উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন শাইখুল হাদীস আল্লামা কাজী মু’তাসিম বিল্লাহ দা.বা. –এঁর গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা

ভূমিকা:

হযরত দীর্ঘ দিন যাবৎ লিভার সিরসিসে আক্রান্ত হয়ে শয্যাসায়ী। লিভার-রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসায় নিরাশ হয়ে অবশেষে মালিবাগ মাদ্রাসায় নিজ কামরায় দিন-রাত দু’চার চামচ খাবার খেয়ে আল্লাহ আল্লাহ যিকির করেই দিন অতিক্রম করছেন।

গত ১৫-১১-২০১২ ইং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জরুরী ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় খিদমাহ হসপিটালে। পরে জানা যায়, তিনি ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন। প্রায় ১২ ঘন্টা অচেতন থাকার পর পরদিন সকাল সাতটায় হযরতের চেতনা ফিরে আসে।

শুরুর দিকে তাঁর অধিকাংশ কথা অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও পরবর্তীতে সেগুলো বেশ দামী মনে হয়। আশ্চর্যের কথা হলো, যিনি প্রায় চার মাস যাবৎ প্রয়োজনীয় কথাটা বলতেও সীমাহীন কষ্ট অনুভব করতেন, তাঁর মুখ থেকে অকপটে বেরিয়ে আসছে শৈশব-কৈশোরের অসংখ্য স্মৃতি। মা-বাবা, বিশেষ করে প্রিয় শাইখ হযরত শাইখুল ইসলাম মাদানী রহ. এঁর স্মৃতি উচ্চারণ করে অঝোরে কেঁদে উঠছেন বারবার।

মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও মাওলানা ফরীদ উদ্দিদ মাসঊদ সাহেব সাক্ষাত করতে এলে তাঁদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এভাবেই কেটে যায় তিন দিন।

এরপর থেকে যে কথাটা তিনি বারবার উচ্চারণ করছেন এবং সবাইকে একে অপরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলছেন, তা হলো “মাদরাসা প্রতিষ্ঠার রূপরেখা” শীর্ষক তাঁর মূল্যবান এক প্রস্তাবনা।

হযরতের মূল্যবান প্রস্তাবনা:

(প্রস্তাবনাটি হযরত যেভাবে বলেছেন, হুবহু সেভাবে নীচে উল্লেখ করা হলো।)

মাদরাসা প্রতিষ্ঠার রূপরেখা

وما جعلناكم إلا أمة واحدة

সততা, সত্যবাদিতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পূর্ণ নকশা

১. জ্ঞানের সর্বজনীনতা

–       المراحل في العلم

২. পঠন-পাঠন পরিশুদ্ধায়ন –

–         التعليم و التدريس و التصحيح

৩. পঠন-পাঠন নিয়ে ঝগড়া/ লড়াই

–         المجادلة و المنازعة في التعليم و التدريس

৪. এই জ্ঞানের বিষয়ে পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক চেষ্টা করা

–       التكميل في العلم  (هذه هي الضرورة، لا مخالفة فيما بين المذاهب)

৫. চরম পরিপূর্ণতা

–        التكميل إلى الغاية و النهاية

৬.

–       أيها المخاطب، إن الله تبارك و تعالى أعطاكم العلوم و ما لها و ما عليها. فعليكم أن تطلقوا العلم على المأخذ الأصلي بالصحة. (فهذه هي المدرسة)

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য (غرض و غاية)

আমাদের সেরেতাজ হযরত হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ., হযরত আশরাফ আলী থানুভী রহ., হযরত শাইখুল হিন্দ রহ., হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ., হযরত রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. এঁর ওয়াসিতায় রাসূলে কারীম স. পর্যন্ত পৌঁছা ও রেজায়ে মাওলা হাসিল করা।

 

