ফকির খাওয়ানো, আসরের পর কিছু খাওয়া, ভোরে স্বপ্ন দেখা, কাযা নামাজ, মৃত্যু বার্ষিকী

প্রশ্ন: আমাদের জীবনে কত রকম ঘটনাই না ঘটে। যেমন আমরা নানা রকম স্বপ্ন দেখি এবং সেই সব স্বপ্নের বিভিন্ন রকম ব্যখ্যা ও শুনি বা জানি অথবা মানি । আমাদের এই জানা বা মানা কতটা যুক্তি সংগত অথবা কোরআন ও হাদিসে এই সব ব্যখ্যার সত্যতা কতটুকু। এই বিষয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার ব্যখ্যা জানতে চাচ্ছি। বিশেষ করে যারা কোরআন ও হাদিস নিয়ে ঘাটাঘটি করেন তাদের কাছে উত্তর আশা করছি। আর অন্য কেউ উত্তর জানলেও দয়া করে জানাবেন ।

ঘটনা ১: কয়দিন আগে আমার আম্মা ফোন করে জানালেন যে তিনি কয়জন ফকির কে সেমাই রান্না করে খাওয়াবেন । আমি কারন জানতে চাইলাম আম্মা বলল যে স্বপ্নের মধ্যে আব্বা সেমাই খেতে চেয়েছে। মৃত ব্যক্তি স্বপ্নে কিছু খাইলে বা খাইতে চাইলে ফকির কে খাওয়াইতে হবে এ কথা আম্মা বললেন। এই রকম ধারনা অনেকের আছে এবং তা পালন ও করে। আমার প্রশ্ন হল এব্যপারে ইসলাম কি বলে। এ রকম কোনো ব্যখ্যা ইসলামে আদৌ কি আছে, যদি থাকে সঠিক ব্যখ্যা জানতে চাই।

ঘটনা ২: আমার এক মামী আছেন যিনি আসরের ওয়াক্ত থেকে মাগরিব পর্যন্ত কিছুই খান না এমন কি পানি পর্যন্ত না কারন হিসেবে উনি বললেন এই সময় নাকি মৃত ব্যক্তিদের খেতে দেয়া হয়। আর এসময় জীবিত ব্যক্তি কোনো কিছু খেলে তার মৃত আত্নীয়র সামনে থেকে খাবার কেড়ে নেয়া হয়। এই বিষয়ে সঠিক জানতে চাই। কারন আমার সেই মামী মামা মারা যাওয়ার পর থেকে এই নিয়ম পালন যাচ্ছেন যাচ্ছেন ।

ঘটনা ৩: ঘটনা ৩: অনেকে বলে ভোরের স্বপ্ন ফলে যায় মানে সফল হয়। স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাংগার পর যদি কেউ ফজরের আযান শুনতে পায় তাহলে নাকি সেই স্বপ্ন সত্যি হয়। এ ধারনাটা কতটুকু সত্যি?

ঘটনা ৪: ঘটনা ৪: আমার এক আত্নীয় প্রতি ওয়াক্তের নামাজের পর এক্সট্রা নফল নামাজ পড়েন। আমি উনাকে কারন জিজ্ঞেস করলে বললেন যে আগের যত নামাজ কাজা হইছে তা পুরন করার জন্য এক্সট্রা নামাজ পড়েন। এখন আমাদের ছোট বেলা থেকে এই পর্যন্ত অনেক নামাজই কাজা হয়েছে এখন প্রতি ওয়াক্তের

ঘটনা ৫: ঘটনা ৫ঃ সামনে আমার আব্বার মৃত্য বার্ষিকী । এক্ষেত্রে আমি সন্তান হয়ে আব্বার জন্য কি করতে পারি যা আমার আব্বার কাজে আসবে। মৃত্য বার্ষিকীর দিন কি করা উচিৎ।
উপরে উল্লিখিত ঘটনার সঠিক ব্যখ্যা জানতে পারলে নিজের কৌতুহল টা মিটত সেই সাথে সঠিক ও সত্যের পথে সবাইপরিচালিত হত। আসুন আমরা সবাই সঠিক তথ্য জেনে সঠিক পথে নিজেদের পরিচালিত করি।

উত্তর: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

উত্তর ১: মৃত ব্যক্তি স্বপ্নে কিছু করলে বা বললে, তা কুরআন-হাদীস অনুযায়ী অবৈধ হলে, তা করা বা বলা কখনোই বৈধ হবে না। আর যদি কুরআন হাদীস অনুযায়ী তা অবৈধ না হয়, তাহলে করতে পারে, করাটা আবশ্যক নয়, আবার করলে ‘স্বপ্ন পূরণ করল বলে’ সওয়াব হবে তা-ও নয়। বরং কোনো ভালো কাজ করলে এমনিতেই সওয়াব হয় –কাজেই সওয়াব হবে। উপরোক্ত ঘটনায় ফকিরকে সওয়াবের নিয়্যতে খাওয়ানো নিঃসন্দেহে ভালো কাজ, কাজেই তাতে সওয়াব হবে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার ফলে খাওয়ানোর কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। কিংবা স্বপ্ন পূরণের জন্যও আলাদা কোনো সওয়াব নেই।

উত্তর ২: কুরআন-হাদীস অনুযায়ী এর কোনো ভিত্তি আছে বলে জানা নেই।

উত্তর ৩: স্বপ্ন সত্যি হওয়ার বেশ কিছু কন্ডিশন আছে। তন্মধ্যে কেবল একটি হলো শেষ রাতের স্বপ্ন। অতএব শুধুমাত্র এই একটি কন্ডিশন পাওয়া গেলেই তা সত্য স্বপ্ন বলে ধারণা করা বোকামী। ইসলামের স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিয়ে খুব অল্প কথায় এখানে আলোকপাত করেছিলাম।

