সোনালী যুগের স্মৃতিগুলো – ১ – উমার রা. ও হিমসের গভর্ণর সায়ীদ বিন আমের রা.

ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা, লিডারশিপ বা নেতৃত্ব – এসব বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা অনুসন্ধান করতে গেলে যিনি বারবার সামনে চলে আসেন, তিনি উমার বিন খাত্তাব রা.। শুধু ইসলামের শিক্ষা হিসেবেই নয়, আধুনিক পোস্টাল সিস্টেম ও পুলিশ বাহিনীসহ বহু ক্ষেত্রেই তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।

আজ বয়ানের প্রস্তুতিকালে তাঁর খিলাফতকালের একটি ঘটনা সামনে চলে আসে। অনেকেরই জানা, তারপরও যতবার তা পড়া হয়, শোনা হয়, ততবার তাতে রসদ মিলে।

আমীরুল মুমিনীন উমার রা. সাহাবী আমের বিন সায়ীদ রা. কে হিমসের (বর্তমানে সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত) শাসক হিসেবে নিয়োগ দেন। সায়ীদ বিন আমের রা. ছিলেন অত্যন্ত আল্লাহভীরু, ইবাদতগুজার ও সৎ ব্যক্তি। শাসক হওয়ার পরও তিনি গরীবের জীবন যাপন করতেন।

কয়েক বছর পর। উমার রা. তাঁর খেলাফতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন সময় গিয়ে সাধারণ জনগণের খোঁজ-খবর নিতেন। এবং জনগণকে শাসক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, শাসকের সামনেই। প্রয়োজনে সেখানেই সবার সামনে বিচার করতেন।

তো, উমার রা. হিমসে গেলেন। জনগণকে সায়ীদ বিন আমের রা. সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল, সবই ঠিক আছে, তিনি অত্যন্ত সৎ মানুষ, ভালো মানুষ, আল্লাহভীরু মানুষ। তবে চারটি অভ্যাস আছে তাঁর।

উমার রা. জানতে চাইলে, কী সেগুলো?

তারা জবাব দিল, প্রথমত, তিনি সকালে একটু দেরী করে (বাসা থেকে) বের হন।

উমার রা. বললেন, একটা হলো, দ্বিতীয়টা কী? উল্লেখ্য, উমার রা. এঁর কাছে দোররা থাকত, যা দিয়ে প্রয়োজনে তিনি শাসককে শাসাতেন।

বলা হলো, সপ্তাহে একদিন তিনি আমাদের সময় দেন না। (বাসায় থাকেন)

উমার রা.: তৃতীয়টা?

বলা হলো, রাতে তিনি দরজা খুলেন না, যতই আমরা দরজা নক করি না কেন।

উমার রা.: চতুর্থটা?

বলা হলো, বিধানসভায় বসে মাঝে মধ্যেই তিনি বেহুঁশ হয়ে যান।

উমার রা. এঁর চোখ টলমল করছিল। তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! সায়ীদ বিন আমেরের ব্যাপারে আমার ধারণাকে হতাশায় পরিণত করবে না। বললেন, সায়ীদ, দাঁড়ান। আপনার স্বপক্ষে জবাব দিন। এটা নির্দেশ এবং এখানে ইনসাফের বিচার হবে। প্রজাদের সামনেই।

সায়ীদ রা. দাঁড়ালেন, বললেন, বিষয়গুলো আমি গোপন রাখতে চেয়েছিলাম। আজ যখন তারা এ ব্যাপারে কথা বললই, তাহলে… (আমার জবাব)

১. তারা যে বলেছে আমি সকালে একটু দেরী করে বের হই। ঘটনা হলো, আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাই আমি পরিবারের জন্য নাস্তা প্রস্তুত করি, এরপর সালাতুদ দোহা (চাশতের নামায) আদায় করে বের হই।

২. তারা বলেছে আমি রাতে সময় দেই না। আমি তাদের জন্য রেখেছি দিনকে, আর রাতকে রেখেছি রাবের জন্য। ভোর পর্যন্ত সালাত আদায় করি আর দোয়া করি।

৩. তারা বলেছে, সপ্তাহে একদিন আমি বের হই না। সেদিন আমি কাপড় ধুই। (এক সেট জামা, তা ধুয়ে শুকাতেন)

৪. আমি মুশরিক অবস্থায় খুবাইব বিন আদী রা.কে শহীদ করতে দেখেছি, অথচ তিনি ছিলেন মুসলিম, আমি তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসি নি। সেদিনের কথা মনে করতেই আমি বেহুশ হয়ে যাই।

উমার রা. এঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আপনার ব্যাপারে আমাকে হতাশ করেন নি।

সায়ীদ রা. বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এরপর আর আমি শাসকের পদে থাকতে পারছি না। অত:পর তিনি বের হতে লাগলেন।

কিন্তু উমার রা. তাঁকে হিসাবের আগে থামালেন। তাঁর ব্যাপারে সকল হিসাব, ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক, এবং তাঁর শাসনকার্যের নথিপত্র আনালেন। সবই পেশ করা হলো। দেখা গেল, তিনি একটি দিরহাম বা একটি দিনারও নেন নি। যেভাবে প্রশাসনে ঢুকেছিলেন, সেভাবেই বের হলেন। একটি পাত্র, একটি চাদর আর একটি লাঠি নিয়ে!

আল্লাহু আকবার!!