রেকর্ড গড়ার প্রবণতা ও দেশপ্রেম

ছোট সময় কোন এক পরীক্ষার ফলাফলের পুরস্কার স্বরূপ একটি বই পেয়েছিলাম। নামটা মনে নেই, তবে সেটা ছিল ‘বিলিভ ইট অর নট’ টাইপের। সেখানে সবচেয়ে দ্রুতগামী মানব, সবচেয়ে লম্বা মানুষ, সবচেয়ে খাদক, সবচেয়ে বড় গোঁফ, বড় নখ -ইত্যাদি নানা রেকর্ড ভরা ছিল। সে থেকেই এরকম রেকর্ডের বিষয়গুলোকে ছেলেমি হিসেবে জানি।

আমাদের আশে পাশে অনেকেই বড় চুল, বড় নখ, বড় গোঁফ রেখে বা ছেড়া প্যান্ট, ছেড়া জামা ইত্যাদি পরে নিজেকে একটু অন্য রকম দেখানোর চেষ্টা করেন। এই প্রবণতাটা সেই রেকর্ড গড়ার প্রবণতাটা থেকেই।

কিছুদিন ধরে খেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাবলিক প্লেসে লাফালাফি এবং সেগুলো সোৎসাহে প্রকাশ -একই রকম প্রবণতা; নিজেদের ভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা।

রেকর্ড গড়ার এ ছেলেমি প্রবণতা ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান – অবশেষে গোটা দেশকেও তাড়িত করতে পারে, কখনো তা কল্পনাও করা যায় নি। গত ১৬ই ডিসেম্বরে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিজেদের মার্কেটিংয়ের টুল হিসেবে এক পতাকা রেকর্ডের আয়োজন করে। মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে অভিনব আইডিয়াই বটে। যদিও রেকর্ডটি বছরখানেকও টিকে নি! (রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য।)

ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ সমর্থনযোগ্য হওয়া না হওয়ার বিষয় আসে না, এটা তাদের ব্যাপার। যদিও দেশপ্রেমকে বিপণনের টুল বানানোতে ঘোর আপত্তি আছে আমার। সে যাই হোক, কিন্তু একটি রাষ্ট্র এভাবে রেকর্ড-ফোবিয়ায় ভুগতে পারে, তাও একটি উন্নয়নশীল দেশ, এত টাকা খরচ করে, ভাবতেই আফসোস হয়।

ইসলামের প্রসঙ্গ বাদই দিলাম, সে তো অনেক পরে; স্বাভাবিক সেন্স থেকেও কি এর কোনো যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়! দেশপ্রেম কি রেকর্ডের বিষয়? কাল রেকর্ড ভেঙে গেলেই কি তাহলে দেশপ্রেম ভেঙে পড়বে না?

দেশপ্রেম কি কোনো শো-ডাউন, নাকি কোনো পণ্যের বিপণন টুল? দেশপ্রেম আসলে কী? দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা; দেশের মানুষের নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চেষ্টা; তাই নয় কী? আমরা কি তা পারছি?

এত বড় দেশপ্রেমের রেকর্ডে এত বড় নারী লাঞ্ছনার রেকর্ড হয় কীভাবে? দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একটি হলেরই সাড়ে তিন শত নারী প্রকাশ্যে লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার অভিযোগ জানান। এই কি দেশপ্রেম?

আমি প্রায়ই বলি, অনুভব করি, আজ আবারো বলছি – “আমরা কি তবে জাতীয়ভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে গেলাম!”

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।