প্রতিটি শিশু জন্মগতভাবে স্রষ্টায় বিশ্বাসী

প্রিয় রাসূল স. ১৪০০ বছর আগেই আমাদের জানিয়েছেন, كلُّ مولودٍ يُولَدُ على الفطرةِ ، فأبواه يُهَوِّدانِه ، أو يُنَصِّرانِه ، أو يُمَجِّسانِه – প্রত্যেক নবজাতকই ফিতরাত বা একটি শুদ্ধ প্রকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। পরে তার পিতামাতা তাকে ইহুদী, নাসারা বা মাজুসীতে পরিণত করে। [সহীহ বুখারী: ১৩৮৫] – এই হাদীসের ব্যাখ্যাকারীগণ লিখেছেন, এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোনো শিশুকে যদি জন্মের পর কোনো বদ্ধ ঘরে বা জঙ্গলে রেখে দেয়া হয়, তবু সে প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হলে তার রাবকে ঠিকই চিন নিতে পারবে।

এত বছর পর বিজ্ঞানও বলছে যে, শিশুরা জন্ম থেকেই বিশ্বাসী। তাদেরকে পরিবার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান God এর ব্যাপারে না বললেও তারা বিশ্বাসী হবে।

University of Oxford’s Centre for Anthropology and Mind এর সিনিয়র গবেষক ড. জাস্টিন ব্যারেট এর নেতৃত্বে পরিচালিত ১০ বছরের গবেষণা শেষে বলা হয়, শিশুদের কাছে কোনো কিছু কারণহীন বা অর্থহীন নয়। তাদেরকে এমনিতে রেখে দিলেও তারা বুঝে নিবে যে, পৃথিবী ও এর ডিজাইনগুলো কারণসর্বস্ব এবং কোনো বিজ্ঞ সত্ত্বা এসব কারণের পেছনে আছেন।

তিনি বলেন, যদি কয়েকটি শিশুকে মরুভূমিতে রেখে দেয়া হয়, আমি মনে করি তারা God কে বিশ্বাস করবে। তিনি আরো বলেন, এতে বুঝা যায়, শিশুদের ক্ষেত্রে বিবর্তনবাদের চেয়ে সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাস করার সম্ভাবনাই বেশি।

তিনি দাবী করেন, নরবিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কিছু কিছু সংস্কৃতিতে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেয়ার পরও শিশুরা God এ বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, শিশুদের প্রাকৃতিক উন্নয়নশীল মেধা তাদেরকে ঐশ্বরিক সৃষ্টি ও বিজ্ঞ পরিকল্পনায় বিশ্বাস করতে উদ্বুদ্ধ করে। অপরদিকে বিবর্তনবাদ মনুষ্য মেধার জন্য অপ্রাকৃতিক, এতে বিশ্বাস করা কঠিন।

[সূত্র: The Telegraph: Children are born believers in God, academic claims –http://www.telegraph.co.uk/news/religion/3512686/Children-are-born-believers-in-God-academic-claims.html]

মন্তব্য: শিশুর এই প্রাকৃতিক মেধাকে বিনষ্ট করার জন্য বিজ্ঞানের নামে দিনের পর দিন তাকে মিথ্যা ও কাল্পনিক তথ্য শোনানো হয়। কিছু প্রতিষ্ঠিত বিষয়ের পাশাপাশি অপ্রতিষ্ঠিত বিষয়কে ‘যুক্তি’ হিসেবে বুঝানো হয়। অথচ সেগুলোও কিছু বিশ্বাস, অন্য কিছু নয়।

ইসলাম এই প্রাকৃতিক মেধাকে অটুট রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তন্মধ্যে মদ ও যে কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম করার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মেধার স্বাভাবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিনষ্ট হলে সে কেবল তার রাবকে কেন, মা-বাবাকেই চিনতে পারে না।

ইসলাম মানুষের মেধা রক্ষার বিষয়টিকে তার মৌলিক অধিকার সাব্যস্ত করেছে। মদপানের জন্য শাস্তি ঘোষণা করেছে। সমাজ থেকে মদকে চিরতরে বিদায় দেয়ার জন্য মদের পাত্রগুলোকে ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছে।

মজার ব্যাপার হল, পৃথিবীর সকল মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার একমাত্র অধিকার যাদের, সেই জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে মানুষের মেধারক্ষার অধিকার নিয়ে কোনো আর্টিকেল পাওয়া যাবে না। [দেখুন: http://www.un.org/en/documents/udhr/ ]

মাদকের মত আরেকটি মেধাবিনষ্টকারী বিষয় হলো পর্ণোগ্রাফী। গবেষণায় দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মাদকের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর এটি।

আজ মুসলিম সমাজে মাদক ও পর্ণোগ্রাফী এসে তাদের মেধার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট করে দেয়ায় আল্লাহ তায়ালাকে তারা ভুলে যাচ্ছে। কোনো এক অজানা কারণে এগুলোর ব্যাপারে আইন হলেও এর প্রয়োগ হচ্ছে না। বা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নজরে পড়ছে না।

আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মাদক নিয়ন্ত্রণ হয়ত নানা কারণে সম্ভব হচ্ছে না, কিন্তু BTRC কে একটি নির্দেশ দিয়েই তো সব পর্ণোগ্রাফী ওয়েবসাইট ব্লক করা সম্ভব। আরবের প্রায় প্রতিটি দেশেই পর্ণোগ্রাফী ও মাদক বিষয়ক ওয়েবসাইট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশে নানা সময়ে নানা ওয়েবসাইট ব্লক করার নজীর আছে। এতে বুঝা যায়, ওয়েবসাইট ব্লক করার সামর্থ্য অন্তত আমাদের আছে। তারপরও এমন কোনো নির্দেশনা না দিয়ে প্রজন্মের মেধা নষ্ট হওয়ার সুযোগ কেন দেয়া হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।

সুশীল সমাজ নানা বিষয়ে লিখেন, এই বিষয়ে কেন লিখেন না, জানা নেই। হয়ত রুচিতে বাধে বলে। কিন্তু এভাবে যে পুরো প্রজন্ম বুদ্ধি ও মেধা প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে, সে কারণে হলেও তো লেখা যায়।

যা হোক, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তিনি আমাদের সচেতন হওয়ার তাওফীক দেন। আমীন।