IUT – একটি বিশ্ব মাদ্রাসা?

IUT (Islamic University of Technology), গাজীপুর নিয়ে টাইমলাইনে বেশ কিছু স্ট্যাটাস/লিংক শেয়ার পেলাম। ভাবলাম আমারও কিছু বলার আছে।

IUT-র সাথে অফিসিয়ালি আছি বছর খানেক ধরে। তবে প্রথম IUT তে যাই চার কি পাঁচ বছর আগে। প্রথম অভিজ্ঞতাটা ছিল এরকম: মাগরিবের আজান হয়ে গেছে। সবাই মসজিদের দিকে ছুটে আসছে। দ্রুত মসজিদে ঢুকতে গিয়ে স্যান্ডেল হাতে নিয়ে ঢুকলাম। ঢুকে কিছুটা ইতস্তত। রাখার কোনো জায়গা নেই। ভাবনায় পড়ে গেলাম। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি, সবার স্যান্ডেল সেখানেই রাখা।

স্মৃতিতে চলে গেলাম শৈশবের আরব আমিরাতে। মসজিদগুলোর বাইরেই জুতো রাখা হয়। জুতো চোরের কল্পনাও করা যায় না। এখানেও তাই।

যাহোক নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মসজিদের দু’পাশে অনেককেই বসে যেতে দেখলাম। দেশি-বিদেশি ছাত্র তারা। আল-কুরআন হাতে। নিমগ্ন হয়ে পড়ছেন আল্লাহ তায়ালার বাণী। আবার স্মৃতিতে চলে গেলাম হারামাইনে। মক্কায় ও মদিনায়। দৃশ্যটা যেন খুবই পরিচিত।

মসজিদের মাঝে আবার দুই-তিনটি গ্রুপের মতো হয়ে অনেকে বসে আছেন। দ্বীনী আলোচনা হচ্ছে। দ্বীন জানার ও বুঝার স্টাডি সার্কেল। আলোচনা-প্রশ্ন, দ্বীনকে ঘিরে। দ্বীন মানে জীবন চলার ম্যানুয়াল। যে ম্যানুয়াল মানুষের স্রষ্টা আল্লাহর দেয়া।

গত এক বছর আগে। IUT -তে ক্লাস নেয়া শুরু করেছি। ঈমান, ফিকহ, আখলাক, শিষ্টাচার, ইসলামের ইতিহাস, রাসূলের স. জীবনী, সাহাবিদের রা. জীবনী -ইত্যাদি বিষয়গুলোর আলোচনায় হয় ক্লাসে। নির্ধারিত বিষয় আলোচনা শেষে শুরু হয় প্রশ্নোত্তর। মনের ভেতর লুকানো নানা বিষয়ে প্রশ্ন। এরপর উত্তর পেয়ে এক গাল পরিতৃপ্ত হাসি।

অ্যাসাইনমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হলে সময়মতো তা জমা দেয়া, এমনকি প্রেজেন্টেশন তৈরি করে জমা দেয়াটা ছিল নিয়মিত। ক্লাসের উপস্থিতিও থাকত ভালো। আশ্চর্য হতাম, সাধারণ শিক্ষার ছাত্রদের কাছে সবচেয়ে অবহেলিত বিষয় ‘ইসলাম’ নিয়ে তাদের কোনো অবহেলা কখনো চোখে পড়ে নি।

একদিনের ঘটনা। ক্লাস শেষে বের হয়েছি। একজন পেছনে পেছনে আসলেন। সালাম বাদ বললেন, স্যার, আজ একটি ভুল করে ফেলেছি, একজনের প্রক্সি দিয়ে ফেলেছি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি আশ্চর্য হই তার সততায়, বলি, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। আগামীতে যেন আর না হয়। মিথ্যা সব সময়ই মিথ্যা, অভিশপ্ত।

ক্লাস শেষে আজান। মসজিদের দিকে দলে দলে ছুটে যাওয়া। আবার কুরআন, দ্বীনী স্টাডি সার্কেল। নামাযের পর অনেকেই আসেন নানা প্রশ্ন নিয়ে। ইসলামকে জানার এত আগ্রহ অন্য কোনো সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।

বিকেলে ছাত্ররা মাঠে বেরিয়ে পড়ে। না, কোনো বিশেষ মোড়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিতে নয়। বা কোনো রাজনৈতিক মিছিলে নয়, এখানে কোনো রাজনীতি চলে না। খেলাধুলায় মগ্নতা তাদের। সামাজিক কাজে তাদের ব্যস্ততা।

কখনো কোনো ভাঙচুর, হাতাহাতির কথা শুনি নি। শিক্ষককে অবরোধ করে রাখা বা বেয়াদবির কথা শুনি নি। শিক্ষকদের মধ্যেও পরস্পর গভীর বন্ধুত্ব। শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যস্ত তাঁরা।

এবার আসা যাক মূল পয়েন্টে। কে বা কারা IUT -কে বলেছে “বিশ্ব-মাদ্রাসা। এখানে নাকি লিঙ্গ-বৈষম্য আর ধর্ম-বৈষম্য হয়।”

আমি বলি, হ্যাঁ, যথার্থই বলেছেন। IUT আসলেই একটি মাদ্রাসা। মাদ্রাসা মানে শিক্ষালয়, বিদ্যালয়। অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে রাজনীতি, নারীপ্রীতি ইত্যাদি নানা শিক্ষা-বহির্ভূত ‘আলয়’ -এ পরিণত হয়েছে, তখন IUT -ই সত্যিকার শিক্ষালয়, বিদ্যালয়।

এখানে ‘লিঙ্গ-বৈষম্য’ হয়, এটাও যথার্থ বলেছেন। অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে প্রাকৃতিক সৃষ্ট লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে মূলত নারীদেরকে অপমানিত, অপদস্থ আর লাঞ্ছিত করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে, সেখানে IUT প্রকৃতির সে বৈষম্যকে আড়াল না করে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিচ্ছে। লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলে ফ্রি-মিক্সিংয়ের মাধ্যমে নারীদেরকে সম্মানের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না।

‘ধর্ম-বৈষম্যের’ কথা বলা হয়েছে। এটাও যথার্থ। অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ধর্ম-বৈষম্য দূরীকরণের নামে নিজ ধর্মকে ভোলানোর চেষ্টা করছে, ধর্মের এথিকস ও মোরালিটি ভুলিয়ে প্রকৃতপক্ষে ধর্মবিরোধী ও ধর্ম-অসহিষ্ণু করে তুলছে, সেখানে IUT সত্যিকার অর্থে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা, এথিকস শিক্ষা দিয়ে পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু হওয়ার সবক দিচ্ছে।

আমি মনে করি All IUTians should be proud যে তারা ‘সত্য’ মানুষ হচ্ছেন, হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, যখন চার পাশে কেবল ‘মিথ্যা’ মানুষদের ছড়াছড়ি।

===

মন্তব্য: এখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র কাউকে ছোট করা উদ্দেশ্য নয়। আশা করি বিষয়টি সুস্পষ্ট।