলেমদের নেতৃত্ব দিতে হবে। পাকিস্তানে প্রতিটি ইসলামী ব্যাংকে/ উইন্ডোতে শরীয়াহ স্কলার নিয়মিত অফিস করেন (শরীয়াহ মুরাক্বিব নন, শরীয়াহ এ্যাডভাইজার)। তাঁকে সব ব্রাঞ্চে দৌড়াতে হয়, কাগজপত্র ও গোডাউন ইন্সপেকশনে যেতে হয়। মুফতী সাহেব নিজেও প্রতিদিন বেলা তিনটা পর্যন্ত দারুল উলূম করাচীতে সময় দেয়ার পর দিনের বাকী সময় বিভিন্ন শরীয়াহ বোর্ডে সময় দেন।

৪. আলেমদের এসব সেক্টরে আসার ক্ষেত্রে মূল বাধা ইংরেজি। ইংরেজি জানা না থাকলে এসব সেক্টরে কাজ করা সম্ভব নয়। কাউকে দিয়ে অনুবাদ করিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। এখানে অনেক স্টেজের কাজ আছে: প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট প্রসেস, রিভিউ, লয়ারদের সাথে কাজ করা (এক্ষেত্রে তো ইংরেজি লাগবেই, ইংরেজি ছাড়া ল’-এর অনেক টার্ম বুঝা সম্ভবই না), এরপর প্রোডাক্ট এগ্রিমেন্ট পেপার, গ্রাহক ম্যানুয়াল, আবার স্টাফদের জন্য ট্রেনিং ম্যানুয়াল প্রস্তুত করা ইত্যাদি। সব জায়গায় অনুবাদ করে করে কাজ করাতে গেলে অসম্ভব হয়ে পড়বে।

(এ পর্যায়ে আমি বলি, হযরত, আপনার কাছে ব্যক্তিগত অনুরোধ, দয়া করে আপনি যেসব মাদ্রাসায় দাওয়াতে যাচ্ছেন, মুহতামিম সাহেবদেরকে বলবেন। তিনি বলেন, আজই অমুক মাদ্রাসায় – ঢাকার অত্যন্ত বড় একটি প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা – গেলাম। মুহতামিম সাহেবকে বললাম, আপনারা ইংরেজি পড়ান না কেন? এতটুকু বলে হযরত চুপ। আমি বললাম, উত্তর কী পেলেন? হযরত কেবল মুচকি হাসলেন।

আরেক মাদ্রাসার কথা বললেন, ইংরেজির কথা বলতেই উত্তর এসেছে, আমাদের দরকার নেই, আমরা ছয় মাসেই ইংরেজি শিখতে পারি।

সবমিলিয়ে এ বিষয়ে হযরতের চোখেমুখে বাংলাদেশী আলেমদের ব্যাপারে হতাশা সুস্পষ্ট। তিনি দারুল উলূম করাচীর কথা বললেন। সেখানে প্রথম জামাত – নাহবেমীর – এ ভর্তি হওয়ার জন্য ম্যাট্রিক পাশ থাকা রিকয়েরমেন্ট। এরপর দাওরা করতে করতেই অনেকে প্রাইভেটে বিবিএ-এমবিএ শেষ করে ফেলে। এরপর ফতোয়া বিভাগে ভর্তির জন্য তো ইংরেজি পড়া-লেখা-বলা জানা অবশ্যম্ভাবী। কারণ দারুল উলূমে প্রতিনিয়ত বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রশ্ন আসে। এসবের উত্তর তো অনুবাদ করে করে দেয়া সম্ভব না।)

৫. বাংলাদেশের আলেমরা ইসলামী ব্যাংকিং থেকে দূরে কেন – এ প্রসঙ্গে আমি বললাম, এখানে প্রথম ইসলামী ব্যাংকটি অমুক দলের সদস্যদের দ্বারা ডমিনেটেড। তাই কোনো আলেম ইসলামী ব্যাংকগুলোতে যোগ দিতে চাইলে তার ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা করা হয়। তিনি বললেন, আরে আমাদের এখানেও তো সেই দলের অনেক কর্মচারী কাজ করছে (তো কী হয়েছে?), তবে নেতৃত্ব আলেমদের। আলেমরা না আসলে তো অন্যরা নেতৃত্ব দিবেই।

এ পর্যায়ে আমি আবারো বলি, হযরত আপনি যেসব জায়গায় দাওয়াতে যাচ্ছেন, সেসব জায়গায় আলেমদেরকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের গুরুত্বের কথা বললে ভালো হত। তিনি বলেন, আসলে কাউকে কিছু বলার নেই, আমরা কাউকে কিছু বলি নি। নিজেরা দারুল উলূমে কাজ করছি, এরপর সেন্টার ফর ইসলামিক ইকনমিক্স শুরু করেছি, আলহামদুলিল্লাহ কাজ চলছে। (কাউকে বলার চেয়ে নিজেরা কাজ শুরু করে দেয়া উচিৎ।)

এছাড়া মালয়েশিয়ার কিছু প্র্যাকটিস ও কিছু টুকটাক প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। এবং সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি তা হলো, হযরত থেকে অনুমতি নিয়ে নেই যেন যে কোনো প্রসঙ্গ আসলে ইমেইলে যোগাযোগ করতে পারি, এবং তিনি সহাস্যে অনুমতি দেন। ওয়া লিল্লাহিল হামদ।

লিংকসমূহ:

সেন্টার ফর ইসলামিক ইকনমিক্স: http://www.cie.com.pk/
দারুল উলূম করাচী: http://www.darululoomkarachi.edu.pk/
সিতারা কেমিক্যালস: http://www.sitara.com.pk/
এমসিবি ব্যাংক: http://www.mcb.com.pk/