শরীয়াহর ব্যানারে সুদভিত্তিক সমিতি

গত পরশু ব্যক্তিগত কাজে একটি অফিসে যেতে হলো। হাতের বাম পাশে অফিসের দরজা। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই হাতের ডান পাশে লক্ষ্য করলাম একটি মাল্টিপারপাজ সোসাইটির লোগো ও ব্যানার। সাথে বড় করে লেখা “Based on Islamic Shariah”। যাক, অফিসটিতে কাজ শেষ করে খুব উৎসাহ নিয়ে সেখানে গেলাম। তাদের লিফলেট, প্রোস্পেকটাস দেখতে চাইলাম। হাতে নিয়ে দেখি, স্পষ্টতই সুদী নিয়মে গ্রাহকের আমানত জমা রাখার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসা করলাম, তাদের শরীয়াহ কমিটি আছে কিনা। উত্তরের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হলো। শরীয়াহ বোর্ড/ শরীয়াহ কমিটি কী ও কেন, তা বুঝাতে প্রায় পনের মিনিট লাগল। তিনি বারবারই বলছিলেন যে, তাদের সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে রেজিস্ট্রেশন আছে এবং নিয়মিত অডিট হয়। আমি তাদের লোগোতে বড় করে “Based on Islamic Shariah” লেখায় শরীয়াহ বোর্ড থাকার প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে অবশেষে সক্ষম হলাম। তিনি জানালেন, বিষয়টি তিনি প্রথম শুনেছেন। এবং এরকম কিছু তাদের নেই।

জানতে চাইলাম কীভাবে তাহলে আপনাদের স্কিমগুলো সাজিয়েছেন বা শরীয়াহভিত্তিক ব্যবসা করছেন? তিনি ব্যাংকের মুরাবাহা পদ্ধতিটাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। যদিও সেখানেও রিবার বিষয় চলে এসেছিল। শেষ পর্যন্ত রিবা কী এবং এর সাথে প্রচলিত ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেটের কিছু পার্থক্য বুঝাতে হলো এবং তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করলেন। আমি তাকে অনুরোধ করলাম ম্যানেজমেন্টকে শরীয়াহ পরিপালনের গুরুত্ব বুঝাতে।

উঠে আসার আগে যে বিষয় আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করল তা হলো, এখানে যিনি চেয়ারম্যান, তিনি আগ থেকেই পরিচিত। তাকে মসজিদে সবসময় আগে দেখা যায় এবং দ্বীনী কাজে অগ্রগামী বলেই সবাই জানি।

আমাদের আশ-পাশে এমন বহু প্রতিষ্ঠান আছে যারা শরীয়াহ ভিত্তিক সমিতির নামে স্পষ্ট সুদী লেনদেন করছে। আগে শরীয়াহ নামে করা হয় নি, এখন শরীয়াহ নামেই হচ্ছে। বিষয়টি বেশে উদ্বেগজনক। এজন্য উলামায়ে কিরামের এ ময়দানে সক্রিয় হওয়া সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী।

তাবলীগের গাশতের আদলে তাদের কাছে গিয়ে গিয়ে গাশত করতে হবে। রিবা কী, এর ক্ষতির দিক কী, কীভাবে এ থেকে বিরত থাকা যায়, রিবা ছাড়াও কীভাবে গ্রাহক আকৃষ্ট করা যায় ইত্যাদি।

আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।