একের পর এক দু:সংবাদ আমাদের জাতীয় দৈনিকগুলোতে শিরোনাম হচ্ছে। অবশ্য সেসব আমাদের সয়ে গেছে। চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে। আমরা এখন আর কাঁদতে পারি না। কত আর কাঁদব আমরা! ঝড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কেউ মরছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে উড়িয়ে দিচ্ছি। বিল্ডিং ধ্বসে পড়ছে, রাজউককে ভালমন্দ বলে শেষ করছি। মেধাবী ছাত্র বাসের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে, গাড়ি ভাঙ্চুর করে আর মানববন্ধন করে ক্ষান্ত দিচ্ছি। ইভটিজিংয়ের বলি হচ্ছে অসহায় নারী, সেমিনার আর পুলিশের অভিযানে সীমাবদ্ধ থাকছি। অগ্নিকান্ডে পুড়ে মানুষ মরছে, কেমিক্যালকে দোষ দিয়ে তদন্ত শেষ করছি।
আমাদের তদন্তে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে একটি তথ্য অবহেলিত থাকে সবসময়। অথচ সে তথ্যটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
হ্যাঁ, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তাই ইতিহাস যে তথ্যটি আমাদের শেখায়, ইতিহাসের শিক্ষা নিয়েই সে তথ্যটিকে আমরা অবহেলা করি সবসময়। কিন্তু কী সেই তথ্য? কেন তা এত অবহেলিত?
সে তথ্য হলো, এসব জাতীয় দুর্যোগ কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, বরং, এগুলো আমাদের কর্মফল; এগুলো আল্লাহর অসন্তোষ ও আযাব। নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন :
১.
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ [٣٠:٤١]
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (৩০:৪১)
২.
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ [١٦:١١٢]
আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির। (১৬:১১২)
৩.
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ [٧:٩٧] أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ [٧:٩٨] أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ [٧:٩٩]
এখনও কি এই জনপদের অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, আমার আযাব তাদের উপর রাতের বেলায় এসে পড়বে অথচ তখন তারা থাকবে ঘুমে অচেতন। আর এই জনপদের অধিবাসীরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের উপর আমার আযাব দিনের বেলাতে এসে পড়বে অথচ তারা তখন থাকবে খেলা-ধুলায় মত্ত। তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুতঃ আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে। (৭:৯৭-৯৯)
৪.
وَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ أَمْلَيْتُ لَهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ ثُمَّ أَخَذْتُهَا وَإِلَيَّ الْمَصِيرُ [٢٢:٤٨]
এবং আমি কত জনপদকে অবকাশ দিয়েছি এমতাবস্থায় যে, তারা গোনাহগার ছিল। এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছি এবং আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (২২:৪৮)
৫.
أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ [٢٣:٥٥] نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ۚ بَلْ لَا يَشْعُرُونَ [٢٣:٥٦]
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি। তাতে করে তাদেরকে দ্রুত মঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? বরং তারা বোঝে না। (২৩:৫৫-৫৬)
৬.
أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ قَرْنٍ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّنْ لَكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِمْ مِدْرَارًا وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَنْشَأْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ [٦:٦]
তারা কি দেখেনি যে, আমি তাদের পুর্বে কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে আমি পৃথিবীতে এমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দেইনি। আমি আকাশকে তাদের উপর অনবরত বৃষ্টি বর্ষণ করতে দিয়েছি এবং তাদের তলদেশে নদী সৃষ্টি করে দিয়েছি, অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের পরে অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি। (৬:৬)
৭.
