মহিলাদের গাড়ি চালানো কি ইসলাম ধর্মমতে নিষেধ?

প্রশ্ন : মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে মহিলাদের গাড়ি চালানো নিষেধ। কিন্তু কেন? এটা কি ঐসব দেশের নিজস্ব আইন দ্বারা বন্ধ করা হয়েছে নাকি ইসলাম ধর্মমতে মহিলাদের গাড়ি চালানো নিষেধ। যদি ইসলাম ধর্মমতে মহিলাদের গাড়ি চালানো নিষেধ হয়ে থাকে তাহলে কোরআন ও হাদিসের আলোকে এর কারণ জানতে চাই।

উত্তর : আসসালামু আলাইকুম।

ইসলাম ধর্মে কিছু বিষয় আছে যেগুলো সরাসরি কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হয়তো বৈধ, আদিষ্ট, নতুবা নিষিদ্ধ। যেমন নামায পড়ার আদেশ আর মদ পানে নিষেধ।

আবার কিছু বিষয় আছে যেগুলো সরাসরি কুরআন হাদীসে উল্লেখ করে নিষেধ করা হয়নি, কিন্তু এমন কিছু কারণ বা বিষয়ের উপস্থিতি আছে তাতে, যেগুলো পৃথকভাবে নিষিদ্ধ। ফলে সেসবের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়টিও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। নারীর গাড়ি চালানো এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।

উপরোক্ত ভূমিকার সাথে আরেকটু যোগ করি, কুরআনের একটি আয়াত আছে।
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ  [٦:١٠٨]

“তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে।” (৬:১০৮)

এই আয়াতটি লক্ষ্য করুন। আল্লাহ তায়ালা তিনি ব্যতিত অন্য উপাস্যদের মন্দ বলতে নিষেধ করছেন। এর কারণ তিনি উল্লেখ করছেন এই, যে, এতে সেসব উপাস্যদের উপাসকরাও না বুঝে আল্লাহকে মন্দ বলবে।

এই আয়াত থেকে একটি মূলনীতি আমারা খুঁজে পাই। সেটি হলো,

ما أفضى إلى محرم فهو محرم

অর্থাৎ, যা করার প্রেক্ষিতে কোনো হারাম কাজ করতে হয়, সে কাজটিও হারাম হয়ে যায়।

উল্লিখিত আয়াতে লক্ষ্য করুন, আল্লাহকে মন্দ বলা হারাম। কিন্তু তিনি ব্যতিত অন্য উপাস্যদের মন্দ বলা হারাম নয়। অথচ তাদের মন্দ বললে (যা বৈধ) আল্লাহকেও মন্দ বলা হয় (যা হারাম)। কাজেই তাদেরকে মন্দ বলাও হারাম হয়ে গেল।

আবার আরেকটি আয়াত দেখুন। আল্লাহ বলছেন,
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا ۗ  [٢:٢١٩]

তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। (২:২১৯)

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মদ হারাম ঘোষণা করার প্রাক্কালে বলেন, মদ ও জুয়ায় কিছু উপকারিতাও আছে, আবার কিছু পাপও আছে। তবে পাপের অংশটা উপকারিতার অংশ থেকে বড়। আর উপকারিতা গ্রহণের চেয়ে পাপ বর্জন গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই মদ পরিত্যাগ করাই উচিৎ।

এ আয়াত থেকে আমরা আরেকটি মূলনীতি পাই। সেটি হলো,
درء المفاسد – إذا كانت مكافئة للمصالح أو أعظم – مقدم على جلب المصالح