পরিচালনা পদ্ধতি

  • প্রস্তাবিত মাদরাসার দুটো অংশ থাকবে।

১. পরিচালনা বিভাগ

২. তালিমী বিভাগ

উভয় কমিটির সদস্যগণ মিলে নিজেদের প্রধান নির্বাচিত করবে।

  • পরিচালনা বিভাগের প্রধান হবেন সেক্রেটারী। আর তালিমী বিভাগের প্রধান হবেন মুহতামিম এবং তাঁর একজন সহকারী থাকবে।
  • যাকে সেক্রেটারী বা মুহতামিম নির্বাচিত করা হবে, তাদের কার কী দায়িত্ব হবে এবং পারিশ্রমিক কত হবে ইত্যাদি কমিটির সকল সদস্য একত্রে বসে নির্ধারণ করবেন।
  • আ্যাকাডেমিক ব্যাপারে যোগ্যতা নির্ধারণকারী এক বা একাধিক ব্যক্তি নিযুক্ত থাকবে। তাদেরকে তা’লিমাত কমিটি নামে অভিহিত করা হবে। মোট জামাত হবে আলিফ-বা থেকে দাওরা পর্যন্ত। সতের বছরে সমাপ্ত হবে।
  • عرف -এর চাহিদা অনুসারে দরসের নিসাব বিন্যস্ত করা হবে।
  • আর্থিক বিষয়ে কোনো উস্তায পরিচালক হতে পারবেন না। তারা শুধু তা’লীম-তাদরীস নিয়ে মাশগুল থাকবেন।
  • শিক্ষার ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিভক্তি ও অনৈক্য দূর করতে হবে।
  • জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে সকলকেই সচেষ্ট হতে হবে।

(হযরতের প্রস্তাবনা এখানে সমাপ্ত।)

 

প্রস্তাবনার ব্যাখ্যা:

পটভূমি:

গত বৃহস্পতিবার ২২/১২/২০১২ আমি খিদমাহ হসপিটালে হযরতকে দেখতে যাই। সেখানে মাওলানা ফয়যুল্লাহ আমান সাহেবও ছিলেন। হযরত আমাদের উভয়কে তাঁর প্রস্তাবনাটি পড়ে শোনাতে নির্দেশ দেন। মাওলানা আব্দুল হালীম আমাদেরকে তা পড়ে শুনান। বেশ কিছু বিষয় অপ্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় পরবর্তীতে বিষয়টিকে আর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

দুই দিন পর মাওলানা শফীকুল ইসলাম ভাই প্রস্তাবনাটির একটি প্রিন্টেড কপি আমাকে ই-মেইলে পাঠান। তিনি জানান, হুযুর এই প্রস্তাবনা বারবার শোনাচ্ছেন এবং জোর তাগিদ দিচ্ছেন যেন তা আলেমদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি এটাও জানান যে তিনি হযরতকে বলেছেন, প্রস্তাবনাটি ইঊসুফ সুলতানকে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে গত সোমবার ২২/১১/২০১২ ইং হযরতের সাথে সাক্ষাৎ করি। প্রাথমিকভাবে যদিও বেশ কিছু বিষয় আমার কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছিল, কিন্তু সেদিন আলাপে স্পষ্ট বুঝতে পারি যে হযরত যা বলছেন তা পূর্ণ চেতনায় বলছেন। হযরতের সাথে তাঁর প্রস্তাবনার বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করি। আলোচনার সারাংশ পেশ করা হলো।

–   ইঊসুফ সুলতান

 

মাদরাসার রূপরেখার ৬টি পয়েন্ট:

১. জ্ঞানের সর্বজনীনতা

–       المراحل في العلم

ব্যাখ্যা: প্রস্তাবিত মাদরাসায় ইলমের সকল স্তর থাকবে। উলূমুল হাদীস, উসূলুল ফিকহ ইত্যাদি সব বিষয় বিস্তারিত থাকবে। সতের বছরের নেসাবে আলিফ-বা পড়া মক্তব, হিফজ ও সকল উলূম থাকবে।

প্রচলিত পদ্ধতির সাথে পার্থক্য: প্রচলিত পদ্ধতিতে মাদরাসার নেসাবে বেশ কিছু জরুরী বিষয় অপূর্ণাঙ্গ। যেমন, উলূমুল হাদীস, উসূলুল ফিক্বহ, উসূলুত তাফসীর ইত্যাদি। এগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে নেসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

২. পঠন-পাঠন পরিশুদ্ধায়ন

–         التعليم و التدريس و التصحيح

ব্যাখ্যা: প্রস্তাবিত মাদরাসায় ছোট ক্লাসগুলোতে তা’লীম ও তাদরীসের পাশাপাশি তাসহীহ বা পরিশুদ্ধায়ন থাকবে। বিশেষ করে নীচের ক্লাসগুলোতে যেমন নাহু/ ছারফ এর ক্লাসগুলোতে معاني/ مطالب পরিস্কার করার পাশাপাশি অনুশীলন করানো হবে। ভুল শুদ্ধ করা হবে। যেন ছাত্ররা নির্ভুলভাবে শিখতে পারে।

প্রচলিত পদ্ধতির সাথে পার্থক্য: প্রচলিত পদ্ধতিতে মাশক বা অনুশীলনী কম হয়। এ ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।

 

৩. পঠন-পাঠন নিয়ে ঝগড়া/ লড়াই

–         المجادلة و المنازعة في التعليم و التدريس

ব্যাখ্যা: নাহবী, ফিক্বহী ইত্যাদি সকল মতপার্থক্য স্পষ্ট করা হবে। এক্ষেত্রে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন ও বিতর্ক হতে পারে। অন্য মাযহাব, অন্য মত ইত্যাদি তাদের কিতাব থেকে জানা হবে।

