আমার ডায়েরি : ১৭-০৮-২০১০ : ই-দাওয়াহ কর্মসূচীর বর্তমান হালচাল

রমজান শুরু হওয়ার কিছু দিন আগে একটি ডায়েরি লিখেছিলাম। বলেছিলাম, এবারের রমজান মাসে কিছু ই-দাওয়াহ কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। আজকের ডায়েরি সেসব কর্মসূচীর বর্তমান অবস্থা নিয়েই।

রমজান মাস শুরু হওয়ার চার-পাঁচ দিন আগেই জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়ায় আলেম ও মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য ‘কম্পিউটার কোর্স’ শুরু হয়। তবে তা কতটুকু সফল হয়েছে, তা হিসেব করার সময় বোধহয় এখনো আসেনি।

প্রথম দিনের বিবরণ : ল্যাপটপ আর প্রজেক্টর সেট করে আমি প্রস্তুত। ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু ছাত্রসংখ্যা শুন্য। আমি কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা শুরু করলাম। এত তাড়াতাড়ি নিরাশ হওয়ার পাত্র আমি নই, আলহামদুলিল্লাহ।

প্রায় বিশ মিনিট পর এক ছাত্র আসল। সে জামিয়া মালিবাগে পড়ে। ছাত্রসংখ্যা দেখে তাকেও কিছুটা নিরাশ মনে হলো। আমি বললাম, দারুল উলূম দেওবন্দ যখন শুরু হয়, তখন মাত্র একজন শিক্ষক মাত্র একজন ছাত্রকে নিয়ে ডালিমতলায় পড়ানো শুরু করেন। আজ দারুল উলূম দেওবন্দ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। কাজেই ভাবনার কিছু নেই, আমরা আল্লাহর নামে শুরু করছি, বিসমিল্লাহ.. আমার প্রথম ছাত্র আমার কথায় কিছুটা স্বস্তি পেয়ে ক্লাসে মনোযোগী হলো। আমিও রীতিমতো ক্লাস করালাম।

সেদিন অবশ্য কিছুক্ষণ পর জামিয়া মালিবাগের আরেকজন এসে যোগ দিয়েছিল। কাজেই প্রথম দিনের মোট ছাত্রসংখ্যা : ২ জন।

দ্বিতীয় দিন : পূর্বের দুইজন আগে থেকেই উপস্থিত। এই দুইজনকে ঘিরেই আমি আমার ই-দাওয়ার স্বপ্ন সাজাতে লাগলাম। প্রজেক্টরের পর্দায় বড় করে কম্পিউটারের খুঁটিনাটি তাদের শেখাতে লাগলাম। ধৈর্য্য ধরে তাদের প্রশ্ন শুনে উত্তর দিয়ে গেলাম।

তৃতীয় ও চতুর্থ দিন : রমজানের আগের এই দুইটি ক্লাসেও ছাত্রসংখ্যা একইরকম। অবশ্য চতুর্থ দিন কিছু ফোন পেলাম। অনেকেই ফোন করে জানালেন, তারা সময় মতো কোর্সের খবর পাননি, কাজেই অংশগ্রহণ করতে পারেননি। অনেকে এখন থেকে কোর্সে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। চলে আসতে বললাম।

পঞ্চম দিন : রমজান মাস। ছাত্র সংখ্যা মোট ৪ জন। ছাত্র বাড়ছে, আলহামদুলিল্লাহ।

ষষ্ঠ ও সপ্তম দিন : ছাত্র সংখ্যা ৮ জন, আলহামদুলিল্লাহ। ইতোমধ্যে উইন্ডোজের টুকিটাকি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ও মাকতাবা শামেলার ব্যবহার শেখানো প্রায় শেষ। প্রতিদিন আগের ক্লাসের উপর পরীক্ষা নিচ্ছি। কিছু নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। মাদ্রাসার ছাত্র বলে সবকিছুর বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি আরবিটাও বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি।

এভাবেই আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের কম্পিউটার কোর্স। যাদেরকে শেখাচ্ছি, তাদেরকে বলছি, কম্পিউটার শিখে একে যেন দাওয়াহর কাজে ব্যবহার করেন। ইলমী গবেষণায়ও এর ব্যবহার খুব ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। আল্লাহ তাদের ও আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।

এবার আসা যাক www.Qoumi.com প্রসঙ্গে। রমজানের মাত্র দুই দিন আগে এর লাইভ ক্লাস শুরু হয়েছে। রমজান মাসে এতে দুই ধরনের ক্লাস রাখা হয়েছে।

এক. বিষয়ভিত্তিক ইসলামী আলোচনা। এটা প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫.৩০ – ৬.০০ পর্যন্ত হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। এসব আলোচনার রেকর্ডেড ভার্সনও সাইটে দেয়া হচ্ছে। তবে ইন্টারনেট স্পীডের কারণে হয়ত আপলোড করতে একটু সময় নিচ্ছে।

দুই. তাজবীদসহ কুরআন শেখার ক্লাস। এটা প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩.৩০-৪.৩০ এবং রাত ১০.০০-১১.০০ পর্যন্ত Paltalk রুমে হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ।
বিষয়ভিত্তিক ইসলামী আলোচনা প্রতিদিন সময়মতো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। এ কয়দিনে কুরআন ও তাজবীদের গুরুত্ব, রমজান, রোযা, তাওবা, তারাবীহ, যাকাত ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সমস্যা যে হচ্ছে না তা নয়। মাঝে দুই-তিন দিন লাইভ ডিসকাশনগুলো রেকর্ড করা হয়নি। এগুলো অবশ্য টেকনিক্যাল ত্রুটি, আশা করি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব আমরা, ইনশা’আল্লাহ।

Paltalk এ বাংলাদেশি ছাত্র এখনো তেমন একটা হয়নি। তবে বিদেশী অনেকে রুমে ঢুকে অনেক সময় নানা রকম প্রশ্ন করছেন। এই তো সেদিন লন্ডন থেকে এক ভাই্ ঢুকে তারাবীহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আরেক বোন কাজাকিস্তান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলেন। আলহামদুলিল্লাহ তাদের যথাযথ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশী ভাই-বোনের কাছে Paltalk হয়ত এখনো ততটা সহজ হয়নি। আশা করছি শীঘ্রই এর চেয়ে উত্তম কোনো উপায় আল্লাহ আমাদের বের করে দিবেন।

www.qoumi.com এর সাইটে Question বিভাগে বেশ কিছু প্রশ্ন জমা হয়েছে। অনেককেই ই-মেইলে উত্তর দেয়া হয়েছে। অনেকেরটা বাকি আছে। এখানেও কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা রয়ে গেছে। অনেকে বাংলায় প্রশ্ন করছেন, সেগুলোর ফন্টগুলো দেখা যাচ্ছে না। ডেভেলপার ভাইয়েরা চেষ্টা করছেন, আশা করি শীঘ্রই এসব সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।

আসলে যে কোনো নতুন কনসেপ্টই প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন হয় অনেক ত্যাগ, অনেক শ্রমের। আর আল্লাহর রহমত তো অবশ্যই প্রয়োজন। ইন্টারনেট ভিত্তিক মাদ্রাসার যে প্রয়োজন আছে, আর সে মাদ্রাসা চালানো যে একটি বড় দ্বীনী খিদমত হতে পারে, শুধু এ বিষয়টি বোঝাতেই একদিন অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কল্পনার ওপর বাড়ি নির্মাণ করে সে বাড়ির নানা রুম নানা দিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর মতোই ছিল বিষয়টি।

আলহামদুলিল্লাহ এখন আর তা কল্পনা নেই। বাস্তবে বাড়ি হয়েছে। বাড়ি যখন হয়েছে, মানুষও আসবে। আজ নয়তো কাল। বাড়ির নানা ত্রুটি-বিচ্যুতিও এখন ধরা পড়বে। সেগুলো কাটিয়ে ওঠারও পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এই তো.. এভাবেই দিনগুলো কাটছে। রাস্তার জ্যামে বসে মোবাইলে কুরআন পড়ার অভিজ্ঞতাটা খুব মজার। গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। এবারও চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।
দোয়া চাই, আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন। যেন তাঁর শান্তির বাণী দিকে দিকে ছড়িয়ে দেয়ার তাওফীক দেন, যেন ইখলাসের সাথে দ্বীনের কাজ করার তাওফীক দেন। আমীন।