অর্থাৎ, অনিষ্ট দূর করা উপকারিতা অর্জনের চেয়ে অগ্রগামী।

এই দুই মূলনীতির ভিত্তিতেই শেখ আব্দুল্লাহ বিন বায ও শেখ উসাইমিন প্রমুখ নারীর জন্য গাড়ি চালানো হারাম বলেছেন। তারা দেখিয়েছেন যে, গাড়ি চালানো যদিও সরাসরি কুরআন-হাদীস দ্বারা নিষিদ্ধ নয়, তথাপি নারী যখন তা চালায়, তখন এমন কিছু বিষয় সামনে আসে, যেগুলো নিষিদ্ধ। পর্দাহীনতা, আকষ্মিক অশ্লীলতা, অনিচ্ছাকৃত আরো কিছু বিষয়, যেগুলো নিষিদ্ধ। কাজেই গাড়ি চালানোও তাদের জন্য নিষিদ্ধ।

নারীর গাড়ি চালানোতে যে উপকারিতা আছে তার চেয়ে এর কারেণ সংঘটিত পাপের অংশ বড়। আর উপকারিতা অর্জনের চেয়ে পাপ বর্জন শ্রেয়। কাজেই নারীদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ।

তবে তারা এও বলেছেন যে, যদি কারো একান্ত প্রয়োজন হয়, স্বামী-সন্তান বা ভাই-বাবা কেউ না থাকে, কর্মস্থলে যেতে হয় নিজে গাড়ি চালিয়ে, তাহলে সে চালাতে পারে। তদুপরি পর্দা ও মডেস্টির যথোপযুক্ত সংরক্ষণ করেই সে চালাতে পারে।

ভালো থাকুন।

প্রশ্ন : গতকাল আমি ঢাকায় এক মহিলাকে দেখলাম গাড়ি চালাচ্ছে। সে পর্দা করা। এমনকি তার শুধুমাত্র ২টি চোখ দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু আমি তার গাড়ি চালানোর মধ্যে কোন ইসলাম বিরোধী আলামত দেখলাম না। রাস্তা দিয়ে হাঁটা যদি কোন দোষ না হয় গাড়ি চালানো দোষের হবে কেন?

উত্তর : আসলে যে কারণে গাড়ি চালাতে নিষেধ করেন তাঁরা, সেই একই কারণ গাড়িতে চড়ার মাঝেও পাওয়া যায়। রাস্তায় হাঁটা-চলা করাতেও সে কারণগুলো উপস্থিত থাকে। এরকম আরো অনেক ক্ষেত্রেই কারণগুলো আছে।

আবার কেউ যদি প্রয়োজনে রাস্তায় হিজাব পড়ে হাঁটে, পর্দা-মডেস্টি ঠিক রেখে যদি নারী তার প্রয়োজন সেরে নেয়, তাহলে সকল ক্ষেত্রেই তা জায়েজ হবে তাঁদের মতানুসারে। কিন্তু সাধারণত, আবার বলি, সাধারণত, যেহেতু এমনটা হয় না; যেহেতু পর্দা-মডেস্টি কিছুদিন পরই উধাও হয়ে যায়, সে জন্যই তাঁরা এমন মতামত প্রকাশ করেন বা আইন প্রণয়ন করেন।

আপনি যেহেতু আরবের কিছু দেশে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণটা জানতে চেয়েছেন, তাই আরবের শেখদের উদ্ধৃতি থেকেই এর উত্তর দিয়েছি। নতুবা এসব ব্যাপার এখন অহরহ-সর্বত্র হচ্ছে, ঘটছে।

সর্বশেষ যে কথাটা বলব, এসব ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে জায়েজ বলাটাও মঙ্গলজনক নয়, আবার নাজায়েজ বলাটাও যথোপযুক্ত মনে হয় না। ব্যক্তি যদি তার নিজ ধর্মীয় মূল্যোবোধ ঠিক রেখে কার্য সম্পাদন করতে পারে, তাহলে তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়।

তবে আবারও বৃহত্তর স্বার্থের কথা বলতে হয়। বৃহত্তর স্বার্থের জন্য, হবু (ভবিষ্যত) পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য আলেমরা কখনোই এসব ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে জায়েজ বলবেন না। আর ইসলামের মেজাজ এটাই। ইসলাম চায় মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখতে। প্রয়োজনে ১০০ হাত দূর থেকেই..