তিনটি প্রশ্ন ও জীবনের লক্ষ্য

দেখতে দেখতে IUT তে আলহামদুলিল্লাহ এক বছর হয়ে গেল। প্রথম ব্যাচে যাদের পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ আমি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আল্লাহ তায়ালাও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আমীন। প্রথম সেমিস্টারে ঈমানের নানা বিষয়ে তাদের আগ্রহ, বিশেষ করে দ্বিতীয় সেমিস্টারে সীরাতুন্নবীর স. ওপর তথ্যসমৃদ্ধ প্রেজেন্টেশন জমা দেয়া – সব মিলিয়ে মাশা’আল্লাহ তারা বেশ পরিশ্রম করেছেন। পরীক্ষার খাতায়ও মাশা’আল্লাহ কয়েকজন বাদে অন্যরা চমৎকার লিখেছেন, জাযাহুমুল্লাহ। খাতা দেখার সময় বহু বার দোয়া করেছি। আল্লাহ আমাদের ভেতর রাসূলের স. ভালবাসা আরো বাড়িয়ে দিন।

শেষ ক্লাসে আমরা সারা বছরের ক্লাসের লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, এই দুই সেমিস্টারে ঈমান, ইসলাম, সীরাত, ইসলামের ইতিহাস, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সাথে ইসলামের সম্পর্ক – ইত্যাদি পড়ার লক্ষ্য পরীক্ষায় ভালো গ্রেড পাওয়া ছিল না। লক্ষ্য ছিল তিনটা প্রশ্নের উত্তর জানা।

১. আমি কে?
২. আমি কোথা থেকে এসেছি?
৩. আমি কোথায় যাব?

আমি মুসলিম। এসেছি জান্নাত থেকে। গন্তব্যও জান্নাত ইনশা’আল্লাহ। মাঝের এ সময়টুকু আমি ট্রানজিটে আছি। আমার ভেতর অস্থিরতা কাজ করছে, গন্তব্যে কীভাবে থাকব, কী করব ইত্যাদি নিয়ে। আমাকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। তাঁকে সন্তুষ্ট করার মাঝেই আমার সব সুখ নিহিত।

আমরা যারা উত্তরগুলো ইতোমধ্যে সত্যিকার অর্থে উপলব্ধি, এবং জীবনে তা বাস্তবায়নে নেমে পড়েছি, তারাই লক্ষ্যে পোঁছার দৌড়ে এগিয়ে আছি। ইনশা’আল্লাহ সফলতা আসবেই।

আর যারা উত্তরগুলো নিয়ে এখনো সন্দেহে আছি, বুঝতে হবে এই দুই সেমিস্টারে আমার সময় নষ্ট হয়েছে, এ ছাড়া কিছুই হয় নি।

আরেকটা বিষয়। একজন মুসলিম হিসেবে আল-কুরআন বুঝতে না পারার চেয়ে লজ্জাজনক ও অপমানজনক কোনো কিছু দুনিয়াতে নেই। এমন লজ্জা নিয়ে বাঁচার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়। কিন্তু আত্মহত্যা যে হারাম। কাজেই মৃত্যুর অপশনটা আর থাকল না। একমাত্র অপশন হলো জীবনের বাকী সময়গুলোর মধ্যে এই কিতাবটি বুঝতে পারার জন্য পরিশ্রম করা। কাজেই এখনো যদি সে চেষ্টা শুরু করে না থাকি, আজই শুরু করে নেই।

আরেকটি বিষয় প্রায়ই তাদের বলা হত। সেটা হলো, প্রত্যেকেই তার নিজ পরিবারের পরিমণ্ডলে দাঈ বা খতীব। তার পরিবারে অন্য কোনো দাঈর ততটুকু এ্যাক্সেস নেই, যতটুকু তার আছে। কাজেই নামাযের সময়, যাকাতের সময়, রোজার সময়, হজ্জ্বের সময়, ঈমান ভঙ্গকারী কোনো বিষয় সামনে আসলে, সর্বোপরি আল্লাহর যে কোনো নাফরমানী হতে দেখলে নিজেকেই দাঈ ও খতীবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। সত্য জানাতে হবে, মিথ্যা দূর করতে হবে।

আমরা বিভিন্ন সময় ক্লাসের শেষে শুনতাম ও আলোচনা করতাম যে, সর্বশেষ বন্ধে কে তার পরিবারে কতটুকু দাওয়াহর কাজ করেছে। প্রত্যেকে যতটুকু শিখেছে বা জেনেছে, তার এ্যাক্সেস যাদের মাঝে আছে, তার দাওয়াহর দায়িত্ব ও এর পরিব্যাপ্তি ততটুকুই। তাকে ততটুকু সম্পর্কেই জিজ্ঞাসা করা হবে।

আলহামদুলিল্লাহ এসব আলোচনায় জেনেছি যে, অনেকেই তার বাবা-মা ও ভাই-বোনকে ক্লাসের প্রেজেন্টেশনগুলো দেখিয়ে আলোচনা করেছেন। অনেকে বন্ধুদের বুঝিয়েছেন। এবং আলহামদুলিল্লাহ প্রত্যেকেই এই ছুটিতে কমপক্ষে পাঁচ থেকে দশ জনকে ঈমানের কথা শোনানোর নিয়ত করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে কবুল করুন এবং এগুলোর ওপর আমল করার তাওফীক দিন। আল্লাহুম্মা আমীন।

শব্দে শব্দে আল-কুরআন শেখার চমৎকার একটি ওয়েবসাইট: http://corpus.quran.com/