বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং বান্ধব উদ্যোগসমূহ

আজ ক্লাসে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার অনুকূল যেসব আইন ইত্যাদি রয়েছে, সেগুলোর ওপরে একটি পর্যালোচনা হলো। আশা করি অনেকের কাজে লাগবে।

১. বাংলাদেশে ব্যাংকিংয়ের জন্য আইন হলো – ব্যাংক-কোম্পানী আইন ১৯৯১। মূলত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও ব্যবসা ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় এই আইনের অধীনে হয়ে থাকে। এই আইনে ৫,৯ ও ৩০নং ধারাসহ কিছু ধারায় কিছু সংশোধন এনে মোটামুটি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অনুকূল করা হয়েছে।
>> আইন: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=751

২. বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সনে “GUIDELINES FOR CONDUCTING ISLAMIC BANKING” বা ইসলামী ব্যাংকিং করার জন্য গাইডলাইন প্রকাশ করে।
>> লিংক: http://www.bangladesh-bank.org/aboutus/regulationguideline/islamicbanking/islamicguide.php

৩. ডিসেম্বর ২০১১ তে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য “ইসলামী ইন্টারব্যাংক ফান্ড মার্কেট (Islami Interbank Fund Market)” চালু করে। এতে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ইসলামী বন্ড ফান্ডে মুদারাবার ভিত্তিতে উদ্ধৃত্ত তহবিল বিনিয়োগ করার সুযোগ পায়। অনুরূপভাবে তহবিল গ্রহণেরও সুযোগ পায়।
>> লিংক: http://www.bangladesh-bank.org/mediaroom/circulars/dos/dec272011dosl23.pdf

৪. সেপ্টেম্বর ২০০৪ এ ‘বাংলাদেশ সরকার ইসলামী বিনিয়োগ বন্ড -২০০৪ (Bangladesh Government Islamic Investment Bond-2004)’ চালু করা হয়। এখানেও পূর্বোক্ত সিস্টেমে মুদারাবা বিনিয়োগ পত্র কেনার সুযোগ থাকে ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এতে বিনিয়োগ করা হলে তা বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণের আবশ্যকতা (SLR) পূরণযোগ্য সম্পদ হবে।
>> লিংক: http://www.bangladesh-bank.org/mediaroom/circulars/frtmd/sep1504frtm16.pdf

৫. ২০১৩ (সম্ভবত) -এর কোনো এক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে Department of Banking Inspection- 4 নামে একটি বিভাগ চালু করা হয়। যাদের মূল দায়িত্ব হলো ইসলামী ব্যাংকগুলোর হিসাব-ডকুমেন্ট প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নজরদারী করা। এবং একই সাথে ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কিত গাইডলাইন প্রণয়ন, সংশোধন ইত্যাদিতে ভূমিকা রাখা।
>> ডিপার্টমেন্টসমূহ: http://www.bangladesh-bank.org/aboutus/dept/depts.php

৬. অগাস্ট ২০১০ এ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত গাইডলাইন ‘Guidelines on risk based capital adequacy’। এতে শেষে একটি সংযুক্তি আছে: ANNEX J: RISK FACTORS RELATING TO ISLAMIC MODE OF INVESTMENT (ইসলামী বিনিয়োগ পদ্ধতিসমূহের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকিসমূহ)। এতে ইসলামের বিভিন্ন বিনিয়োগ পদ্ধতির বিবরণ এবং সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিসমূহ, সাথে সেগুলো কমানোর উপায় ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
>> লিংক: http://www.bangladesh-bank.org/aboutus/regulationguideline/rbca_basel.pdf

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ঘেঁটে ও কিছু খোঁজ নিয়ে মোটামুটি এসব তথ্য জোগাড় করা গেছে। কারো কাছে আরো কোনো তথ্য থাকলে জানাতে পারেন।

প্রসঙ্গত, জানামতে,  ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের লোন/রিভার্স লোন বিষয়ক লেনদেনগুলো ৪নং -এ উল্লিখিত BGIIB এর অধীনে মুদারাবার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য এজন্য SLR ও কম। অন্যান্য ব্যাংকের জন্য যা ১৩%, ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য তা ৫.৫%। আবার ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগলে বা তারল্য বেশি হলে আন্ত-ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় IIFM (৩ নং এ উল্লিখিত।) যদিও ইসলামী ব্যাংকগুলো সাধারণত নিজেদের মধ্যেই সরাসরি মুদারাবা-মুশারাকা বা অন্য ইসলামী মোডের ভিত্তিতে লেনদেন করে থাকে। কারণ IIFM হলো ওভারানইট লোনের জন্য তৈরী করা। অথচ ইসলামী মোডগুলোর যথার্থতাই হলো কিছুটা দীর্ঘ মেয়াদী লেনদেনের মাঝে। যাহোক, মোটকথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে কোনো সুদভিত্তিক লেনদেনে যেতে হচ্ছে না।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন:

১. পৃথক ইসলামী ব্যাংকিং আইন। যেমনটা পাকিস্তান, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশে আছে।

২. কেন্দ্রীয় শরীয়াহ বোর্ড, বা বিদ্যমান কেন্দ্রীয় শরীয়াহ বোর্ডকে ক্ষমতায়ন। যেন শরীয়াহ বিষয়ক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং ইসলামী ব্যাংকিং সম্পর্কিত বিবাদ মীমাংসায় উক্ত বোর্ডের সিদ্ধান্ত কোর্ট মানতে বাধ্য হয়।

৩. সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি বিষয়ক বিভাগ খোলা। এ খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল গড়ে তোলার জন্য ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৪. শরীয়াহ বোর্ডগুলোতে সদস্য রিক্রুটের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনে কিছু ক্রাইটেরিয়া দেয়া আছে। মোটামুটিভাবে এগুলো যথেষ্ট, তবে জানা মতে সেভাবে মানা হয় না। অদক্ষ শরীয়াহ বোর্ড থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাই এক্ষেত্রে দক্ষ উলামায়ে কিরামের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধিকরণ সময়ের দাবী।

৫. সরকারের ইসলামী বন্ড ফান্ড পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ তা পরিচালনায়ও প্রয়োজন দক্ষ শরীয়াহ বোর্ড। কাজেই বাংলাদেশ ব্যাংকেও দক্ষ শরীয়াহ বোর্ড গঠন করা।

মোটকথা, ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করাই হবে আগামীর টার্গেট।