আমার ডায়েরি : ০৬/১২/২০১০ | ‘কে শয়তান!’ এবং আলেম সমাজের দায়বদ্ধতা

গত কয়দিন আগে একটি সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিল এমন, ‘কে শয়তান!’। আগ্রহ নিয়ে সংবাদটি মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। যা বুঝলাম, তা হলো, একজন ইমাম জোরপূর্বক তার ছাত্রীর সাথে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়েছে। থানা-পুলিশ হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে বলেছে, এটা সে করেনি, শয়তান করিয়েছে। তার এমন বাক্যের কারণেই সাংবাদিক ভাই আশ্চর্য প্রকাশ করেছেন, লিখেছেন, কে শয়তান!

ভাবনার বিষয়, শয়তান কে? শয়তান নিজেই শয়তান। আর মানুষ তো মানুষ। মানুষ শয়তান নয়, শয়তানও মানুষ নয়। হ্যাঁ, শয়তান মানুষকে খারাপ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। উপরন্তু মানুষের ভেতরের যে মন, তা-ই তাকে বারবার খারাপ কাজে প্ররোচিত করতে থাকে। আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনে বলেছেন,

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي

নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। (১২:৫৩)

আল্লাহ বলেন, তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ করেন, সে-ই মন্দ কাজ থেকে রক্ষা পেতে পারে। তাহলে অর্থ দাঁড়ালো, আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া মন্দ কাজ থেকে বাঁচা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

আল্লাহর অনুগ্রহ কীভাবে পাওয়া যায়? তিনি বলেন,

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ [٩:٧١]

আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী। (৯:৭১)

তাহলে বোঝা গেল, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশানুযায়ী জীবন যাপন করেন, আল্লাহ তাদের ওপর দয়া করেন। আর তিনি যাদের ওপর দয়া করেন, তারা মন্দ কাজ থেকে বাঁচতে পারে।

আর কেউ যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশানুযায়ী জীবন যাপন না করে, তার মন্দ কাজে না জড়ানোর কোনো গ্যারান্টি নেই।

সারকথা, যখনই মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশানুযায়ী জীবন যাপন ছেড়ে দেয়, তখনি মন্দ কাজের প্রবণতা তার বেড়ে যায়।

আমাদের এই অংক আমাদের আঙ্গুল তুলে বুঝিয়ে দেয়, কেন আজ আমাদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা মন্দ কাজে জড়িয়ে পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশানুযায়ী জীবন যাপন ছেড়ে দেয়াই এর একমাত্র কারণ। অথচ তাদেরই তো সবচেয়ে বেশি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশানুযায়ী জীবন যাপন করার কথা ছিল।

যারা জাতিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন, তাদের নৈতিক স্খলন মেনে নেয়া খুব কষ্টের। আমাদের আলেম সমাজকে তাই আরো বেশি সতর্ক জীবন যাপন করতে হবে। এক গ্লাস দুধে এক ফোটা নাপাক পড়লেই তা নাপাক হয়ে যায়, এ কথা ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।