লন্ডনে ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরামের নবম আন্তর্জাতিক কনফারেন্স – ইউরোপে ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রবেশ

গত ২৯-৩১ অক্টোবর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরামের নবম আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। এই প্রথম মুসলিম বিশ্বের বাইরে ইউরোপে এটি অনুষ্ঠিত হলো। উপস্থিত বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের সম্মানিত প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামীদ সাহেব।

ফোরামে ব্রিটেনের প্রাইম মিনিস্টার ক্যামেরন তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, আমি চাই দুবাই ও কুয়ালা লাম্পুরের পাশাপাশি লন্ডন হোক ইসলামিক ফাইন্যান্সের অন্যতম রাজধানী। তিনি বলেন, আমরা লন্ডনকে ইসলামিক ফাইন্যান্সের আরো উপযোগী করার জন্য বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। পশ্চিমা বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় ইসলামিক ফাইন্যান্সের নীতিমালা অনুসারী ব্যাংক আমাদের বেশি রয়েছে।

আমাদের ২৫ টি ল’ ফার্ম রয়েছে, যারা ইসলামিক ফাইন্যান্স সার্ভিস দিচ্ছে। ১৬টি ইউনিভার্সিটি বা বিজনেস স্কুল রয়েছে, যারা ইসলামিক ফাইন্যান্স বা সমমানের বিষয়ের ওপর MBA করার সুবিধা দিচ্ছে। সর্বশেষ ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি গত সপ্তাহে সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের জন্য প্রোগ্রাম চালু করেছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও ইসলামিক ফাইন্যান্সের ওপর এত গভীর ও পরিব্যাপ্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ নেই। তিনি তার বক্তব্যে মুসলিমদের শিক্ষা ও ব্যবসার জন্য আরো বর্ধিত সুযোগের কথা জানান।

তিনি আরো বলেন, ইসলামিক ফাইন্যান্স যখন ট্র্যাডিশনাল (কনভেনশনাল) ফাইন্যান্স থেকে ৫০% বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট ২০১৪ তে যখন ১.৩ ট্রিলিয়ন পাউন্ড ছুঁতে যাচ্ছে, তখন আমরা চাই ব্রিটেনে এর একটি বড় অংশ ইনভেস্ট হোক।

তিনি জানান, মুসলিম বিশ্বের বাইরে এই প্রথম ব্রিটেন সোভরেইন সুকুক (সরকারী বন্ডের ইসলামী বিকল্প) ইস্যু করার ঘোষণা দিচ্ছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে পরিকল্পিত এই ইস্যুটির মোট মূল্য হবে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড (বা ৩২০ মিলিয়ন ডলার)।

এছাড়া লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষণা দিচ্ছে ইসলামিক মার্কেট ইনডেক্স চালু করার, যেন ইসলামিক ইনভেস্টররা সহজে জেনে নিতে পারে কোনটি ইসলাম অনুসৃত ইনভেস্টের জায়গা, কোনটি নয়।

সর্বশেষ তিনি লন্ডনে বড় কয়েকটি ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের ইনভেস্টমেন্টের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

পুরো বক্তব্য: https://www.gov.uk/government/speeches/world-islamic-economic-forum-prime-ministers-speech

মন্তব্য: এখানে ব্যবসা যদিও মূল উদ্দেশ্য, তবু নি:সন্দেহে পৃথিবীর সর্ব মহলে ইসলামের অনুপ্রবেশের এটি একটি নতুন ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাধ্যম। হাদীসটি মনে পড়ে গেল, যেখানে মিকদাদ বিন আসওয়াদ রা. এঁর বর্ণনায় রাসূল স. জানান, কাঁচা-পাকা কোনো ঘরই বাকী থাকবে না যেখানে আল্লাহ ইসলাম প্রবেশ করাবেন না। হয়ত কাউকে সম্মান করে বা কাউকে অপমানিত করে। সম্মান করে হয়ত তাকে এর দলের অন্তর্ভুক্ত করবেন (মুসলিম বানাবেন), বা সে হয়ত অপমানিত হয়ে এর অধিনস্ততা মেনে নেবে। (মুসনাদ আহমাদ: ২৩১৮২)

কুয়ালা লাম্পুরের ফোরামে দেখেছি অনেক অমুসলিম ইসলামিক ফাইন্যান্স শিখছে, কাজ করছে। রিবা, ক্বিমার, মাইসির – মুদারাবা, মুশারাকা, ইজারা, মুরাবাহা, সালাম, ইস্তিসনা – তাওয়াররুক, ঈনাহ – সুকুক ইত্যাদি পরিভাষাগুলো তাদের মুখস্থ।

আবার এমন অনেককেও দেখেছি, যারা ইসলামিক ফাইন্যান্স নিয়ে লম্বা সময় ধরে কাজ করতে করতে মুসলিম হয়ে গেছেন। ইসলামের ইনসাফপূর্ণ অর্থনীতি তাদের আকৃষ্ট করেছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, একেক যুগে আল্লাহ তায়ালা একেকভাবে ইসলামকে উচ্চে রাখেন। এ যুগে ইসলামিক ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স এমন একটি ক্ষেত্র, যাকে পুরো বিশ্ব বাধ্য হয়ে সম্মান জানাচ্ছে।

তাই, যারা বিবিএ, এমবিএ করছেন, বা যারা মাওলানা, মুফতী – উভয় পক্ষেরই এ ইন্ডাস্ট্রিতে বেশি বেশি আসা উচিৎ। এই জায়গাটি সত্যিই দাওয়াহর অনেক রুদ্ধ পথ খুলে দিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে সসম্মানে এগিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিন। আমীন।