টাখনুর ওপর প্যান্ট পড়া এবং পাথরের ওপর সিজদা করা

প্রশ্ন: আমরা ৭/৮জন ইউনিভার্সিটিতে জামায়াতে নামাজ পড়ি। সবাই এখানকার ফরেন স্টুডেন্টঃ বাংলাদেশ-মিশর-তান্জানিয়া-ইরান-ইন্দোনেশিয়ানদের নিয়ে এই নামাজের জামাত হয়। সবারই নামাজ পড়ার নিয়ম প্রায় একই। সামান্য পার্থক্য হল, আমরা টাকনুর উপড় প্যান্ট উঠিয়ে নামাজ পড়ি, এরা দেখলাম কেউ এমন করে না! আর সবচেয়ে চোখে পড়ার মত তফাত পেলাম ইরানীর সাথে। আমরা সবাই নামাজে আকামতের পর হাত বাধি, কিন্তু এই ইরানী পুরা নামাজে হাত ছেড়ে থাকে কিন্তু রুকু-সেজদা আমাদের মতই। সে সিজদার জায়গায় ছোট বর্গাকার কিছু একটা (চিনিনা ২”X২” কর্পুর/মাটি/বিশেষ কোন পদার্থ হবে) ওটার উপড় সিজদা করে। কেউ কি জানেন এটা কি শিয়াদের বিশেষ কোন রীতি?

উত্তর:

১। টাখনুর উপর প্যান্ট উঠানোটা আসলে নামাযের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য নয়। হাদীসে আছে, ” ما أسفل من الكعبين من الإزار ففي النار” অর্থাৎ, দুই টাখনুর নিচে যে অংশটুকুতে লুঙ্গী/প্যান্ট/পাজামা থাকবে, তা জাহান্নামে যাবে। (বুখারী:৫৪৫০, মাকতাবা শামেলা)

পূর্বেকার মানুষজন সাধারণত গর্ব/অহংকার প্রকাশের জন্যে টাখনুর নিচে কাপড় টেনে পরতেন। তাই এরকম সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে গর্ব প্রকাশের ব্যাপারটা না থাকায় তা পুরোপুরি প্রযোজ্য না হলেও নিষেধ থাকায় অন্তত তা মাকরূহ বা অপছন্দনীয়। কিন্তু আমাদের বর্তমান পোশাক-আশাকে ব্যাপারটা এতই সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে যে, এ থেকে বের হওয়াটা অসম্ভবই মনে হয়। তাই আমাদের দেশে প্রায় জায়গায়ই হুযুররা নামাযের সময় টাখনুর উপরে প্যান্ট উঠিয়ে নামায পড়তে বলেন, যেন অন্তত নামাযের সময় হাদীসটার উপর আমল করা সম্ভব হয়।

২। হা এটা শিয়াদের রীতি। হাদীসে আছে যে, নবীজী স. জমীনের উপর সিজদা করতেন। (বুখারী:৭৭৮, বাবুস সুজুদি আলা সাব’আতি আ’জুম, মাকতাবা শামেলা) অতএব শিয়াদের এই কাজটি হাদীসের স্পষ্ট বিরুদ্ধাচারণ। তবে আমি কাউকে কাফির বলব না। শিয়াদের মাঝে অনেক গুলো গ্রুপ আছে। এদের কেউ কেউ নবীজী স. কে শেষ নবী বলে মানে না। কেউ কেউ আলী রা. কে নবী মনে করে। এরা কাফির। বাকীদের অবস্থা তাদের আকীদা বা বিশ্বাস অনুযায়ী হবে। তাই ঢালাওভাবে কিছু বলা যাবে না।

সবশেষে কথা হলো, ইসলামে বেশ কিছু আমল কয়েকভাবে করার সুযোগ আছে। যেমন নামাযে আমীন জোরে পড়া বা আস্তে পড়া, রুকুতে হাত উঠানো বা না উঠানো, নামাযের শুরুতে বিসমিল্লাহ জোরে পড়া বা আস্তে পড়া, বিতিরের নামায তিন রাকাত একসাথে পড়া বা ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়া, দু’আ কুনুত রুকুর আগে পড়া বা পরে পড়া -ইত্যাদি। এগুলোর ক্ষেত্রে উভয় পক্ষেই হাদীস আছে। যেই ইমামের কাছে যে হাদীস মজবুত মনে হয়েছে তিনি তা গ্রহণ করেছেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর অনুসারীরা তাঁর অনুসরন করেছেন। এভাবেই চার মাজহাবের সৃষ্টি।

অতএব সকল মাজহাবই সত্য। কেউ মিথ্যা নন। সকলের উদ্দেশ্যই আল্লাহকে পাওয়া। হয়ত পদ্ধতি একটু ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে আমরা সবাই মুসলমান। এই কথাটি মনে রেখে সবাইকে মিলে মিশে থাকতে হবে।