প্রসঙ্গ আগুনে পুড়িয়ে মারা: কোথায় আছি আমরা?

যে কোনো উপায়েই নিরপরাধ কাউকে হত্যা করা বা হত্যা-চেষ্টা করা, অথবা অপরাধী কোনো ব্যক্তিকেও বে-আইনীভাবে হত্যা করা বা হত্যা-চেষ্টা করা হারাম। বরং, অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করাকে আল-কুরআনে “সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করা” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। (৫:৩২)

তিনি আরো বলেন,

যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে,তার শাস্তি জাহান্নাম,তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন,তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। (৪:৯৩)

দারিদ্র্যের ভয়ে শিশুকে হত্যা করতেও আল-কুরআনে নিষেধ করা হয়েছে।

দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ। (১৭:৩১)

এমনকি নিজের প্রাণ নেয়া বা আত্মহত্যাও নিষেধ করা হয়েছে।

আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (৪:২৯)

হত্যায় প্ররোচক কারণ হিসেবে হিংসা-বিদ্বেষ-ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

তোমরা একে অপরের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করো না, হিংসা করো না এবং একে অপরের পেছনে পড়ো না। আল্লাহর বান্দা সবাই ভাই-ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইকে সাথে তিন দিনের বেশি ত্যাগ করা হালাল নয়। (বুখারী: ৬০৭৬; বর্ণনাকারী: আনাস বিন মালিক রা.)

এমনকি হত্যার প্রারম্ভিক বিষয় তথা অস্ত্র দিয়ে কাউকে ভয় দেখাতেও নিষেধ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ স. বলেন,

তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিয়ে অস্ত্র তাক না করে। কারণ সে জানে না, হয়ত শয়তান তার হাত থেকে তা বের করে দিতে, ফলে সে জাহান্নামের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে। (বুখারী: ৭০৭২; বর্ণনাকারী: আবু হুরায়রা রা.)

এত কিছুর পরও কেউ কাউকে হত্যা করলে তার জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তা হলো কেসাস বা পাল্টা হত্যা (অবশ্যই নির্দিষ্ট আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এর মাঝে রয়েছে অনেকের প্রাণের নিরাপত্তা।

হে বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্যে জীবন রয়েছে,যাতে তোমরা সাবধান হতে পার। (২:১৭৯)

আগুনে পুড়িয়ে মারা বা মারার চেষ্টা তো আরো বেশি জঘন্য। এতে শিরকের গন্ধ চলে আসে। রাসূল স. কোনো মানুষ, জীব-জন্তু বা কোনো ফসল-গাছ-পালা আগুনে পোড়াতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, “আগুন দ্বারা কেবল আল্লাহই শাস্তি দেবেন / আগুনের রাব (আল্লাহ) ছাড়া আর কারো আগুনের দ্বারা শাস্তি দেয়া উচিৎ নয়” । (বুখারী:২৮৫৩ / আবু দাউদ)

রাসূল স. কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধেও কোনো যুদ্ধে কাউকে আগুনে পোড়ানোর অনুমতি দেন নি। কারণ জাহান্নামে আল্লাহ তায়ালা অপরাধীদের জন্য আগুনের শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন। জাহান্নামকে আরবীতে ‘নার’ বা আগুন বলা হয়েছে। তাই এ শাস্তি কোনো মানুষ দিতে চাইলে এতে আল্লাহর বিশেষ শাস্তি প্রয়োগের ক্ষমতায় যেন তাঁর সমাসীন হওয়ার দাবী চলে আসে।

জিহাদের ময়দানে রাসূল স. কেবল বনু নাজীরের গাছপালা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ মুসলিমরা যখন তাদের ঘিরে ফেলে, তারা সেসব ঝোপঝাড়কেই দূর্গের মতো ব্যবহার করে। আর সন্ধির শর্ত লঙ্ঘন করে পূর্বের গাদ্দারির কারণে তাদের সাথে যুদ্ধ অপরিহার্য ছিল। ফলে তাদের পর্যন্ত পৌঁছতে তাদের যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত বস্তু ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এমনিতে কোনো জীবন্ত মানুষকে জ্বালিয়ে দেয়া, বা গাছ-পালাকে জ্বালানোর অনুমতি দেয়া হয় নি। গাছপালা-ফসলাদি আল্লাহর নেয়ামত। বরং, মানুষকে ফসল ফলানোর মাধ্যমে ভূমি আবাদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূল থিম হলো আগুন জ্বালিয়ে শাস্তি দেয়াটা আল্লাহর সাথে বিশেষায়িত করে রাখা, বান্দাকে এর অনুমতি না দেয়া।

অথচ এখন আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদেরকে অহরহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢালা হচ্ছে, ম্যাচ জ্বালানো হচ্ছে। ইসলামের কথা বাদ দিলাম, মানবতার কথাও বাদ দিলাম, পশুত্বের কোন স্তরেও কি আছি আমরা!?

—-

ইসলামের দৃষ্টিতে নিরাপত্তা বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বয়ান: https://yousufsultan.com/juma-bayan-security-in-islam/