প্রচলিত পদ্ধতির সাথে পার্থক্য: প্রচলিত পদ্ধতিতে ফিকহী মতপার্থক্যগুলো অনেক ক্ষেত্রে স্পষ্ট হয় না। সেটা উস্তাযের তাকরীরেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বীর কিতাব থেকে জানা হয় না।

 

৪. এই জ্ঞানের বিষয়ে পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক চেষ্টা করা

–       التكميل في العلم (هذه هي الضرورة، لا مخالفة فيما بين المذاهب)

ব্যাখ্যা: জাহেরী ও বাতেনী ইলমের পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। অর্থাৎ, নীচের ক্লাসে ফিক্হী মতপার্থক্য জানা হবে ও মুনাযারা হবে ঠিকই, তবে এ পর্যায়ে এসে একজন ছাত্র সঠিক পথটি চিনতে পারবে। তার কাছে ইলমী মতপার্থক্যের উর্ধ্বে গিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠবে।

প্রচলিত পদ্ধতির সাথে পার্থক্য: প্রচলিত পদ্ধতিতে জাহেরী ইলমের কিছু অপূর্ণতা থেকে যায়। আর বাতেনী ইলম প্রায় অস্পষ্টই থাকে। তাছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে ফিকহী মতপার্থক্যগুলো অনেক সময় এমনভাবে তুলে ধরা হয় যাতে ভিন্ন মাযহাব অবলম্বনকারীদের সাথে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ তৈরি হয়। এটা কাম্য নয়।

 

৫. চরম পরিপূর্ণতা

–        التكميل إلى الغاية و النهاية

ব্যাখ্যা: সকল ইলমের খুলাসা বা সারমর্ম পড়ানো হবে। এটা দাওরা হাদীসের পরে কোনো ক্লাস হতে পারে। তবে তাখাসসুস এর মত নয়।

প্রচলিত পদ্ধতির সাথে পার্থক্য: প্রচলিত পদ্ধতিতে অনেক ইলম অল্প বয়সে নীচের ক্লাসে পড়া হয়। পরে তা আর পড়ার সুযোগ হয় না। তাই একটি ভিন্ন ক্লাসে সব ইলমের খুলাসা পড়া হবে। যেন সকল ইলমের সারমর্ম বুঝে আসে।

 

৬.

–       أيها المخاطب، إن الله تبارك و تعالى أعطاكم العلوم و ما لها و ما عليها. فعليكم أن تطلقوا العلم على المأخذ الأصلي بالصحة. (فهذه هي المدرسة)

ব্যাখ্যা: দ্বীনী ইলমের পাশাপাশি উরফের (সমাজের) চাহিদা অনুসারে অন্যান্য উলূম যেমন, বিজ্ঞান-অংক ইত্যাদিও পড়ানো হবে।

প্রচলিত পদ্ধতির সাথে পার্থক্য: প্রচলিত পদ্ধতিতে উরফের চাহিদা অনুসারে অন্যান্য ইলমের অন্তর্ভুক্তি খুবই কম।

মন্তব্য: হযরত যখন প্রস্তাবনাটি লিখিয়েছেন, তখন আরবী বাক্যটি এভাবেই লিখিয়েছেন। কিন্তু পরে আলোচনার সময় এর ব্যাখ্যা এরূপ বলেছেন। আরবী বাক্যদ্বয়ের দ্বিতীয় বাক্যটি দিয়ে হযরত কী বুঝিয়েছেন তা তিনি পরে স্মরণ করতে পারেননি।

 

লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ব্যাপারে কিছু কথা:

হযরতের প্রস্তাবনায় স্পষ্ট হয় যে, আমরা যে যেই হযরতকে ইচ্ছা তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনার পথ বেছে নিতে পারি। এক্ষেত্রে যেন আমাদের মাঝে আসাবিয়্যাত না আসে। এক হযরতের ভক্তবৃন্দ যেন অন্য হযরতের ভক্তবৃন্দকে ভিন্ন দৃষ্টিতে না দেখি। বরং, পারস্পরিক সম্পৃতির বিষয়টি যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়।

 

পরিচালনা পদ্ধতির ব্যাপারে কিছু কথা:

হযরতের প্রস্তাবিত পরিচালনা পদ্ধতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মাদরাসার পরিচালনা ও তা’লিমী কমিটি ভিন্ন হবে। পরিচালনা কমিটির সদস্য একজন আলেমও হতে পারেন। তবে যিনি পরিচালনা কমিটির সদস্য হবেন, তিনি তালিমী কমিটির সদস্য বা শিক্ষকতা করতে পারবেন না।

দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্রেটারী, মুহতামিম ইত্যাদি বিভিন্ন পদের জন্য বেতন নির্ধারিত থাকতে হবে। যেন এটাই তাদের মূল কাজ হয় এবং তারা তা নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারেন।

হযরতকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, তা’লিমী কমিটি ও পরিচালনা কমিটির প্রধান কে হবেন? তিনি উত্তর দিয়েছেন, বোর্ড। দুই কমিটির প্রধান বোর্ডের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। আমি পুনরায় প্রশ্ন করেছি, তাহলে তো অনেক মতপার্থক্য তৈরী হবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চূড়ান্ত ফয়সালায় সহজে আসা যাবে না। আবার বোর্ড প্রধান কর্তৃক স্বেচ্ছাচারিতার সম্ভাবনাও থাকবে। হযরত বললেন, এগুলো আমার প্রস্তাবনা। আলেমরা বসে বিষয়গুলোর সম্ভাব্যতা ও বাস্তবতা যাচাই করবেন।

সরকারী স্বীকৃতির ব্যাপারে হযরতের মতামত জানতে চাইলে তিনি তার তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করেন। আমি প্রশ্ন করি, সামনে আরো বিপুল সংখ্যক মাদরাসার ছাত্র ফারেগ হবেন। তাদের কোনো রকম স্বীকৃতি না থাকলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। হযরত উত্তরে বলেন, বিষয়টা অন্যভাবে সমাধান করতে হবে। সরকার এই নেসাবের স্বীকৃতি দিবে, কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।

 

সারাংশ:

হযরতের পুরো প্রস্তাবনাটি তিনটি দিক থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

১. নেসাবে পরিবর্তন সাধনের প্রস্তাব।

২. পরিচালনা কমিটি ও তা’লিমী কমিটিকে ভিন্ন রাখার প্রস্তাব।

৩. নানা মতপার্থক্যের মাঝে পারস্পরিক সম্পৃতি অক্ষুন্ন রাখার প্রস্তাব।

হযরত তাঁর সকল প্রস্তাবনা নিয়ে আলেমদের মাঝে আলোচনার ব্যবস্থা করতে বলেছেন।

 

মন্তব্য:

হযরতকে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, এই প্রস্তাবনার চিন্তা আপনি কবে থেকে করছেন। তিনি বললেন, এই তো, মরার কিছুদিন আগ থেকে। অর্থাৎ এই শেষবারের অসুস্থতায় হাসপাতালে এসে তিনি এসব ভাবছেন। তিনি আরো বলেন, ভাবলাম চলে যাচ্ছি, তাই তোমাদের কিছু দিয়ে যাই।

হযরত এই প্রস্তাবনাটি তাঁর ছাত্রদের বারবার শুনাচ্ছেন। তা প্রিন্ট করা হয়েছে কিনা বারবার খোঁজ নিচ্ছেন। এবং মালিবাগ মাদরাসায় এ বিষয়ে আলেমদের মিটিং আহ্বান করার জন্য বারবার তাগিদ দিচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে হয়ত মনে হতে পারে যে, অসুস্থতার দরুণ তিনি অপ্রাসঙ্গিক ভাবনা প্রকাশ করছেন; কিন্তু হযরতের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনায় আমার একবারও মনে হয়নি যে, হযরতের চিন্তা-ভাবনা ও প্রকাশে কোনো জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমি বিভিন্নভাবে হযরতকে প্রশ্ন করেছি, তাঁকে একটুও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি।

আমার বুঝার অপূর্ণতার দরুণ হয়ত হযরতের প্রস্তাবনাটি ঠিক মত তুলে ধরতে পারিনি। তবে হযরতের মনের ভাবটি প্রকাশ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। এবং হযরতের ছায়া আমাদের মাথার ওপর দীর্ঘস্থায়ী করুন। আমীন।

 

মূল প্রস্তাবনা শ্রুতিলিখন ও প্রথম ভূমিকা সংযোজন:

আব্দুল হালিম
শফিকুল ইসলাম
২২/১১/২০১২ ইং

প্রস্তাবনার ব্যাখ্যা ও বাকী অংশ সংযোজন:

ইঊসুফ সুলতান
২৮/১১/২০১২ ইং

 

বি:দ্র: গত ২৮/১১/২০১২ ইং হুজুর দ্বিতীয়বার স্ট্রোক করেন। পরদিন ২৯/১১/২০১২ ইং কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর হুজুরকে এটা পড়ে শোনানো হয়। তিনি অত্যন্ত খুশি হন এবং কিছু শব্দ পরিবর্তন করেন।

এই প্রস্তাবনার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন/ মতামত থাকলে তা এই পেইজে মন্তব্যের মাধ্যমে তা জানানোর অনুরোধ রইল। ইনশা’আল্লাহ প্রয়োজনে হুজুরের কাছে তা পেশ করে উত্তর জানা হবে।