প্রসঙ্গ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শরীয়াহ ইন্ডেক্স (DSES) চালু

বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতি গবেষকদের জন্য আজকের খবর হলো, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে স্ট্যান্ডার্ড এন্ড পুওর (S&P) এর শারিয়াহ ইনডেক্স চালু হওয়া। ডিএসই -এর ওয়েবসাইটে ডিএসইএস সূচক নামে ইনডেক্সটা দেখা যাচ্ছে। আজ সোমবার ১০০০ পয়েন্ট নিয়ে চালু হওয়া ইনডেক্সটির প্রথম দিন নিম্নমুখী গিয়েছে।

তবে ইনডেক্সটির তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নাম ওয়েবে পাবলিকলি প্রকাশ করা হয় নি। বিভিন্ন সংবাদ পড়ে জানা যায়, তালিকাটি জানতে ডিএসইর কাছে ক্রেতা বা ব্রোকারেজ হাউজকে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। তাহলে তাদের কাছে প্রকাশ করা হবে। এতে ইনডেক্সটির বিশেষত্ব কী থাকল, তা বোধগম্য নয়।

S&P -র শারিয়াহ ইনডেক্স বাংলাদেশের পূর্বে বিশ্বের অনেক দেশের স্টক এক্সচেঞ্জেই চালু হয়েছে। এই ইনডেক্স করার ক্ষেত্রে সাধারণত এওফি (AAOIFI) -র শেয়ার সংশ্লিষ্ট শরীয়াহ স্ট্যান্ডার্ড মানা হয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের নিজস্ব শরীয়াহ বোর্ড রয়েছে। এতে দুই স্তর বিশিষ্ট ফিল্টারিং করা হয়।

প্রথমত, সেক্টরভিত্তিক ফিল্টারিং। এতে যেসব কোম্পানি মদ, জুয়া, শুকর, সুদভিত্তিক ব্যাংকিং বা বীমা, আবাসিক হোটেল, ক্লাব, মিউজিক, টিভি চ্যানেল বা মিডিয়া, বিজ্ঞাপণী সংস্থা ইত্যাদি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে, তারা বাদ পড়ে যায়।

দ্বিতীয়ত আর্থিক বিবরণীভিত্তিক ফিল্টারিং। এক্ষেত্রে এওফির স্ট্যান্ডার্ড হলো, যাদের মূল ব্যবসা হালাল, তবে সুদী ব্যাংকের ঋণ আছে, বা সুদী ব্যাংকে ডিপোজিট আছে, বা হারাম সম্পদের মিশ্রণ আছে, সেখানে লক্ষণীয়: > সুদী ব্যাংকের ঋণ ৩০% এর কম হতে হবে। > সুদী ব্যাংকে ডিপোজিট/ বিনিয়োগ ৩০% এর কম হতে হবে। > হারাম সম্পদ ৫% এর কম হতে হবে। উল্লেখ্য, এর অর্থ এই নয় যে, এ পরিমাণ হারাম হালাল হবে। বরং, হারাম সবসময়ই হারাম।

একই সঙ্গে, সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য ৩০% বা এর বেশি ফিক্সড এ্যাসেট, প্রোডাক্ট ও সার্ভিস থাকতে হবে। ৩০% এর কম থাকলে এগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সমমূল্যের বিনিময়ে লেনদেন করা অপরিহার্য হবে। অর্থাৎ, ১০ টাকা ফেইস ভ্যালুর শেয়ার দশ টাকাতেই কিনতে হবে। কম বা বেশি হলে সুদ হবে।

এওফির স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে হারাম সম্পদ মিশ্রিত হালাল ব্যবসার কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রতি ফাইন্যান্সিয়াল পিরিয়ডের পর শেয়ার পিউরিফিকেশন করতে হবে। অর্থাৎ, কোম্পানির যত পার্সেন্ট সুদী ঋণ, সুদী বিনিয়োগ আর হারাম সম্পদ থাকবে, শেয়ারের বাজার মূল্যের তত পার্সেন্ট সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিতে হবে; যেভাবে অনিচ্ছাকৃত চলে আসা সুদের টাকা সদকা করতে হয়। S&P -এর ইনডেক্সে সাধারণ DP Ratio বা ডিভিডেন্ড পিউরিফিকেশন রেশিও থাকে। যা হিসাব করার উপায় হলো: মোট হারাম রেভেন্যু/মোট রেভেন্যু। DP ratio যদিও ০.১ হয়, এর অর্থ ডিভিডেন্ডের ১০% সদকা করে দিতে হবে।

শরীয়াহ ইনডেক্সের জন্য S&P সাধারণত মাসে দুই বার শরীয়াহ রিভিউ করে থাকে। এতে কোম্পানীর সর্বশেষ আর্থিক বিবরণী, নিরীক্ষণকৃত বা নিরীক্ষণকৃত নয়, এবং সরাসরি কোম্পানীর খোঁজ নেয়া হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, এওফির স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সুদী ঋণের আশ্রয় নেয়া যাবে না। অনুরূপভাবে, মালিকানা ছাড়া বিক্রয় করা যাবে না। বা ভবিষ্যতে বিক্রয়ের চুক্তি করা যাবে না। এক্ষেত্রে ইসলামের ক্রয়-বিক্রয়ের যাবতীয় নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। প্রকৃত মালিকানা ও অধিগ্রহণ (রেজিস্ট্রেশন) এর পরই কেবল বিক্রয় করা যাবে।

একইভাবে, কোনো অগ্রাধিকার শেয়ার, যেখানে নির্দিষ্ট এমাউন্ট লভ্যাংশ প্রদান করা হয়, বা লভ্যাংশ রিজার্ভ রাখা হয়, বা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের দেয়ার পূর্বে তাদেরকে লভ্যাংশের নির্দিষ্ট এমাউন্ট দেয়া হয়, বা কোম্পানি সমাপ্তি ঘোষণাকালে সম্পদ প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয় -এ রকম অগ্রাধিকার শেয়ার ক্রয় করা যাবে না। অধিকাংশ অগ্রাধিকার শেয়ারের বৈশিষ্ট্যসমূহ ইসলামের বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই সাধারণ শেয়ার ক্রয় করতে হবে।

===

শরীয়াহ সূচক চালুর সংবাদ: http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDFfMjBfMTRfMV8zMV8xXzEwMjQ5Mw%3D%3D

ডিএসইর ওয়েবে শরীয়াহ সূচক (ডিএসইএস ও DSEX Shariah Index):http://bangla.dsebd.org/index.php

S&P -এর শারিয়াহ স্ক্রিনিং মেথডলজি: http://us.spindices.com/documents/additional-material/faq-shariah-indices-methodology.pdf

==

এ বিষয়ে ফেইসবুকে লম্বা আলোচনা হয়। পাঠকদের জন্য সেগুলো প্রকাশ করা হলো: