তেঁতুল তত্ত্বের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

আল্লামা শফী সাহেব দা.বা. আল-কুরআনের আয়াত “وَقَرْنَ فِى بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ ٱلْجَـٰهِلِيَّةِ ٱلْأُولَىٰ” দিয়ে তাঁর আলোচনা শুরু করেছেন। আয়াতের উদ্ধৃত অংশটুকুর অনুবাদ: “(নারীরা!) তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে। এবং মূর্খতা যুগের (আইয়্যামে জাহিলিয়ার) অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” – [৩৩:৩৩]

তিনি তাঁর ওয়াযে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে নারীর প্রতি এই নির্দেশের কারণ সহজ সরল ভাষায় ব্যক্ত করেন। নারীর প্রতি পুরুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ ও শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং শেষে শয়তানের কার্যসিদ্ধির বিষয়টি তিনি চমৎকারভাবে তুলে ধরেন। পর্দা ছাড়া নারী চলাচল করলে পুরুষ আকৃষ্ট হবেই – এ বিষয়টি তিনি তেঁতুলের প্রতি প্রত্যেকের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় স্বাভাবিক আকর্ষণের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেন। হযরতের এ উদাহরণকে তাঁর স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী যথার্থই বলতে হয়।

তিনি যে আয়াতের উদ্ধৃতি টেনে আলোচনা শুরু করেন, তার ঠিক আগের আয়াতেই আল্লাহ তায়ালা নবীপত্নী ও সকল নারীদেরকে নির্দেশ দেন, ” إِنِ ٱتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِٱلْقَوْلِ فَيَطْمَعَ ٱلَّذِى فِى قَلْبِهِۦ مَرَضٌۭ وَقُلْنَ قَوْلًۭا مَّعْرُوفًۭا” অনুবাদ: “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। ” [৩৩:৩২]

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর সুমিষ্ট কথনকে কুবাসনা সৃষ্টির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর পরের আয়াতে (যা প্রথমে উল্লেখ করা হলো) তিনি নারীদের অকারণে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন, “ঘরেই থাকো, এবং জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদের প্রদর্শন করো না”। প্রদর্শন করা মানে দেখানো। দেখবে কে? পুরুষ। পুরুষ দেখলে কী সমস্যা? আগের আয়াতের সাথে মিলিয়ে বুঝা যায়, পুরুষ আকৃষ্ট হয় এবং জাহেলী যুগে যা হত (বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, ব্যভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি) তা সংঘটিত হয়।

আল্লামা শফী তাঁর ওয়াযের শুরু থেকেই স্পষ্ট বলে আসছেন যে, তোমরা পর্দা করো, নিজেদের স্ত্রী সন্তানদের পর্দা করাও। কখন ঘরে আসে, কখন ঘর থেকে বের হয়, তার খবর নাও। বর্তমানে মোবাইলের যুগে কী হচ্ছে তাও তিনি আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর অডিয়েন্সদের কাছে তুলে ধরেন।

নারীর প্রতি পুরুষের স্বাভাবিক আকর্ষণকে তেঁতুলের প্রতি সবার স্বাভাবিক আকর্ষণের সাথে তুলনা করে তিনি চমৎকার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। তবে আফসোস সেসব বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের জন্য, যারা উদাহরণ বা মেছাল বিষয়টাই বুঝে না। বাংলাদেশের খেলার আগে যে অনেকে বাঘের মুখোশ লাগিয়ে টাইগার টাইগার সাজে, এতে কি বাংলাদেশকে উলঙ্গ বলা হয়? টাইগার তো কোনো কাপড় পরে না। তার তো লেজ আছে। বাংলার খেলোয়াড়দেরকে টাইগারের সাথে তুলনা করলে কি তাদেরকে লেজ থাকা উলঙ্গ পশু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় না?

যদি না হয়, তাহলে আকর্ষণের বিষয়টাকে তেঁতুলের সাথে তুলনা করলে নারী কেন তেঁতুল হয়ে যায়? উদাহরণ, মেছাল আর তুলনা – কাকে, কার সাথে আর কোন দিক থেকে দেয়া হলো – সেটা যে বুঝে না, সে যদি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী না হয়, তাহলে আর কে হবে?

কেউ কেউ আবার বলছেন, আল্লামা শফী নারীদেরকে ঘরে থাকতে বলে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে। বলি, তিনি তো কুরআনের আয়াত বললেন। কুরআন তো পুরোটাই সংবিধান বিরোধী। তাহলে কুরআনের রচিয়তাও সংবিধান বিরোধী কাজ করলেন। তাহলে সরাসরি তাঁকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক! (যদি সম্ভব হয়!!)

ইসলাম, কুরআন আর হাদীস নিয়ে এই শিশুসুলভ খেলা আর কত খেলবেন? পবিত্র এই রমজান মাসে একটু ক্ষান্ত দিন, দয়া (!) করে।