হাদীসের ব্যাখ্যা: দরিদ্র অবস্থায় দান করবে কীভাবে?

প্রশ্ন: যে ব্যক্তি তিনটি কাজ এক সঙ্গে সম্পন্ন করল সে যেন তার ঈমানকে সুসংবদ্ধ করে নিল, তা হচ্ছে-নিজের সাথে সুবিচার ও ন্যায় পরায়নতা অবলম্বন করা, সবাইকে সালাম করা এবং দরিদ্র অবস্থায় অর্থব্যয় করা। – উৎস:বুখারী, মুসলিম।

এখানে কি ইমানের প্রমান দেয়া বা প্রমান করা ধরনের কোন অর্থ বোঝানো হচ্ছে ? তা না হলে শুধু দরিদ্র অবস্থায় দানের কথা বলা হচ্ছে কেন ? ধনী অবস্থায় ই তো দান করার জন্য মূলত উৎসাহিত করার কথা । দরিদ্র কিভাবে দান করবে ?

উত্তর: ধনী অবস্থায় দান করা তূলনামূলক সহজ। কারণ নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক সম্পদ থাকে। তা থেকে দান করলে ব্যক্তি জীবনে কোন প্রভাব পড়ে না। কিন্তু দরিদ্র অবস্থায় দান করা খুব কঠিন। বিশেষত যখন নিজের প্রয়োজনই মেটানো দায়, তখন অন্য কেউ এসে হাত পাতলে তাকে দান করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এখানে প্রয়োজন হয় আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও তাওয়াক্কুলের। আর ইসলামে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি যে, যে আমলটা করতে যত বেশি কষ্ট করতে হয় তাতে সওয়াব তত বেশি হয়। যেমন ধরুন শীতের রাতে ওযু করে নামাজ পড়া, বৃষ্টির দিনে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়া -এসবের প্রতি বিভিন্ন হাদীসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তেমনি দারিদ্র্যের কঠিন দুঃসময়ে দান করতে পারায় সওয়াব অনেক বেশি।

আল্লাহ তায়ালা মুত্তাকীদের প্রসঙ্গে বলেন, “যারা সুখে-দুঃখে সবসময়ই দান করে।” (আলে ইমরান: ১৩৪)

আবার মদীনার আনসারদের প্রশংসায় বলেন, “যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর অন্যকে প্রাধান্য দেয়।” (হাশর: ৯)

উল্লেখ্য যে, এ হাদীসে সব ধরনের দানই বুঝানো হয়েছে। নিজের পরিবারের জন্য খরচ করাও এক প্রকার দান। স্ত্রীর ভরণপোষণও এক প্রকার দান। এতেও সওয়াব আছে। অতএব দরিদ্র অবস্থায় পরিবারের জন্য খরচ করা ধনী অবস্থায় খরচ করার চেয়ে বেশি সওয়াবের।

আলী রা: হতে বর্ণিত, একবার তিন ব্যক্তি সদকা করল। প্রথম জনের ছিল একহাজার দিরহাম। সে সদকা করল এক শত দিরহাম। দ্বিতীয় জনের ছিল এক শত, সে দিল দশ দিরহাম। তৃতীয় জন দশ দিরহামের মালিক। সে দিল এক দিরহাম। নবী স: বললেন, তোমাদের তিনো জনের সওয়াব সমান। কারণ প্রত্যেকেই তার সম্পদের এক-দশমাংশ দান করেছ, তাই অবশিষ্ট সম্পদকেই হিসাব করা হয়েছে।
অতএব কেউ যদি এক দিরহাম সদকা করে, এরপর তার অবশিষ্ট থাকে অনেক দিরহাম, সে তো ঐ ব্যক্তির সমপর্যায়ের নয়, যে এক দিরহাম দান করার পর অবশিষ্ট থাকল মাত্র এক বা দুই দিরহাম।

অপর এক হাদীসে আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, নবী স: একদা বললেন, “এক দিরহাম সওয়াবের দিক দিয়ে এক লক্ষ দিরহামকেও ছাড়িয়ে যায়।” সাহাবীগণ প্রশ্ন তুললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা কীভাবে?” তিনি বললেন, “ধর এক লোকের আছেই মাত্র দুটি দিরহাম। সে তন্মধ্যে উত্তমটিকে সদকা করল। আরেক ব্যক্তির আছে অঢেল সম্পদ। সে তার অপ্রয়োজনীয় অংশ থেকে এক লক্ষ দিরহাম দান করল।” (এ দুয়ের মধ্যে প্রথমোক্ত ব্যক্তির এক দিরহাম সদকার সওয়াব বেশি, কারণ সে তার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দান করেছে।)

মোটকথা, দরিদ্র ব্যক্তির সম্পদের প্রয়োজন খুব বেশি। তা সত্ত্বেও দান করা নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং তাঁর রাসূলের স: প্রতি ভালোবাসার পরিচায়ক। এজন্যেই এতে সওয়াবও বেশি।

আর ধনী অবস্থায় দান করার জন্য তো অনেক হাদীসেই উৎসাহিত করা হয়েছে। সম্পদ আল্লাহর নিয়ামত। আর এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা যায় দানের মাধ্যমেই।

সুত্র: মূল হাদীসটি বুখারী শরীফের কিতাবুল ঈমানে “ইফশাউস সালাম মিনাল ঈমান” অধ্যায়ে আছে। আর ব্যাখ্যাটুকু পেতে পারেন উমদাতুল ক্বারী, ফাতহুল বারী (ইবনে রজব) ও ফাইযুল ক্বাদীরে। ধন্যবাদ।