রাসূল স. কে গালি দেয়া খেই হারানো মানুষের কাজ

এক ভাই লিখেছেন, রাসূলকে স. কটাক্ষ করার প্রেক্ষিতে মুসলিমদের ক্ষিপ্ত হওয়া তাদের অতি আবেগের ফসল। এটা তাদের ঠুনকো ঈমানের পরিচায়ক। খ্রীষ্টধর্মে এমন করা হলে তাদের তেমন মাথাব্যথা লক্ষ্য করা যায় না। জবাবে নিচের মন্তব্যটা করা হয়। ভাবলাম স্ট্যাটাস হিসেবেও পোষ্ট করা যেতে পারে।

কয়েকটি কথা। ১. আমাদের দেশের নাস্তিকরা মূলত নাস্তিক না। এরা ইসলাম বিদ্বেষী। তাই তাদেরকে হিন্দু ধর্ম বা খ্রীষ্ট ধর্মের কোনো রীতি নিয়ে বললে দেখবেন ক্ষেপে গেছে। বা সদুত্তর দিয়ে দিচ্ছে। তারা মাঝে মধ্যে অন্য ধর্মের কিছু বিষয়ের বিরুদ্ধে হালকা বলেন নিজেদের সবধর্মবিরোধী নাস্তিক প্রমাণের জন্য, যা এক কথায় ভণ্ডামী।

২. “খ্রিষ্টানদের এই নিয়ে মাথাব্যথা নেই” – তথ্যটা একেবারে ভুল। প্রথমত, খ্রীষ্টধর্মে ব্লাসফেমী তথা নবী বা দ্বীনকে কটাক্ষ করার শাস্তি উল্লিখিত হয় নি। তাই তা তাদের দৃষ্টিতে মৌলিকভাবে কোনো অপরাধ নয়। দ্বিতীয়ত, এরপরও তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট কঠোর। আপনি উইকিপিডিয়াতে ব্লাসফেমীর আর্টিকেলটা পড়ে দেখতে পারেন। জেসাস (ঈসা আ.) কে বিদ্রুপ করায় ফাসী হয়েছে, বন্ধ হয়েছে জনপ্রিয় টিভি প্রোগ্রাম, পত্রিকা ইত্যাদি।

৩. পক্ষান্তরে ইসলামে ব্লাসফেমী অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ। রাসূল স. স্পষ্ট বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত (পূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান ও অন্য সকল মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হব। এছাড়া মক্কা বিজয়ের পর রাসূল স. যখন সর্বসাধারণের উদ্দেশে বলেছিলেন, “لا تثريب عليكم اليوم. اذهبوا فأنتم الطلقاء” – অর্থাৎ, “আজ তোমাদের ওপর কোনো প্রতিশোধ নেয়া হবে না। যেতে পারো, আজ তোমরা মুক্ত।” সেদিন কয়েকজনকে এই ঘোষণা থেকে আলাদা রাখা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ব্লাসফেমীর অপরাধে অপরাধীও ছিল। তেমনি অন্য সময়ও রাসূলকে স. কটাক্ষ করে সেকালের মিডিয়া তথা কাব্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে রাসূল স. কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন। কাজেই ইসলামে এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

৪. ধর্ম বা দ্বীন মানুষের মৌলিক অধিকার। এটাকে কটাক্ষ করা, আঘাত করা মানে মানুষের একেবারে মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়া, তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটানো।

৫. ইসলাম অন্য ধর্মের ভাই-বোনদের কাছে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার সময়ও তাদের দ্বীনকে কটাক্ষ করতে নিষেধ করেছে। ফিরাউনের কাছে দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার সময় মূসা আ. কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, قولا له قولا لينا – তোমরা তার সাথে নম্র স্বরে কথা বলো।

অনুরূপভাবে মুশরিকদের তথাকথিত মাবুদদেরও গালাগাল করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এতে তারা ভুল বুঝে আল্লাহকেও গালাগাল করতে পারে।

ইসলামের দাওয়াহ পদ্ধতি হলো নম্র-ভদ্র আচরণ দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে সত্যের দিশা দেয়া। অন্যের দ্বীনকে কটাক্ষ করলে মানুষ হিংস্র হয়ে ওঠে, উঠবেই। আর ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা বাকী থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না।

৬. রাসূল স. কে গালি দেয়া, তাকে কটাক্ষ করা চরম পর্যায়ের মানসিক বিকৃতির পরিচায়ক। যাঁকে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান নির্বিশেষে সবাই ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাঁর ভেতর খুত খুঁজে পাওয়া খেই হারানো মানুষের কাজ। এরকম লোকের জায়গা পাবনায় হতে পারে, অনলাইনে নয়।