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ [٣:١٧٨]
কাফেররা যেন মনে না করে যে আমি যে, অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি। (১:১৭৮)
শুধু শুধু কোনো জাতিকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ! আল্লাহ বলেন,
مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآمَنْتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا [٤:١٤٧]
তোমাদের আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক! আর আল্লাহ হচ্ছেন সমুচিত মূল্যদানকারী সর্বজ্ঞ। (৪:১৪৭)
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ [٨:٥٣]
তার কারণ এই যে, আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। (৮:৫৩)
এ রকম আযাব নতুন নয়। ইতোপূর্বে বহু জাতিকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন রকম আযাব দিয়েছেন।
আদ জাতি :
وَأَمَّا عَادٌ فَأُهْلِكُوا بِرِيحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ [٦٩:٦]سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومًا فَتَرَى الْقَوْمَ فِيهَا صَرْعَىٰ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ [٦٩:٧]
এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঝঞ্জাবায়ূ, যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের উপর সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম। আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা অসার খর্জুর কান্ডের ন্যায় ভূপাতিত হয়ে রয়েছে। (৬৯:৬-৭)
হুদ সম্প্রদায় :
وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ [١١:٩٤]
আর আমার হুকুম যখন এল, আমি শোয়ায়েব (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে রক্ষা করি আর পাপিষ্ঠদের উপর বিকট গর্জন পতিত হলো। ফলে ভোর না হতেই তারা নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (১১:৯৪)
লুত সম্প্রদায় :
فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ [١١:٨٢]
অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। (১১:৮২)
ফেরাউন ও তার দলবল :
وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُودُهُ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُونَ [٢٨:٣٩] فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ [٢٨:٤٠] وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنْصَرُونَ [٢٨:٤١]
ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না। অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর আমি তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে। আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত। কেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না। (২৮:৩৯-৪১)
অন্যান্য সম্প্রদায় :
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ ۖ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَٰكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ [٢٩:٤٠]
আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে। (২৯:৪০)
كَذَٰلِكَ ۖ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آخَرِينَ [٤٤:٢٨] فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ [٤٤:٢٩]
এমনিই হয়েছিল এবং আমি ওগুলোর মালিক করেছিলাম ভিন্ন সম্প্রদায়কে। তাদের জন্যে ক্রন্দন করেনি আকাশ ও পৃথিবী এবং তারা অবকাশও পায়নি। (৪৪:২৮-২৯)
فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِينَ [٢٨:٨١]
অতঃপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলাম। তার পক্ষে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন দল ছিল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না। (২৮:৮১)
না, এসব শাস্তি বিনা কারণে বা কেবল প্রাকৃতিক কারণে হয় নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ [٤٢:٣٠]
তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (৪২:৩০)
وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا [١٧:٥٩]
আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি। (১৭:৫৯)
রাসূল স. এর যুগে এক রাতে প্রবল বর্ষন হয়। নবী স. বর্ষন শেষে নামাজের পর সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই স. ভালো জানেন। নবীজী স. বললেন, তিনি বলেছেন, আজ আমার কিছু বান্দা আমার প্রতি বিশ্বাসী ছিল, আর কিছু ছিল অবিশ্বাসী। যারা বলেছে যে, রাতের বৃষ্টিটা আল্লাহর রহমত ও দয়ায় হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী ছিল। আর যারা বলেছে যে, বৃষ্টিটা অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে হয়েছে, তারা অবিশ্বাসী ছিল আমার প্রতি। (বুখারী : ৯৯১)
বুঝা গেল, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রকৃতির প্রভাব বা গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব তখনো মনে করা হত। এ নতুন নয়। অথচ নবীজী স. বলেন, আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন, এসব আল্লাহর নির্দেশেই হয়। এবং আল্লাহর নির্দেশই এসবের মূল কারণ। প্রকৃতির প্রভাব কেবল দুর্যোগ ঘটানোর মাধ্যম।
