প্রসঙ্গ AIDS -র সচেতনতা ও গুনাহের সুযোগ সৃষ্টি

একটি অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ে AIDS সম্পর্কে সচেতনতার ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে বিনামূল্যে নারী-পুরুষের নিরাপদ সহশয্যার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। নিউজ ফিডে প্রথম দিনই তা দেখেছি, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্যের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়টির অফিসিয়াল পেইজ দাবীকারী একটি পেইজের পোস্টে এর সত্যতা পেলাম। এবং এর পক্ষে নানা যুক্তি দেখতে পেলাম।

অনেকের মন্তব্য পড়ে মনে হলো, সুযোগ পেয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর হামলে পড়েছে। এবং নানা নামে একে অভিহিত করছে।

যাহোক, বিষয়টাকে একটু অন্যভাবে দেখি। ফ্রি কনডম বিতরণের পেছনের অবস্থাটা কী? এ জায়গায় কি একদিনেই আসা হয়েছে? বড় রাস্তার বিলবোর্ডগুলোতে এইডসের সচেতনতার নামে কী চোখে পড়ে? ‘এইডস কী, বাঁচতে হলে জানতে হবে’ – স্লোগানটা ঠিক কী বার্তা দেয়? পত্র-পত্রিকার বিজ্ঞাপনগুলো কেমন? পর্নোগ্রাফি বন্ধে কি কোনো মানববন্ধন কখনো চোখে পড়েছে? কোনো প্রতিবাদ? বা মিছিল?

আচ্ছা, আইন কী বলছে? আইনে কি সম্মতিতে নারী-পুরুষের সহশয্যা নিষিদ্ধ? বা শাস্তিযোগ্য কোনো অপরাধ? যতদূর জানি, আইনে নারী-পুরুষের পরস্পরের সম্মতিতে বিবাহবহির্ভূত সহশয্যা কোনো অপরাধ নয়। যদি,

১. তা কোনো ব্যবসা না হয়।
২. নারী প্রাপ্ত বয়সের কম না হয়। (নারী প্রাপ্ত বয়সের কম হলে, তা সম্মতি বলে গণ্য নয়। কাজেই তা জোরপূর্বক বা ধর্ষণ বলে গণ্য।)
৩. যদি নারী পরে অভিযোগ দায়ের করেন। (এতে অসম্মতি প্রমাণিত। আর অসম্মতি মানেই ধর্ষণ।)

তো, ধর্ষণ হলো অপরাধ। এর সাজা আছে। ধর্ষণের সংজ্ঞা আইনে যেমনটা রয়েছে:

দণ্ডবিধি ১৮৬০ – The Penal Code 1860: ধারা ৩৭৫-৩৭৬:

A man is said to commit “rape” who except in the case hereinafter excepted, has sexual intercourse with a woman under circumstances falling under any of the five following descriptions:

Firstly. Against her will.

Secondly. Without her consent.

Thirdly. With her consent, when her consent has been obtained by putting her in fear of death, or of hurt.

Fourthly. With her consent, when the man knows that he is not her husband, and that her consent is given because she believes that he is another man to whom she is or believes herself to be lawfully married.

Fifthly. With or without her consent, when she is under fourteen years of age.

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০: ধারা – ৯:

(১) যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন৷
ব্যাখ্যা৷- যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ২[ ষোল বত্সরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ৩[ ষোল বত্সরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন৷

বিস্তারিত পড়ুন: ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষকের শাস্তি – https://yousufsultan.com/rape-in-islamic-point-of-view/

আইনে যা অপরাধ নয়, যা সঠিকভাবে করার সচেতনতার বিজ্ঞাপন সমাজের দৃষ্টিতে সমস্যা নয়, তার সরঞ্জাম বিতরণ অপরাধ কেন? – আসলে এই প্রশ্নের উত্তরটিই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্ররা খুঁজছেন, আর মন্তব্যকারীরা তা এড়িয়ে এলোমেলো গালাগাল করছেন।

আমরা শুধু এ ঘটনার নয়, বরং সমাজের সকল ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার অবৈধ সম্পর্ককে আইনে নিষিদ্ধ করার দাবী জানাই। যেসব ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান এগুলোর ব্যবস্থা করে, সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানাই। পর্নোগ্রাফি প্রোডাকশনের ব্যাপারে আইন আছে, প্রদর্শনের ব্যাপারে নেই। আমরা মূল সার্ভার থেকে সকল প্রকার পর্নোগ্রাফি ব্লকের দাবী জানাই।

এসব দাবী না জানিয়ে ছোট-খাটো ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে কোনো লাভ নেই। কাল আপনার আমার বাসায়ও ফ্রি এগুলো দিয়ে যাওয়া হবে। হয়ত গ্রহণ করবে আপনার আমারই তিন-চার বছরের কোমলমতি ছোট সন্তানটি।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।