ইসলাম একমাত্র ধর্ম যাতে ইবাদাতের পাশাপাশি জীবন যাপন পদ্ধতি ও অর্থনীতি নিয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা দেয়া আছে। অন্যান্য ধর্ম, যেমন খ্রিষ্টিয়ানিটি, হিন্দুইজম, বুদ্ধিজমসহ সকল ধর্মে কেবল ইবাদাত সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা আছে। অর্থনীতি, জীবননীতি নিয়ে সেগুলোতে সবিস্তারে বলা হয়নি। আর এখানেই ইসলাম ধর্মের সাথে অন্যান্য ধর্মের পার্থক্য। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً
হে ঈমানদারগন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। (২:২০৮)
পরিপূর্ণভাবে মানে ইবাদাত, জীবন পদ্ধতি -সব ক্ষেত্রে তোমরা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হও।
আর অন্য ধর্মে যেহেতু জীবন যাপন পদ্ধতির ব্যাপারে বিস্তারিত বলা নেই, তাই সেসব ধর্মাবলম্বীরা অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ধর্মের কথা ভাবে না। আর এ বিষয়টিই মুসলমানরা অনুকরণ করে। তারাও ভাবে যে, অর্থনীতি ও জীবনের অন্যন্য দিক নিয়ে ইসলামও কিছু বলে না। ফলে, যারা ব্যবসা করেন, তারা তাদের ব্যবসার নানা দিক নিয়ে আলেমদের কাছে আসেন না। যারা একান্ত আসেন, তারাও শুধু গুটিকয়েক বড় আলেমের কাছে যান।
কাজেই আলেমরাও বিষয়টার গুরুত্ব সেভাবে উপলব্ধি করেন না। সিলেবাসে অর্থনীতি থাকলেও তা বরাবর অবহেলিত হয়। বছরের শেষদিকে পড়ানো হয় বলে তা দ্রুত পড়ানো হয়, কেউ বুঝুক বা না বুঝুক। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ থাকে না।
অথচ কাজটি কিন্তু আলেমদেরই। ইমাম মুহাম্মদ রহ. বাজারে গিয়ে লোকদের কেনা-বেচা দেখতেন। এরপর সেগুলোকে ইসলামের আলোকে ব্যাখ্যা করতেন। আপনি যদি তাঁর আল জামেউল কাবীর পড়েন, দেখবেন প্রায় তিন চতুর্থাংশ লেনদেন ও মুয়ামালাত সংক্রান্ত। অনুরূপভাবে হিদায়া পড়ে দেখুন। এর ১ খন্ড ইবাদাত নিয়ে, আর বাকি প্রায় তিন খন্ডই মুয়ামালাত ও লেনদেন সংক্রান্ত।
আলেম ছাড়া অন্য কেউ যদি এ গবেষণায় এগিয়ে আসে, তার পথভ্রষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেমন আজকাল অনেকে বলছেন, বর্তমানে বড় বড় ফ্যাক্টরীগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যে সুদ দেয়, তা প্রাচীনকালের সুদের মতো নয়। প্রাচীনকালে সুদ দিতে গিয়ে দাতা ক্ষতিগ্রস্ত হত। কিন্তু এখন তো এসব বড় ফ্যাক্টরীর তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। এটা মুনাফার মতোই। কাজেই ইসলামে এটা নিষিদ্ধ হবে না। কী হাস্যকর কথা!
আমাদের পূর্বসূরীরা এ খিদমত করে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা করছি না। কোনো নতুন লেনদেন দেখে তা হারাম বলে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। যখন মুসলমানদের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী সে মুয়ামালায় অংশ নিচ্ছে, তখন তাকে ইসলামের আলোকে কীভাবে শুদ্ধ করা যায়, সে চেষ্টা করা আলেমদের কর্তব্য। কুরআন হাদীসের সীমায় থেকে যতটা রুখসত ও সহজ করা যায়, ততটাই ভালো। অবশ্য সহজতার নামে সীমা অতিক্রম করা কাম্য নয়। অতএব, দু’দিকেই দেখতে হবে।
গত বছর দুয়েক আগে যে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছিল, তার কারণ কয়েকটি।
১. সুদ (রিবা)
২. হস্তগত হওয়ার পূর্বে বিক্রয় (বাই কাবলার কাবয)
৩. ঋণ ক্রয়-বিক্রয় (বাই’উদ দুয়ুন)
৪. অন্যান্য
এ সবগুলোই ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের নীতি মানলে এ মন্দা হত না।
কাজেই আমাদের উচিৎ ইসলামী অর্থনীতি বেশি বেশি অধ্যয়ন করা, বোঝা এবং মানুষকে সে অনুযায়ী দিক-নির্দেশনা দেয়া।
———————————
এ বক্তব্যটি মুফতি তাকী উসমানী সাহেব গত ৬ মে, ২০১০, ঢাকার বসুন্ধরায় প্রদান করেন। বক্তব্যটির মূলভাব সংক্ষিপ্তাকারে উপরে তুলে ধরা হলো। আর নিম্নের অডিওটি প্রথম কয়েক মিনিট পর থেকে শুরু হয়েছে। ইস্নিপ্সের সাহায্যে তা আপলোড করে এখানে শেয়ার করলাম। আশা করি অনেকেই উপকৃত হবেন।
নোট : আপলোড অজানা কোনো কারণে ফেইল হচ্ছে। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে কিউবির সাহায্যে আবার চেষ্টা করব।