তবে হ্যাঁ, যারা এসব দুর্যোগে নিহত হন, তাদের কর্মফলই এসব দুর্যোগ, এ কথা বলা কখনোই ঠিক হবে না। বরং, তারা আল্লাহর কাছে শহীদ বলে গণ্য হবেন, এ আশা এবং দোয়াই করি আমরা। আর আল্লাহ যখন কোনো জাতির ওপর ক্ষুব্ধ হন, তখন তাঁর আযাব সে জাতির শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ-পুরুষ-মহিলা-বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাইকেই গ্রাস করে।
নবী স. বলেন,
الشهداء خمسة، المطعون والمبطون والغريق وصاحب الهدم والشهيد في سبيل الله
পাঁচ রকম নিহত ব্যক্তি শহীদ বলে গণ্য হবে। ১. দুর্ভিক্ষ বা বিশদ ভাবে প্রসারিত কোনো দুর্যোগে নিহত। ২. পেটের পীড়ায় নিহত। ৩. পানিতে ডুবে নিহত। ৪. যে কোনো ধ্বংসজজ্ঞের কারণে নিহত। ৫. আল্লাহর রাস্তায় নিহত।
এসব দুর্যোগ আমাদের জাতীয় দুর্যোগ। তাই প্রয়োজন জাতীয়ভাবে আমাদের কোন কোন সিদ্ধান্ত বা কার্যক্রম আল্লাহর অসন্তোষ ডেকে আনছে, সেসব চিহ্নিত করা। প্রয়োজন, জাতীয় ভাবে ‘তাওবা’ করা। আল্লাহর কাছে করজোড়ে অনুত্প্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
কেবল দুর্ঘটনার পর নিহতদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত কামনা করা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন জীবিতদের মাগফিরাত কামনা করা। আল্লাহর অসন্তোষ ডেকে আনে এমন সব পথ পরিহার করা। ভেবে দেখা উচিৎ, অতীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহর আযাব আসার যেসব কারণ ছিল, সেসব কারণ পূর্ণ মাত্রায় আমাদের মাঝে বিদ্যমান। অতীতে একটি সম্প্রদায়কে মাপে কম দেয়ায় শাস্তি দেয়া হয়েছে। অপর একটিকে পুরুষের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানোয়া কঠোর শাস্তি দেয়া হয়েছে। অন্য সম্প্রদায়গুলোকে মদ, জুয়া, নারী ও বিভিন্ন অপকর্ম ও আল্লাহর অবাধ্যতার কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এ সব কারণ আমাদের মাঝে বিদ্যমান। আল্লাহ চাইলে অতীতের সব সম্প্রদায়ের সব শাস্তি আমাদের ওপর চেপে দিতে পারেন। আল্লাহ আমাদের এসব বিষয় উপলব্ধি করার তাওফীক দিন; আমাদের রক্ষা করুন। আমীন।
একের পর এক দু:সংবাদ আমাদের জাতীয় দৈনিকগুলোতে শিরোনাম হচ্ছে। অবশ্য সেসব আমাদের সয়ে
গেছে। চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে। আমরা এখন আর কাঁদতে পারি না। কত আর কাঁদব আমরা! ঝড়ে
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কেউ মরছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে উড়িয়ে দিচ্ছি। বিল্ডিং ধ্বসে পড়ছে, রাজউককে
ভালমন্দ বলে শেষ করছি। মেধাবী ছাত্র বাসের আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে, গাড়ি ভাঙ্চুর করে আর মানববন্ধন
করে ক্ষান্ত দিচ্ছি। ইভটিজিংয়ের বলি হচ্ছে অসহায় নারী, সেমিনার আর পুলিশের অভিযানে সীমাবদ্ধ
থাকছি। অগ্নিকান্ডে মানুষ পুড়ে মরছে, কেমিক্যালকে দোষ দিয়ে তদন্ত শেষ করছি আমরা।
আমাদের তদন্তে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে একটি তথ্য অবহেলিত থাকে সবসময়। অথচ সে তথ্যটিই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
হ্যাঁ, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এই যে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। তাই ইতিহাস যে তথ্যটি
আমাদের শেখায়, ইতিহাসের শিক্ষা নিয়েই সে তথ্যটিকে আমরা অবহেলা করি সবসময়। কিন্তু কী সেই
তথ্য? কেন তা এত অবহেলিত?
সে তথ্য হলো, এসব জাতীয় দুর্যোগ কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, বরং, এগুলো আমাদের কর্মফল; এগুলো
আল্লাহর অসন্তোষ ও আযাব। নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন :
১.
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ [٣٠:٤١]
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি
আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (৩০:৪১)
২.
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ
لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ [١٦:١١٢]
আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে
আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন
আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির। (১৬:১১২)
৩.
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ [٧:٩٧] أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى
وَهُمْ يَلْعَبُونَ [٧:٩٨] أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ [٧:٩٩]
এখনও কি এই জনপদের অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, আমার আযাব তাদের উপর রাতের বেলায়
এসে পড়বে অথচ তখন তারা থাকবে ঘুমে অচেতন। আর এই জনপদের অধিবাসীরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে
পড়েছে যে, তাদের উপর আমার আযাব দিনের বেলাতে এসে পড়বে অথচ তারা তখন থাকবে খেলা-ধুলায়
মত্ত। তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুতঃ আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই
নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে। (৭:৯৭-৯৯)
৪.
وَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ أَمْلَيْتُ لَهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ ثُمَّ أَخَذْتُهَا وَإِلَيَّ الْمَصِيرُ [٢٢:٤٨]
এবং আমি কত জনপদকে অবকাশ দিয়েছি এমতাবস্থায় যে, তারা গোনাহগার ছিল। এরপর তাদেরকে
পাকড়াও করেছি এবং আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (২২:৪৮)
৫.
أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُمْ بِهِ مِنْ مَالٍ وَبَنِينَ [٢٣:٥٥] نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ۚ بَلْ لَا يَشْعُرُونَ [٢٣:٥٦]
তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি। তাতে করে তাদেরকে
দ্রুত মঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছি? বরং তারা বোঝে না। (২৩:৫৫-৫৬)
৬.
أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ قَرْنٍ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّنْ لَكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِمْ مِدْرَارًا
وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُمْ بِذُنُوبِهِمْ وَأَنْشَأْنَا مِنْ بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ [٦:٦]
তারা কি দেখেনি যে, আমি তাদের পুর্বে কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে আমি পৃথিবীতে
এমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে দেইনি। আমি আকাশকে তাদের উপর অনবরত বৃষ্টি বর্ষণ
করতে দিয়েছি এবং তাদের তলদেশে নদী সৃষ্টি করে দিয়েছি, অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের পাপের
কারণে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের পরে অন্য সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছি। (৬:৬)
৭.
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِأَنْفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ
[٣:١٧٨]
কাফেররা যেন মনে না করে যে আমি যে, অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমি তো
তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে
লাঞ্ছনাজনক শাস্তি। (১:১৭৮)
শুধু শুধু কোনো জাতিকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহর কী লাভ! আল্লাহ বলেন,
مَا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَآمَنْتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا [٤:١٤٧]
তোমাদের আযাব দিয়ে আল্লাহ কি করবেন যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং ঈমানের উপর
প্রতিষ্ঠিত থাক! আর আল্লাহ হচ্ছেন সমুচিত মূল্যদানকারী সর্বজ্ঞ। (৪:১৪৭)
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ [٨:٥٣]
তার কারণ এই যে, আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান
করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ
আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। (৮:৫৩)
এ রকম আযাব নতুন নয়। ইতোপূর্বে বহু জাতিকে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন রকম আযাব দিয়েছেন।
আদ জাতি :
وَأَمَّا عَادٌ فَأُهْلِكُوا بِرِيحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ [٦٩:٦]سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومًا فَتَرَى الْقَوْمَ
فِيهَا صَرْعَىٰ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ [٦٩:٧]
এবং আদ গোত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল এক প্রচন্ড ঝঞ্জাবায়ূ, যা তিনি প্রবাহিত করেছিলেন তাদের উপর
সাত রাত্রি ও আট দিবস পর্যন্ত অবিরাম। আপনি তাদেরকে দেখতেন যে, তারা অসার খর্জুর কান্ডের ন্যায়
ভূপাতিত হয়ে রয়েছে। (৬৯:৬-৭)
হুদ সম্প্রদায় :
وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ
جَاثِمِينَ [١١:٩٤]
আর আমার হুকুম যখন এল, আমি শোয়ায়েব (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে রক্ষা
করি আর পাপিষ্ঠদের উপর বিকট গর্জন পতিত হলো। ফলে ভোর না হতেই তারা নিজেদের ঘরে উপুড়
হয়ে পড়ে রইল। (১১:৯৪)
লুত সম্প্রদায় :
فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ [١١:٨٢]
অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং
তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। (১১:৮২)
ফেরাউন ও তার দলবল :
وَاسْتَكْبَرَ هُوَ وَجُنُودُهُ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ إِلَيْنَا لَا يُرْجَعُونَ [٢٨:٣٩] فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ
فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ ۖ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ [٢٨:٤٠] وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ
لَا يُنْصَرُونَ [٢٨:٤١]
ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা
আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না। অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর
আমি তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে। আমি তাদেরকে
নেতা করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত। কেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।
(২৮:৩৯-৪১)
অন্যান্য সম্প্রদায় :
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ ۖ فَمِنْهُمْ مَنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ
مَنْ أَغْرَقْنَا ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَٰكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ [٢٩:٤٠]
আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ
প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি
নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে।
(২৯:৪০)
كَذَٰلِكَ ۖ وَأَوْرَثْنَاهَا قَوْمًا آخَرِينَ [٤٤:٢٨] فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِينَ [٤٤:٢٩]
এমনিই হয়েছিল এবং আমি ওগুলোর মালিক করেছিলাম ভিন্ন সম্প্রদায়কে। তাদের জন্যে ক্রন্দন করেনি
আকাশ ও পৃথিবী এবং তারা অবকাশও পায়নি। (৪৪:২৮-২৯)
فَخَسَفْنَا بِهِ وَبِدَارِهِ الْأَرْضَ فَمَا كَانَ لَهُ مِنْ فِئَةٍ يَنْصُرُونَهُ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِينَ [٢٨:٨١]
অতঃপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলাম। তার পক্ষে আল্লাহ ব্যতীত এমন
কোন দল ছিল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না।
(২৮:৮১)
না, এসব শাস্তি বিনা কারণে বা প্রাকৃতিক কারণে হয় নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ [٤٢:٣٠]
তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক
গোনাহ ক্ষমা করে দেন। (৪২:৩০)
وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا [١٧:٥٩]
আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি। (১৭:৫৯)
রাসূল স. এর যুগে এক রাতে প্রবল বর্ষন হয়। নবী স. বর্ষন শেষে নামাজের পর সাহাবীদের জিজ্ঞাসা
করেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই স.
ভালো জানেন। নবীজী স. বললেন,আজ আমার কিছু বান্দা আমার প্রতি বিশ্বাসী ছিল, আর কিছু ছিল
অবিশ্বাসী। যারা বলেছে যে, রাতের বৃষ্টিটা আল্লাহর রহমত ও দয়ায় হয়েছে, তারা আমার প্রতি বিশ্বাসী
ছিল। আর যারা বলেছে যে, বৃষ্টিটা অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে হয়েছে, তারা অবিশ্বাসী ছিল আমার প্রতি।
(বুখারী : ৯৯১)
বুঝা গেল, যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রকৃতির প্রভাব বা গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব তখনো মনে করা হত।
এ নতুন নয়। অথচ নবীজী স. বলেন, আল্লাহ বলতে চাচ্ছেন, এসব আল্লাহর নির্দেশেই হয়। এবং আল্লাহর
নির্দেশই এসবের মূল কারণ। প্রকৃতির প্রভাব কেবল দুর্যোগ ঘটানোর মাধ্যম।
তবে হ্যাঁ, যারা এসব দুর্যোগে নিহত হন, তাদের কর্মফলই এসব দুর্যোগ, এ কথা বলা কখনোই ঠিক হবে
না। বরং, তারা আল্লাহর কাছে শহীদ বলে গণ্য হবেন, এ আশা এবং দোয়াই করি আমরা। আর আল্লাহ
যখন কোনো জাতির ওপর ক্ষুব্ধ হন, তখন তাঁর আযাব সে জাতির শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ-পুরুষ-মহিলা
সবাইকেই গ্রাস করে।
নবী স. বলেন,
الشهداء خمسة، المطعون والمبطون والغريق وصاحب الهدم والشهيد في سبيل الله
পাঁচ রকম নিহত ব্যক্তি শহীদ বলে গণ্য হবে। ১. দুর্ভিক্ষ বা বিশদ ভাবে প্রসারিত কোনো দুর্যোগে নিহত।
২. পেটের পীড়ায় নিহত। ৩. পানিতে ডুবে নিহত। ৪. যে কোনো ধ্বংসজজ্ঞের কারণে নিহত। ৫.
আল্লাহর রাস্তায় নিহত।
এসব দুর্যোগ আমাদের জাতীয় দুর্যোগ। তাই প্রয়োজন জাতীয়ভাবে আমাদের কোন কোন সিদ্ধান্ত বা
কার্যক্রম আল্লাহর অসন্তোষ ডেকে আনছে, সেসব চিহ্নিত করা। প্রয়োজন, জাতীয় ভাবে ‘তাওবা’ করা।
আল্লাহর কাছে করজোড়ে অনুত্প্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
কেবল দুর্ঘটনার পর নিহতদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত কামনা করা যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন জীবিতদের
মাগফিরাত কামনা করা। আল্লাহর অসন্তোষ ডেকে আনে এমন সব পথ পরিহার করা। আল্লাহ আমাদের
এসব বিষয় উপলব্ধি করার তাওফীক দিন। আমীন।