আমার এক প্রিয় ছাত্র, যাকে আরবী ভাষা শিক্ষা ক্লাসে প্রায় নিয়মিতই পেয়েছি, তার এক স্ট্যাটাস তারই এক বন্ধু ইনবক্সে পাঠায়। সে কয়েকটি নিউজ সোর্স উল্লেখ করে দাবী করে যে,
“শরিয়া আইনে ধর্ষকদের সাধারণত শাস্তি হয় না। কারণ ধর্ষন প্রমাণ করতে সহী একটা হাদীসের শর্ত মোতাবেক ৪জন চাক্ষুস স্বাক্ষী লাগে। আর স্বাক্ষীরা যদি মহিলা হয় তাহলে প্রত্যেক পুরুষ স্বাক্ষীর পরিবর্তে ২জন মহিলা স্বাক্ষী লাগে। মানে ক্ষেত্র বিশেষে মোট ৮জন চাক্ষুস স্বাক্ষী না থাকলে শরিয়া আইনে ধর্ষণ প্রমাণ হয় না। বলা বাহুল্য, আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের পরীক্ষা যেমন ডিএনএ টেস্ট, মেডিকেল টেস্ট ইত্যাদি এ আইনে গ্রহনযোগ্য নয়।
অন্যদিকে ভিকটিমের শাস্তি হওয়ার মূল কারণ সে অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে আসলে পক্ষান্তরে স্বীকার করে নেয় যে সে বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্কে জড়িত ছিল। এ পর্যায়ে উল্লেখিত স্বাক্ষী যোগাড় করে জোর পূর্বক ধর্ষন প্রমাণ না পারলে সাধারণত তাকেই বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্কের দায়ে শাস্তি দেয়া হয়।”
উত্তরে আমি আমার এই লেখাটি পড়ার আহ্বান জানাই। https://yousufsultan.com/
অবশ্য এই চারজন সাক্ষি না পাওয়া গেলেও অপরাধের ভিডিও, ছবি, CC ক্যামেরার রেকর্ডিং, DNA টেস্টের রিপোর্ট ইত্যাদি যে কোনোটি সহায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। এরপর সেটির মাধ্যমে বা ধর্ষিতার বর্ণনা অনুযায়ী অপরাধীকে সনাক্ত করে স্বীকৃতি নেয়া হবে। এবং তার স্বীকৃতিই হলো সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
জানা মতে পৃথিবীর কোনো আদালতেই এসব টেস্ট বা রিপোর্ট মৌলিক প্রমাণ নয়, যা এককভাবে অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট। বরং এর সাহায্যে অপরাধীকে সনাক্ত করে তার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। পরে স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে তাকে দণ্ড দেয়া হয়।
আমার জবাবের পর পূর্বোক্ত ছাত্র উত্তরে লেখে:
“যে কিতাবের ভাষ্যমতে পৃথিবী সমতল, সে কিতাবের জ্ঞান কত তা আমার জানা আছে। যে কিতাব সরাসরি বিধর্মীদের হত্যার আদেশ দেয় তার জ্ঞান মেলা বুঝলাম।”
ইসলামবিদ্বেষীদের প্যাটার্ণ একই। বারবার বিষয় পরিবর্তন। মূল স্ট্যাটাসে একাধিক ভুল দাবী করা হয়, যেগুলোর উত্তর দেয়ার পর সে অন্য বিষয়ে মোড় ঘুরায়। কিন্তু আবারও ভুল তথ্য।
পৃথিবী যে কিছুটা গোলাকার তা কুরআনের আয়াত দ্বারাই প্রমাণিত। গুগলকে জিজ্ঞাসা করলেই হাজারো তথ্য এনে হাজির করবে। আর এই কিতাব কখনো সরাসরি বিধর্মীদের হত্যার আদেশ দেয় নি। বিধর্মীদের সাথে ইসলামের মধুর আচরণের নির্দেশ নিয়ে লিখেছি অন্য আর্টিকেলে। https://yousufsultan.com/
ছাত্র আবার ইসলামের দাসপ্রথা নিয়ে তর্ক তুলে। (বারবার বিষয় পরিবর্তন) এ নিয়েও আমার একটি লেখা আছে: https://yousufsultan.com/
যাই হোক, প্রিয় ছাত্র! আপনার কাছে খোলা চিঠি:
সত্যের অনুসারীর প্রতি সালাম!
আপনার আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে আপনি অন্যায় মোটেও পছন্দ করেন না, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার কণ্ঠ সোচ্চার। আপনি ধর্ষিতার ওপর অন্যায়ের প্রতিবাদে লিখেছেন, বলেছেন বিধর্মীদের প্রতি বৈষম্য নিয়ে, বা নির্যাতিতা দাসীদের নিয়ে। এককথায়, ন্যায় ও সত্যকে আপনি ভালবাসেন, আপনাকে স্বাগত জানাই।
আপনার বক্তব্য থেকে বুঝতে পারি, আপনি সত্য জানতে আগ্রহী। কারণ ন্যায় সবসময় সত্য আর মিথ্যা সর্বদা অন্যায়। সত্য আর মিথ্যার মিশ্রণে কখনো ন্যায়ের জন্ম হতে পারে না।
সত্য হলো বাস্তবতা, বাস্তব যাকে সমর্থন জানায়। অবাস্তব, বা যা ঘটেনি, তা বাস্তব ও ঘটেছে বলে উল্লেখ করা মিথ্যা। আর মিথ্যা অন্যায়। কাজেই বাস্তবকে না জেনে বক্তব্য দেয়া ততটাই অন্যায়, যতটুকু অন্যায় সেই ধর্ষকের।
ইসলাম কী বলেছে তা প্রকৃতভাবে না জেনে বলা “সত্য না জেনে বলা”। সত্য যখন বিপরীত, তখন সেই উল্টো জানাটা মিথ্যা ও অন্যায়।
আপনার কথা শুনে অন্তত আপনাকে অন্যায়ের সমর্থক মনে হয় নি।
তাই আসুন, সত্যকে জানুন। আপনার ভেতরের হাজারো প্রশ্নগুলো নিয়ে কোনো স্কলারের সাথে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে আমার সাথেই করুন। আমি নিশ্চিত, সত্যের আলো আপনাকে আলোকিত করবেই, কারণ মিথ্যা আর অন্যায় আপনি পছন্দ করেন না।
ভালো থাকুন।
(هداك الله و إيانا إلى الصراط المستقيم)