IFSB ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “Prospects and Challenges in the Development of Islamic Finance for Bangladesh” শীর্ষক সেমিনার

গত দুই দিন IFSB ও বাংলাদেশ ব্যাংক এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “Prospects and Challenges in the Development of Islamic Finance for Bangladesh” শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের সব ইসলামী ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ ও IFSB, ISRA, INCEIF সহ বাইরের বেশ কিছু ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের পরিচালকবৃন্দ।

দুই দিনের এ সেমিনারে মোট পাঁচটি সেশন ছিল। এতে বিশ্বে বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতির অবস্থান, ইসলামিক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, লিগাল ও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, ইসলামী মাইক্রোফাইন্যান্স, শারিয়াহ গভার্নেন্স, সুকুক ও তাকাফুলসহ নানা বিষয় উঠে আসে। সবশেষে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৮টি সম্পূর্ণ ও ১৭টি আংশিক ইসলামী ব্যাংক আছে। ইসলামী ব্যাংকিং-এ রূপান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দরখাস্ত আছে আরো কয়েকটির। গত চার বছরে ইসলামী ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির মোট এ্যাসেট পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। সবমিলিয়ে সামনে এই ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনেক বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ইসলামী ব্যাংকিং এর জন্য ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের দাবী উঠলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ইতোমধ্যে একটি পৃথক সেল করা হয়েছে। পরে এর সত্যতাও পেয়েছি, তবে জেনেছি তাতে লোকবল খুব কম এবং একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। তবু হয়েছে, এটাই আনন্দের বিষয়।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য ভিন্ন আইন প্রণয়নের দাবী উঠলে সে ক্ষেত্রে জানানো হয় যে, বর্তমান ব্যাংকিং আইনটিতে কিছু সংশোধনী এনে তা ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উপযোগী করা হয়েছে। তবে ভিন্ন পূর্ণাঙ্গ Islamic Banking Act প্রণয়নের প্রস্তাবনা ও কথাবার্তা চলছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তার আলোচনায় “If there is public demand” শব্দগুলো ব্যবহার করেন। অর্থাৎ, জনগণের চাহিদা থাকলে পৃথক আইনের ব্যাপারে ভাবা হবে। (চাহিদা যে আছে, তা আর কীভাবে প্রকাশ পাবে তা বোধগম্য নয়।)

একটি সেশন শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমি ISRA ও INCEIF প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতির একাডেমিক ক্ষেত্রে কাজ করার কোনো ইচ্ছা আছে কিনা তা জানতে চাই। আমি উল্লেখ করি, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশই ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করে। কিন্তু মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে IFSB -র মতো আন্তর্জাতিক Standard Setting body প্রতিষ্ঠা করেছে। ISRA ও INCEIF এর মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে একই সঙ্গে শরীয়াহ ও অন্যসব ক্ষেত্রে একাডেমিকলি যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি করছে। আমাদের দেশে তাদের কার্যক্রমগুলো বাড়ানোর কোনো ইচ্ছা আছে কিনা। বিশেষ করে আমাদের উলামায়ে কিরামের জন্য কোনো Islamic Banking ডিপ্লোমা বা কোর্স থাকলে তাঁরা তাদের ফিকহুল মুয়ামালাতের সমন্বয় করে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগাতে পারতেন।

জবাবে ISRA এর সেক্রেটারি জেনারেল জানান, তাদের সব পাবলিকেশন ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত আছে। যে কেউ সেগুলো দ্বারা উপকৃত হতে পারে। আর INCEIF এর চেয়ারম্যান ও CEO জানান, তাদের এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে উচ্চ পর্যায়ের একটি মিটিংয়ের কথা রয়েছে। এবং সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার আলোচনার কথা রয়েছে।

অন্য এক সেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়ায় IFSB -র কার্যালয় ভিজিট করেছেন। এবং লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তাবনা সমন্বয় করছেন।

প্রথম দিন শুরুতে Keynote উপস্থাপন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর সাহেব। তিনি বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকের দ্রুত অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রথম দিনের শেষ সেশনে শেষ দিকে উপস্থিত হন অর্থমন্ত্রী সাহেব। তিনি ইসলামী অর্থনীতির প্রতি তার আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ১৯৭৩ এ IDB প্রতিষ্ঠা হওয়ার মিটিংয়ে বাংলাদেশ থেকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। জাকাত ও ওয়াকফের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের দিকে তিনি জোর দেন।