উত্তর ৪: নফল নামাযের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষের জীবনে ত্রুটিযুক্ত নামাযগুলোর ত্রুটি সে পুষিয়ে দেয়। তবে ফরয নামাযের কাযা থেকে গেলে নফল তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে না। ফরযের কাযার জন্য ফরযের নিয়্যতেই কাযা পড়তে হবে। সুন্নতের কাযায় সুন্নতের নিয়্যত; আর নফলের কাযায় নফলের নিয়্যত করতে হবে। ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা আদায় করার উত্তম পদ্ধতি হলো, প্রথমে একটা হিসাব করে নিবে যে, জীবনে কতগুলো ফযর, কতগুলো জোহর ছুটে গেছে। এরপর এভাবে নিয়্যত করবে যে, “আমার জীবনে যত ফযরের নামায ছুটে গেছে, তার প্রথমটির কাযা করছি”। এভাবে প্রথমটির কাযা পড়ে নিলে পরেরটি আবার সিরিয়ালে প্রথমে এসে পড়বে। কাজেই আবারো একই নিয়্যত করবে, “আমার জীবনে যত ফযরের নামায ছুটে গেছে, তার প্রথমটির কাযা করছি”। এভাবে অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রেও নিয়্যত করবে। বেশি বেশি নফল পড়ার চেয়ে জীবনে কাযা থেকে থাকলে অল্প অল্প করে সেগুলো পড়ে নেয়া উচিৎ। এতে আশা করা যায় একই সাথে ছুটে যাওয়া নামাযটিও আদায় হয়ে যাবে, আবার নফলেরও সওয়াব পাওয়া যাবে, ইনশা’আল্লাহ।

উত্তর ৫: পিতা-মাতার জন্য সন্তানের সর্বোত্তম উপহার হলো ‘দুআ’। এটা বছরের একটি দিনের জন্য নির্দিষ্ট নয়, নির্দিষ্ট করা উচিৎও নয়। বরং সারা বছরই তাদের জন্য দু’আ করবে। এমনকি হুযুর ডেকে মিলাদ পড়ানোর চেয়ে নিজে দু’আ করার সওয়াব বেশি। পারলে তাদের জন্য নিজে কুরআন খতম দিবে, গরীব-মিসকিনকে দান-খয়রাত করবে, খাওয়াবে, ইত্যাদি। মাতা-পিতার অধিকার সারা বছর জুড়েই থাকে, একটি দিনকে সেজন্য নির্দিষ্ট করা তাদের উপর অত্যাচার করারই নামান্তর।

আর নিঃসন্দেহে আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

প্রশ্ন: অনেক ধন্যবাদ ইউসুফ ভাই। আপনার উত্তরের অপেক্ষায়ই ছিলাম। এবার ক্লিয়ার হল । অনেক ভুল ধারনা থেকে বেরিয়ে আসলাম।
ইউসুফ ভাই আমার আরেকটি জিজ্ঞাসা ছিল সেটা হল অনেকে বলে স্বপ্নে মৃত ব্যক্তি কথা বলে না । কিন্তু আমার যতটুকু মনে পড়ে একবার আমার আব্বু স্বপ্নে আমার মাথায় হাত রেখে দুয়া করেছেন এবং কথা বলেছেন।
আরেক টি জিগাসা কবর বাধানো কি উচিত?


উত্তর: স্বপ্নে মৃত ব্যক্তি কথা বলে কি বলে না, তা কোনো বিষয়ই না। স্বপ্ন যে কোনো রকম হতে পারে; বাস্তব কথা হলো, শুধুমাত্র এক ধরনের স্বপ্ন বাদে বাকি সব স্বপ্নকেই ইসলাম ময়লার ন্যায় ঝেড়ে ফেলে। (সেই এক ধরনের স্বপ্ন নির্ণয় করাটাও একটা কঠিন সাবজেক্ট।) আর বিজ্ঞান তো সব স্বপ্নকেই ধারনাপ্রসূত, চিন্তার প্রতিচ্ছবি -ইত্যাদি বলে ব্যাখ্যা করে। অতএব স্বপ্ন নিয়ে এত মাথা ঘামানো উচিৎ নয়। স্বপ্ন কোনো কিছু পাল্টে দেয় না, বা স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে কিছু হয়ও না। স্বপ্নকে ইসলাম কোনো ছোট খাটো দলীলের মর্যাদাও দেয় না। অতএব মৃত ব্যক্তি স্বপ্নে কথা বলুক আর না-ই বলুক, ইসলাম তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না।

আর স্বাভাবিক অবস্থায় কবর বাধানোকে ইসলাম চরমভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। এমনকি নবী স: আলী রা: কে এ ধরনের কবর ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দিয়েছিলেন। (মুসলিম) আসলে কবর কোনো সৌন্দর্য্যর বিষয় নয়, বরং তা শিক্ষণীয় বিষয়। অতএব তা যত সাধাসিধে থাকবে, ততই ভালো। তবে যেখানে বাধাই করা ছাড়া কবর টিকে থাকতে পারে না, সেখানে একান্ত প্রয়োজনে বাধাই করা যেতে পারে। (আমাদের দেশে এরকম সমস্যা নাই বললেই চলে।)

আর আল্লাহ তায়ালাই সবচেয়ে ভালো জানেন।