দ্বিতীয় দিন “Financial Inclusion through Islamic Finance” টপিকের সেশনে পাকিস্তানের Akhuat নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। তিনি দশ বছর আগে একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার কথা জানান।

তিনি তখন এক সুদী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতেন। এক বিধবা নারী সংসারের উন্নতির জন্য দশ হাজার রূপী ঋণ নিতে আসেন। কিন্তু তিনি শর্ত দেন যে, এই ঋণ সুদ-মুক্ত হতে হবে। পরে বাধ্য হয়ে তারা সুদ-মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করেন। সেই নারী টাকা দিয়ে দুটো সেলাই মেশিন কিনেন এবং ছয় মাসে তার আয় তিনগুণ বেড়ে যায়। এক বছরের মধ্যে তিনি পুরো টাকা পরিশোধ করতে সমর্থ হন।

এই ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠা পায় সুদ-মুক্ত ইসলামী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান আখুয়াত। এতে মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য মুদারাবা-মুশারাকা পদ্ধতি ছাড়াও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য রয়েছে সুদ-মুক্ত ঋণ বা কারদে হাসান। আর একেবারে অক্ষমদের জন্য রয়েছে যাকাত ও সাদাকা ফান্ড। একজন নারী দিয়ে শুরু করে দশ বছরে আখুয়াত ৩৭৫,০০০ পরিবারকে ঋণ দিয়ে এসেছে। মজার বিষয় হলো এসব ঋণ পরিশোধের হার ৯৯% এর চেয়েও কিছু বেশি।

প্রশ্নোত্তর পর্বে আখুয়াতকে আমি প্রশ্ন করি, কারদে হাসান পরিশোধের এই অবিশ্বাসযোগ্য হার তারা কীভাবে অর্জন করলেন? অথচ আমাদের দেশে কারদে হাসান নিয়ে কথা বললে প্রথমেই তা খেলাপি হওয়ার আশংকার কথা জানানো হয়।

তিনি জবাবে বলেন, “আমরা ঋণ দেয়ার সময় দেখি তার কর্মক্ষমতা আছে কিনা। তাকে আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত করি যে, তুমি আজ নিচ্ছ, কাল তুমি দেবে। অন্য কেউ তা নিয়ে তোমার মত দাঁড়াবে। এবং প্রতি ১৫ দিন পরপর আমরা তার কার্যক্রম মনিটর করি। তাকে আমরা দ্বীনের কথা শোনাই। ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে তা ক্ষমা করা হয় না, দ্বীনের এই স্পিরিটে তাদের উদ্বুদ্ধ করি। সাথে সাথে প্রতি মাসেই ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করা হয়। তাই দেখা যায় সবাই ঋণ পরিশোধ করে এবং অন্যকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ করে দেয়।

আর ঋণ যে ফান্ড থেকে প্রদান করা হয়, তা তৈরি হয় সমাজের ধনীদের নিয়ে। যারা কোনো লাভ চান না, এবং কারদে হাসানের সওয়াব পেতে চান। তাই কোনো আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা ছাড়াই আমরা এ পর্যন্ত ৩৭৫০০০ পরিবারকে ঋণ দিতে পেরেছি। আর এ ক্ষেত্রে মসজিদগুলোকে আমরা কাজে লাগাই। ঋণ দেয়ার সওয়াব এবং গ্রহণের পর পরিশোধ করার গুরুত্ব নিয়ে মসজিদগুলোতে আলোচনা হয়।”

সত্যি বলতে কী, পুরো সেমিনারে তাদের এই কারদে হাসান মডেলটি আমাকে সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছে। অবশ্য শরীয়াহ ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণ এবং ইসলামিক ব্যাংকিং আইনের প্রয়োজনীয়তা ও এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার মডেলও আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

INCEIF এর চেয়ারম্যান ও সিইও জনাব দাউদ ভিকারি আব্দুল্লাহ একসময়ে অমুসলিম ছিলেন। ইসলামী অর্থনীতির সৌন্দর্য, ইনসাফ ও ভ্রাতৃত্ব, তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং তিনি মুসলিম হন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর মাধ্যমে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ইসলামী অর্থনীতির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের কাজ নিচ্ছেন।

তিনি এক প্রসঙ্গে (ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়) বলেন, ইসলামী অর্থনীতি সবার জন্য। মুসলিম ও অমুসলিম। বরং অমুসলিম দেশগুলোতে অনেক অমুসলিম ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। আমরা যদি মানুষকে শুধু ইসলামী অর্থনীতির দিকে আহ্বান করি, এর অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো জানাই, তাহলেও তারা এক পর্যায়ে সে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়ে মুসলিম হতে পারে। এমনকি তাদেরকে আলাদাভাবে ইসলামের দাওয়াতও দেয়া লাগবে না।

অন্য এক আলোচকের কথায় জানতে পারি, বিশ্বের অনেক দেশে ইসলামী ব্যাংকিং চলছে ভিন্ন নামে। নাম কোনো বিষয় নয়। তুরস্কে চলছে Participatory Finance বা অংশীদারি অর্থায়ন নামে। (যেহেতু এতে লাভ-ক্ষতিতে অংশীদারিত্ব আছে)। আর নাইজেরিয়ায় চলছে Non Interest based Finance বা সুদহীন অর্থায়ন নামে। কোনো দেশে আবার Ethical Banking বা নৈতিক ব্যাংকিং নামেও চলছে। আলোচক প্রস্তাবনা করেন, আমরা একে Inclusive Finance (অন্তর্ভুক্তিকর অর্থব্যবস্থা) বলতে পারি। (যেহেতু এতে নৈতিক সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত আছে এবং যেহেতু এতে ধনী গরীব সবার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমান সুযোগ আছে)।

সেমিনার থেকে প্রাপ্তি হিসেবে আমি মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের যেহেতু এটি এরকম প্রথম আয়োজন, আশা করা যায় ইনশা’আল্লাহ সামনে এ অঙ্গনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। কফি ব্রেকে আমি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজনকে আলাপও করতে শুনেছি, “…পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে তো আমরা সুকুক ইস্যু করতে পারতাম। তাহলে সহজেই অর্থায়ন হয়ে যেত…”। তো, এ সবই পজিটিভ দিক।

আমি মনে করি, সম্মানিত উলামায়ে কিরামের এই বৃহৎ ইন্ডাস্ট্রিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া সময়ের দাবী। ফিক-হুল মুয়ামালাতে দখল থাকার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং এর বর্তমান প্রোডাক্টসমূহ এবং সেগুলোর শরীয়াহর দলীলগুলো জানা খুব প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত যেহেতু তেমন কোন প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে নেই, তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পড়াশোনাগুলো চালানো যেতে পারে।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমাদের দাবী, খুব শীঘ্রই ইসলামী ব্যাংকিং এর ভিন্ন আইন প্রণয়ন করা এবং IFSB এর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে একটি মানসম্মত ইসলামিক ফাইন্যান্স ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করা।

পরিশেষে কিছু প্রশ্নের উত্তর। দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পরিচালনা করেন। তিনি সেশনের শুরুতে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন, যাতে তিনি ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বাস্তবতার ওপর কয়েকটি প্রশ্ন রাখেন। অবশ্য প্যানেল আলোচকবৃন্দ সেসবের উত্তর দেয়ার সময় পান নি বলে উত্তর জানা হয় নি। আমি ছোট পরিসরে সংক্ষেপে মোটা দাগে কিছু উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব ইনশা’আল্লাহ।

প্রশ্ন: ১: মুদারাবা কারবারে মুদারিব কীভাবে প্রমাণ করবেন যে তিনি নেগলিজেন্স বা দায়িত্বে অবহেলা থেকে মুক্ত? (ফলে ক্ষতির দায় পুরোটা আসবে রাব্বুল মাল বা ইনভেস্টরের ওপর)?

উত্তর: যে কোনো ব্যবসায়িক চুক্তিতে দুটো পক্ষ থাকে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিনা, তা জানার নানা উপায় আছে। মুদারিবের আগের বছরগুলোর ব্যবসায়িক কার্যাবলীর সমুদয় হিসাব রাব্বুল মাল বা ব্যাংকের কাছে থাকবে। এবং বর্তমান ব্যবসায়িক কার্যাবলীরও সমুদয় হিসাব ও অডিট রিপোর্ট নিয়মিত জমা নেয়া হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর পৃথক মনিটরিং সেল থাকবে যাদের কাজ হবে কেবল মুদারিবদের ব্যবসা মনিটর করা। কোনো অসতর্কতা খুঁজে পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তা ছাড়া মুদারাবা দুই প্রকার। একটি শর্তযুক্ত, অপরটি শর্তমুক্ত। এক্ষেত্রে শর্তযুক্ত মুদারাবার ব্যবহার করা যেতে পারে। মুদারিবের ব্যবসা কেমন হবে, কীভাবে হবে, কোন ক্ষেত্রে হবে, কোন জায়গায় হবে, সব শর্তযুক্ত করা যেতে পারে। শর্তযুক্ত মুদারাবায় কোনো শর্ত ভঙ্গ করাই নেগলিজেন্স বা অবহেলা। কাজেই তখন কারবারে ক্ষতি হলে শর্তভঙ্গের কারণে আরোপিত ক্ষতি মুদারিবকে বহন করতে হবে।

প্রশ্ন: ২: রাব্বুল মালকে মুদারিবের সত্যিকার প্রফিট (লাভ) চেক করার অনুমতি দেয়া হয় না। ফলে অনৈতিক চর্চার সুযোগ থাকে।

উত্তর: ইসলামে মুদারিবের ব্যবসার সকল হিসাব রাব্বুল মালের কাছে উন্মুক্ত থাকতে পারে, বরং উচিৎ। সত্যিকারের প্রফিট-লস তো অবশ্যই জানাতে হবে। সে ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত মনিটরিং সেল নিয়মিত ব্যালেন্স শিট চেক করবে এবং সত্যিকারে অর্জিত প্রফিট নিরূপণ করে নিবে। মুদারাবায় রাব্বুল মালের জন্য যেটা নিষিদ্ধ, সেটা হলো দৈনন্দিন সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা। তবে রাব্বুল মাল মূল ব্যবসায়িক কার্যাবলীকে শর্তযুক্ত করতে পারবে, এবং প্রফিট তো অবশ্যই চেক করতে পারবে।

প্রশ্ন: ৩: মুদারিবের ব্যাপারে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে?

উত্তর: পূর্বোক্ত মনিটরিং সেল তাদের পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট নিয়মিত ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বা পত্রিকায় প্রকাশ করবে। মুদারিবের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তাকে রেটিং দেয়া যেতে পারে। সকল ব্যাংকের মনিটরিং সেলের রেটিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হতে পারে। এতে সাধারণ জনগণ বা ব্যাংক বা রাব্বুল মাল খুব সহজেই কোনো মুদারিবের রেটিং দেখে তার ব্যাপারে আস্থা অর্জন করতে পারে।

(জনগণ যখন ব্যাংকে মুদারাবার ভিত্তিতে টাকা রাখে তখন তারা রাব্বুল মাল, ব্যাংক মুদারিব। আবার ব্যাংক যখন অন্য কাউকে মুদারাবার ভিত্তিতে টাকা দেয়, তখন ব্যাংক রাব্বুল মাল। তো এখানে ব্যাংক ও তৃতীয় পক্ষ, উভয়ই ভিন্ন অবস্থায় মুদারিব হচ্ছে। কাজেই উভয়েরই রেটিং থাকতে পারে। সাধারণ জনগণ শরীয়াহ পরিপালন ও ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনার ক্রাইটেরিয়ায় প্রদত্ত রেটিং দেখে ব্যাংক নির্বাচন করবে। আবার ব্যাকও তদ্রূপ রেটিংয়ের ভিত্তিতে মুদারিব নির্বাচন করবে।)

প্রশ্ন: ৪: প্রচলিত (কনভেনশনাল) ব্যাংক-ব্যবস্থার নেতৃত্বে শরীয়াহ মার্কেট কীভাবে স্বাধীন হতে পারে?

উত্তর: স্বাধীন নয়, বিষয়টি সঠিক। তবে এই স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশ ব্যাংকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রশ্ন: ৫: সুকুকের ক্ষেত্রে SVP এর ব্যাপারে নানা প্রশ্ন আসে..।

উত্তর: SVP যদি সঠিক আইনি ও শরয়ী অবকাঠামোর মধ্যে না থাকে, প্রশ্ন আসবেই। বরং শরীয়া লঙ্ঘনের রিস্ক সবচেয়ে বেশি। এজন্য যতদ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ব্যাংক, কেন্দ্রীয় শরীয়াহ বোর্ড বা ভিন্ন শরীয়াহ কমিটি ও অর্থ-মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করতে হবে। যাতে সুকুক নিয়েও বিষদ আলোচনা থাকবে।

সবশেষে আল-কুরআনের আয়াত:

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ ﴿العنكبوت: ٦٩﴾

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [২৯:৬৯]

মহান আল্লাহ তায়ালা এখানে لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا উল্লেখ করেছেন। এর অর্থ এমনও করা যেতে, “তাদের জন্য আমার অনেক পথ খুলে দেব”। সুতরাং আল্লাহর পথে কিছু কেউ করতে চাইলে তাতে অবশ্যই অনেক সুন্দর পথ বের হয়ে আসবে।

আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।